দিদির দোষ কী, জানতে চাইব মুখ্যমন্ত্রীর কাছে
শ ফুট বাই বারো ফুটের একটি ঘর। থানার যাবতীয় নথি ও কম্পিউটার থাকে সেখানে। সেই ঘরেরই একটা দিক পর্দা টাঙিয়ে আড়াল করা হয়েছে। পর্দার ও ধারে মেঝেতে বিছানা।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে ব্যারাকপুর থানায় ওসির ঘরের পাশের এই পর্দার ঘেরাটোপই ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের অধ্যক্ষা
অভিজিৎ সরকার।
—নিজস্ব চিত্র।
হেলেন সরকারের অস্থায়ী ঠিকানা। পর্দার এক দিকে তিনি। অন্য দিকে দুই মহিলা পুলিশ কর্মী। জানলা খুললে উৎসাহী লোকের নজরে পড়ার ভয়ে ঘরের কাচের জানলাটি বন্ধ রাখা হয়েছে। ভ্যাপসা গরম কাটাতে ঘরে দু’টো ফ্যান সারাক্ষণ চলছে।
শুক্রবার সকালে হোটেল থেকে খাবার এনে দেওয়া হয়েছিল হেলেনদেবীকে। পুলিশ অনুমতি দেওয়ায় রবিবার দুপুর থেকে বাড়ির খাবার খাচ্ছেন তিনি। শনিবার পর্যন্ত এক পোশাকেই ছিলেন। ওই দিন দুপুরে তাঁর ভাই বাড়ি থেকে পোশাক এনে দিয়ে গিয়েছেন। গ্রেফতার হওয়ার পরের দিন দাঁত মাজার ব্রাশ-পেস্টের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তাঁর পাহারায় থাকা পুলিশকর্মীরা।
পুলিশকর্মীরা জানান, থানার শক্ত মেঝেতেঠিক মতো ঘুম হচ্ছে না হেলেনদেবীর। ভোরেই উঠে পড়ছেন। সকালে দুধ-চা আর বিস্কুট। তারপর খবরের কাগজ নিয়ে বসা। তাঁর জন্য বেশ কয়েকটি বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক আনানোর ব্যবস্থা করেছে পুলিশ।
শনিবার রাত দশটায় একবার মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল মায়ের। জেরার শেষে তিনি পুলিশকে অনুরোধ করেছিলেন, নিভৃতে মেয়ের সঙ্গে এক বার কথা বলতে চান। রবিবার সকালেও ৮টার সময় থানার ফোন থেকে মেয়েকে ফোন করেন তিনি। মেয়ে ঘুমোচ্ছিল। ফোন ধরেছিলেন ভাই অভিজিৎবাবু। ভাইকে তিনি বলেন, “থাক। ওকে ডাকিস না। ও ঘুমোক। ওর উপর দিয়েও অনেক মানসিক চাপ যাচ্ছে।”
হেলেনদেবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ওসির ঘরে। এক পুলিশকর্তা বলেন, “একদম টু দি পয়েন্ট উত্তর দেন উনি। একটিও বাড়তি কথা বলেন না।” পুলিশ জানিয়েছে, দুশ্চিন্তা কমানোর ওষুধও খাচ্ছেন অধ্যক্ষা। দুপুরে এ দিন বাড়ি থেকে আনা ভাত, ডাল, তরকারি ও মাছের ঝোল খেয়েছেন। রাতে দু’টো রুটি-তরকারি। পাহারায় থাকা পুলিশকর্মীরা বলেন, “বিশেষ কিছু খেতে চাইছেন না।” শৌচাগারে যেতে হলে বা কিছু প্রয়োজন হলে তখনই শুধু পর্দা সরিয়ে ডাকছেন মহিলা পাহারাদারদের।
বোনের এই অবস্থা দেখে চোখের জল চাপতে পারেননি ভাই অভিজিৎ সরকার। তিনি রবিবার বলেন, “এই ঘটনায় আমরা ব্যথিত ও উদ্বিগ্ন। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাই। তিনি সময় দিলে তাঁকে জিজ্ঞাসা করব, কী অপরাধ করেছেন আমার দিদি, যাঁর জন্য আপনার পুলিশ ও প্রশাসন তাঁকে গ্রেফতার করল? সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের কোনও অভিযোগ নেই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী আপনি বলুন, এটা কি ন্যায়?” মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ওই পরিবারের আর্জি, তিনি যেন নিরপেক্ষ তদন্ত করে সত্য প্রকাশ করতে সাহায্য করেন। অভিজিৎবাবু বলেন, “দিদি গ্রেফতার হওয়ার পরেই চার্চ অফ নর্থ ইন্ডিয়া (সিএনআই, স্কুলটি যে সংস্থার অধীন) কলকাতা ডায়োসেস, রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আবেদন জানিয়েছিল। রাজ্যপাল দেখা না করলেও তিনি প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী দেখাও করেননি, প্রকাশ্যে বিবৃতিও দেননি।”
অভিজিৎবাবু বলেন, “ঐন্দ্রিলার মৃত্যু দুঃখজনক। কিন্তু তার মৃত্যুর সুযোগ নিয়ে কিছু ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা নিজেদের রাগ মিটিয়ে নিলেন আমার দিদির উপরে।” অভিজিৎবাবুর অভিযোগ, “এই ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক মদত কাজ করেছে। একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যা চলছে, তাতে সাধারণ মানুষ হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ, এ বার রাশটা শক্ত হাতে ধরার সময় এসেছে। আসল দোষীদের যেন চিহ্নিত করা হয়।”
কেমন আছে হেলেন-কন্যা? অভিজিৎবাবু বলেন, “কথা বলা কমিয়ে দিয়েছে। সোমবার মা বাড়িতে ফিরবে, এই আশায় রয়েছে।”
হেলেনদেবীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর পড়াশোনা লোরেটো ডে স্কুল থেকে। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজিতে এমএ, বিএড। ১৯৯০ সালে সেন্ট জন্স ডায়োসেশন স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে অস্থায়ী শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন তিনি। দীর্ঘদিন ওই স্কুলে চাকরির পরে ২০১১ সালে ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে অধ্যক্ষার পদে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.