ছাত্রীর মৃত্যুতে দমদমে স্কুলের অধ্যক্ষা হাজতে
ছাত্রীমৃত্যুর প্রতিকার চেয়ে সকালে স্কুলে অভিভাবকদের জমায়েত। তা থেকে ভাঙচুর, ঘেরাও, লাঠি, র‌্যাফ। অধ্যক্ষাকে দিয়ে ইস্তফাপত্র লেখানো। শেষে তাঁকে গ্রেফতার। অশান্তির জের চলল দিন পেরিয়ে রাত পর্যন্ত। উঁচু ক্লাসের দিদিদের ‘র‌্যাগিং’-এর জেরে অসুস্থ হয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ঐন্দ্রিলা দাসের মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে অভিভাবকদের বিক্ষোভ-প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার এ ভাবেই রণক্ষেত্রের চেহারা নিল দমদমের ক্রাইস্ট চার্চ স্কুল।
কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতে গিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে এ দিন তুমুল ভাঙচুর হয়েছে। সকাল থেকে আটকে রাখা হয়েছিল অধ্যক্ষা-সহ শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের। রাত গড়ালেও ‘ঘেরাও’ চলতে থাকে। সন্ধের পরে এক শিক্ষিকা অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ তাঁকে স্ট্রেচারে করে বাইরে নিয়ে যায়। বিক্ষোভকারীদের দাবিমতো স্কুলের অধ্যক্ষা নিজের প্যাডে পদত্যাগপত্র লিখে দিয়েছিলেন সন্ধেতেই। এমনকী, তাঁকে গ্রেফতার করার আশ্বাসও দিয়েছিলেন পুলিশকর্তারা। তবু অধ্যক্ষা ও অন্য শিক্ষিকাদের বাইরে বার করতে করতে রাত সাড়ে আটটা বেজে যায়। রাত ন’টা নাগাদ অধ্যক্ষা হেলেন সরকারকে পুলিশ গ্রেফতার করে ব্যারাকপুর থানায় নিয়ে যায়। তাঁর বিরুদ্ধে গাফিলতি, অবৈধ ভাবে আটকে রাখা, আঘাত করা, তোলা আদায় ইত্যাদি অভিযোগ এনেছেন মৃতা ছাত্রীর অভিভাবকেরা। হেলেনকে জামিন-অযোগ্য ধারা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঐন্দ্রিলাকে শৌচাগারে আটকে রাখার অভিযোগে তিনটি মেয়েকে প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিতও করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
তবে ঐন্দ্রিলার মৃত্যু ঠিক কী ভাবে হল, এখনও তা অজানা। তদন্তকারীদের বক্তব্য, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না-পেলে মৃত্যুর আসল কারণ বলা সম্ভব নয়। এ দিকে অধ্যক্ষা গ্রেফতার হলেও এ দিন স্কুলে তাণ্ডব চালাল যারা, তাদের এক জনকেও পুলিশ ধরেনি। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসিডিডি দেবাশিস বেজ অবশ্য বলেন, “স্কুলে ভাঙচুরের অভিযোগে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে।”

মারমুখী। বৃহস্পতিবার এ ভাবেই ভাঙচুর চলেছে দমদমের ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে। ছবি: শৌভিক দে।
ঐন্দ্রিলার মৃত্যুসংবাদ চাউর হওয়ায় বুধবার রাত থেকেই ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। এ দিন সকালে ছাত্রীদের স্কুলে পৌঁছে দিতে গিয়ে অভিভাবকেরা যখন ছুটির নোটিস দেখেন, তখন ক্ষোভ ফেটে পড়ে। অধ্যক্ষার পদত্যাগ ও প্রকাশ্যে তাঁর ক্ষমাপ্রার্থনার দাবিতে দফায় দফায় বিক্ষোভ শুরু হয়। অধ্যক্ষা-সহ শিক্ষিকারা উত্তেজিত অভিভাবকদের হাতে ঘেরাও হয়ে পড়েন। পাশাপাশি চলতে থাকে তাণ্ডব। অভিযোগ, কিছু বহিরাগতও তাতে সামিল হন। শিক্ষিকাদের ঘর-অফিসের কম্পিউটার, আসবাপত্র, জানলা-দরজার কাচ ভেঙে চুরমার করা হয়। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, ব্যারাকপুর কমিশনারেটের তিনটি থানার পুলিশ গিয়েও তা সামাল দিতে পারেনি।
শেষমেশ পুলিশ লাঠি চালাতে বাধ্য হয়। র‌্যাফ নামে। ডিসিডিডি-সহ কমিশনারেটের বড়কর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশের লাঠির ঘায়ে তাঁদের মধ্যে দু’জন জখম হয়েছেন। এবং রাতে অধ্যক্ষার গ্রেফতারির সঙ্গে পরিস্থিতি আপাত ভাবে শান্ত হলেও দিনভর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নও উঠে গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ঐন্দ্রিলার মৃত্যু নিয়ে ক্ষোভ যে ছড়িয়ে পড়েছে, তা চাপা থাকেনি। যার আঁচ পেয়ে স্কুল-কর্তৃপক্ষও এ দিন ছুটি ঘোষণা করেছিলেন। অথচ পুলিশ বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বেলা দশটা নাগাদ বিক্ষোভের সূচনাকালে স্কুলের বাইরে মোতায়েন ছিলেন গুটিকয় পুলিশ। তা-ও সকলেই পুরুষ। মেয়েদের স্কুল, শিক্ষকেরা সকলে মহিলা, অভিভাবকদের অধিকাংশই মহিলা এ সব জানা থাকা সত্ত্বেও স্কুলের গেটে সকালে মহিলা পুলিশ চোখে পড়েনি। ফলে প্রমীলাবাহিনী কার্যত বিনা বাধায় অধ্যক্ষার ঘর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। অভিযোগ, স্কুলের ভিতরে যখন ব্যাপক ভাঙচুর চলছে, অধ্যক্ষা ও অন্য শিক্ষিকাদের একটা ঘরে আটকে রাখা হয়েছে, এবং কেউ কেউ জানলার শিক বেঁকিয়ে ওই ঘরে ঢোকার চেষ্টা করছে তখনও পুলিশ ছিল স্রেফ দর্শকের ভূমিকায়। সন্ধ্যায় যখন বেশি সংখ্যায় মহিলা পুলিশ নিয়ে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের কর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছালেন, তখন পরিস্থিতি হাতের বাইরে।
এ দিন বিকেলে হাওড়ার এক অনুষ্ঠান থেকে ঐন্দ্রিলার মা রেখা দাসকে ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেখাদেবী বলেন, “আমি সব অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি। উনি বলেছেন, দেখছি।” ঐন্দ্রিলার পরিবার অবশ্য স্কুলে ভাঙচুর সমর্থন করছে না। তার বাবা শান্তনু দাসের কথায়, “ভাঙচুর নয়। আমরা চাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন হোক।” শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ দিন বাগুইআটিতে ঐন্দ্রিলাদের বাড়িতে যান। মন্ত্রীর আশ্বাস: মেয়েটির মৃত্যুর ঘটনায় স্কুলের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত হবে। তাঁর কথায়, “এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। সহানুভূতির সঙ্গে, গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখা হবে।

গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অধ্যক্ষা হেলেন সরকারকে। —নিজস্ব চিত্র
মুখ্যমন্ত্রী নিজে ঐন্দ্রিলার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। যথোচিত তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।” মন্ত্রীর দাবি, ঘটনাটি সম্পর্কে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস তাঁরা আগেই দিয়েছিলেন, এবং সেই অনুযায়ীই এগোনো হবে। অন্য দিকে স্কুলে ভাঙচুরের সমালোচনা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। “প্রতিবাদ-আন্দোলনের নামে স্কুলের ভিতরে এ দিন যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করা হল, তা কোনও ভাবে সমর্থন করা যায় না।” মন্তব্য ব্রাত্যবাবুর। তাঁর মতে, “বিশৃঙ্খলা যাঁরা ঘটিয়েছেন, তাঁরা কেউ প্রকৃত অভিভাবক বলে আমি মনে করি না। অভিভাবকদের কাছে অনুরোধ, এমন ঘটনায় জড়াবেন না।”
বুধবার দমদম ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ঐন্দ্রিলার মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ: উঁচু ক্লাসের ছাত্রীদের ‘র‌্যাগিং’-এর জেরেই অসুস্থ হয়েই সে মারা গিয়েছে। স্কুল-কর্তৃপক্ষের নামে দমদম থানায় তাঁরা এফআইআর-ও দায়ের করেন। এ দিন ঐন্দ্রিলার এক সহপাঠীর মা অভিযোগ করেন, “শুধু ঐন্দ্রিলা নয়। আগে অনেক বাচ্চাকেই উঁচু ক্লাসের মেয়েরা বাথরুমে আটকে রেখেছে। ছোটদের উপরে আরও নানা ধরনের নির‌্যাতন চলত।”
কিন্তু কেউ কিছু জানল না কেন?
মহিলার দাবি, “আমার মেয়ে ঐন্দ্রিলাকে বলেছিল, ব্যাপারটা বাড়িতে জানাতে। ঐন্দ্রিলা পরে ওকে বলে, প্রিন্সিপ্যালের কাছে শাস্তি পেতে হবে, এই ভয়ে সে বাড়িতে কিছু জানায়নি।” অন্য কিছু অভিভাবকের মুখেও একই অভিযোগ শোনা গিয়েছে। ক্লাস ফোরের এক ছাত্রীর মা যেমন বলেন, “আমার মেয়ের টিফিনও উঁচু ক্লাসের মেয়েরা খেয়ে নিত। নানা ভাবে চাপ দিত। স্কুল ক্যান্টিনে নিয়ে গিয়ে খাওয়াতে বলত। রাজি না-হলেই মারধর।” ওঁদের একাংশের এ-ও দাবি, স্কুলে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে উঁচু ক্লাসের ছাত্রীদের নিয়ে যে ‘প্রিফেক্ট’ দল রয়েছে, তারাই ছোটদের উপরে ‘দিদিগিরি’ চালাচ্ছে। আঙুল উঠেছে শিক্ষিকাদের একাংশের দিকেও। অভিভাবকদের অনেকের অভিযোগ, ক্লাস টেস্টের রেজাল্ট খারাপ হলে বাচ্চাদের হামেশা মারধর করা হয়। পরীক্ষা চলাকালীন বাথরুমে যাওয়ার দরকার পড়লেও যেতে দেওয়া হয় না। “এক বার আমার মেয়ে জ্বর নিয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিল। অনুরোধ করেছিলাম, পরীক্ষার পরে যেন ওকে ছুটি দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়েকে পুরো সময়টা বসিয়ে রাখা হল।” —বলেন এক মা।

অভিভাবকদের তাণ্ডবে আতঙ্কে ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের শিক্ষিকারা। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ আচার্য।
এত দিন এ সব কথা অধ্যক্ষাকে জানানো হয়নি কেন?
অভিভাবকদের দাবি: অধ্যক্ষা তাঁদের সঙ্গে দেখাই করতেন না। ওঁদের অভিযোগ, “প্রিন্সিপ্যালের ঘর থেকে বলা হতো অফিসে জানান। আবার অফিস বলতো, প্রিন্সিপ্যালকে জানান। মাঝখান থেকে কাজের কাজ কিছু হতো না।” কিছু অভিভাবকের নালিশ, স্কুলে শিক্ষক-অভিভাবক নিয়মিত বৈঠকের পাট কার্যত উঠে গিয়েছিল। হলেও দায়সারা ভাবে হতো। পঞ্চম শ্রেণির আর এক ছাত্রীর মায়ের আক্ষেপ, “আমার মেয়ে স্কুলে যেতে এত ভয় পাচ্ছিল যে, ওকে মনোবিদের কাছে নিয়ে যেতে হয়েছে। স্কুলে কেন এমন হচ্ছে জানতে চেয়ে প্রিন্সিপ্যালকে চিঠি লিখেছিলাম। জবাব পাইনি।” অভিভাবকদের কারও কারও দাবি, বছর দুয়েক আগে বর্তমান অধ্যক্ষা দায়িত্বে আসার পরেই স্কুলটিতে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে।
পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে অধ্যক্ষার মুখোমুখি হতে চেয়ে কয়েকশো অভিভাবক স্কুলের অডিটোরিয়ামে জড়ো হয়েছিলেন। অধ্যক্ষার ঘরের সামনে তাঁরা ভিড় জমান। পুলিশ কাউকে ভিতরে ঢুকতে না-দেওয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী-সূত্রের খবর: তুমুল গণ্ডগোলের মধ্যে কয়েক জন আচমকা চেয়ার তুলে দরজা-জানলায় মারতে শুরু করেন। ঝনঝন শব্দে কাচ ভেঙে পড়তে থাকে। অধ্যক্ষার অফিসে চড়াও হয় আর এক দল। সেখানকার ফোন, ল্যাপটপ, চেয়ার-টেবিল হাতের কাছে যা মিলেছে, আছড়ে ছত্রখান করা হয়েছে। এমনকী, কিছু লোক অধ্যক্ষার ঘরের জানলার রড বেঁকিয়েও ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে।
আর লাঠি চালিয়ে, র‌্যাফ নামিয়েও পুলিশ পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পারেনি। উল্টে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে জনতা চেঁচিয়ে পুলিশকে বলতে থাকে, “আমাদের মারুন। কিন্তু প্রিন্সিপ্যালের সঙ্গে দেখা না-করে ছাড়ব না।” কিছু বিক্ষোভকারী শিক্ষিকাদের ঘরে ঢুকে ভাঙচুর করতে গেলে পুলিশ কোনও মতে আটকায়। কয়েক জন শিক্ষিকা অধ্যক্ষার ঘরে গিয়ে আশ্রয় নেন, যেখানে ভাঙচুর সেরে দুর্বৃত্তেরা তত ক্ষণে বিদায় নিয়েছে। ঘরটিতে ঢুকে দেখা যায়, আলো নিভিয়ে টেবিলের নীচে গুঁড়িসুড়ি মেরে রয়েছেন অধ্যক্ষা ও শিক্ষিকারা। সকলের মুখ ভয়ে ফ্যাকাসে। পরে ঐন্দ্রিলার ক্লাস-টিচার কাজরী পাল বলেন, “মেয়েটি আমাকে কখনও কিছু জানায়নি! বরং মঙ্গলবার আমি ওর এক বন্ধুর মুখে ব্যাপারটা শুনে ঐন্দ্রিলার গার্জেনদের বলেছিলাম আমার সঙ্গে দেখা করতে।”

চলছে ভাঙচুর। বৃহস্পতিবার দমদমের ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে। ছবি: শৌভিক দে।
বিকেল তিনটে নাগাদ ডিসিডিডি দেবাশিসবাবু ঘটনাস্থলে যান। আইনি পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়ে বিক্ষোভ প্রশমণের চেষ্টা করেন। চারটে নাগাদ পুলিশি ঘেরাটোপে স্কুলের দোতলার বারান্দায় আনা হয় অধ্যক্ষাকে।
তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, “আমি ক্ষমা চাইছি। আপনারা শান্ত হোন। যদি কেউ দোষী প্রমাণিত হয়, সে শাস্তি পাবে। আমরা সত্যিই জানতাম না, মেয়েটির উপরে এমন নির‌্যাতন হয়েছে।”
নীচে অবশ্য তখনও চলছে তুমুল হট্রগোল, গালাগালি। এমনকী, অধ্যক্ষার দিকে চটিও উড়ে আসে। ডিসিডিডি জনতাকে আশ্বস্ত করে বলেন, “প্রিন্সিপ্যাল ও কয়েক জন ছাত্রীর বিরুদ্ধে দমদম থানায় মামলা রুজু হয়েছে। আপনাদের দাবি মেনে প্রিন্সিপ্যাল ক্ষমাও চেয়েছেন। এ বার আইনমতো ব্যবস্থা হবে।” সন্ধের মুখে এক পুলিশকর্তা হাতে লেখা একটি কাগজ নিয়ে বাইরে এসে বলেন, এটা অধ্যক্ষার ইস্তফাপত্র।
তখনও স্কুলের সামনে প্রায় শ’তিনেক লোক। তারা সেই কাগজ দেখে সন্তুষ্ট হয়নি। উত্তেজনার পারা ফের চড়তে থাকে। সওয়া সাতটা নাগাদ দেবাশিসবাবু অধ্যক্ষার প্যাডে লেখা ‘পদত্যাগপত্র’ এনে বিক্ষোভকারীদের দেখান, গ্রেফতারের আশ্বাস দেন। এতে জনতা কিছুটা শান্ত হলেও জমায়েত নড়েনি। পুলিশ জানায়, অধ্যক্ষা ও অন্য শিক্ষিকাদের বার করার সময় আসেনি। রাত সাড়ে আটটায় পুলিশের তরফে ঘোষণা হয়, অধ্যক্ষাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এতে পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আসে। অন্য শিক্ষিকাদের পুলিশ-ভ্যানে চড়িয়ে স্কুল থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হয়। দৃশ্যতই তাঁরা বিধ্বস্ত। “সকাল থেকে এ ভাবে রয়েছি! কিছু বলার অবস্থার নেই। এখন বাড়ি যেতে চাই।” মন্তব্য করে যান এক শিক্ষিকা।
সবার শেষে পুলিশ-ভ্যানে চাপিয়ে ব্যারাকপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয় ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের ধৃত অধ্যক্ষা হেলেন সরকারকে। জমায়েত হাল্কা হয়ে যায়।
তখন ঘড়িতে রাত ন’টা পেরিয়ে গিয়েছে।

ছাত্রীর মৃত্যুতে ন্যায্য বিচারের আশ্বাস মন্ত্রীর
দমদমের বেসরকারি স্কুলের ছাত্রী ঐন্দ্রিলা দাসের মৃত্যুর ঘটনায় ন্যায্য বিচারের আশ্বাস দিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে তার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তাঁদের বলেন, “স্কুলটি বেসরকারি। তা সত্ত্বেও ওই স্কুল সম্পর্কে যে-অভিযোগ আছে, রাজ্য সরকারের রাইট টু এডুকেশন প্রোটেকশন অথরিটি (শিক্ষার অধিকার রক্ষা কর্তৃপক্ষ বা রেপা)-র কাছে জানান। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভাঙচুর করাটা ঠিক হয়নি। ক্ষতিটা স্কুলের হল। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন হোক।
ঐন্দ্রিলার বাবা

বিশৃঙ্খলা যাঁরা ঘটিয়েছেন, তাঁরা কেউ প্রকৃত অভিভাবক বলে আমি মনে করি না।
শিক্ষামন্ত্রী
এ দিন সন্ধ্যায় বাগুইআটির ঘোষপাড়ায় ঐন্দ্রিলার বাড়িতে যান শিক্ষামন্ত্রী। মন্ত্রী এসেছেন দেখে সেখানে ভিড় জমে যায়। ঐন্দ্রিলার মা রেখাদেবী এবং বাবা শান্তনু দাসের সঙ্গে কথা বলেন ব্রাত্যবাবু। রেখাদেবী মন্ত্রীকে বলেন, “বেসরকারি স্কুলে এমনটাই হয়। ভয়ে বাচ্চারা বাড়িতে কিছু বলে না। আপনি একটু দেখুন!” ঐন্দ্রিলাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “যদিও স্কুলটি বেসরকারি। তবু আমি বলেছি ‘রেপা’য় অভিযোগ জানাতে। তার পরে যা করণীয়, করা হবে। সেই সঙ্গে পুলিশকেও বলা হয়েছে। যাঁরা ভাঙচুর ও হাঙ্গামা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এই সংক্রান্ত আরও খবর...

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.