দমদমের স্কুলছাত্রী ঐন্দ্রিলা দাসের মৃত্যুর কারণ ভুল চিকিৎসা না অন্য কিছু, জানা যাবে প্যাথোলজিক্যাল ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পরেই।
কোনও দুর্ঘটনা বা খুনের অভিযোগের ক্ষেত্রে যে পদ্ধতিতে ময়নাতদন্ত হয়, চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগের ক্ষেত্রে ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া তার থেকে কিছুটা আলাদা। এ ক্ষেত্রে সাধারণ ময়নাতদন্তের পাশাপাশি প্যাথোলজিক্যাল ময়নাতদন্তও করা হয়। এর কোনও প্রাথমিক রিপোর্ট হয় না। সপ্তাহ দুয়েক পরে মূল রিপোর্ট পাওয়া যায়। চিকিৎসকেরা বলছেন, এ সব ক্ষেত্রে প্যাথোলজিক্যাল ময়নাতদন্তের রিপোর্টকেই সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেওয়া হয়। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বুধবারই ঐন্দ্রিলার দেহের বিভিন্ন অঙ্গ পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। ভিসেরা পরীক্ষার জন্যও পাঠানো হয়েছে। ওই রিপোর্টগুলি হাতে আসার পরেই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ঐন্দ্রিলার অভিভাবকেরা বুধবার স্কুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পাশাপাশি চিকিৎসকের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিশেষ করে যে চিকিৎসক মঙ্গলবার ইঞ্জেকশন দিয়েছিলেন, তাঁর দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন ছাত্রীটির মা। ওই নিউরো সাইকিয়াট্রিস্ট পার্থসারথি বিশ্বাস বৃহস্পতিবার দাবি করেন, ঐন্দ্রিলার দেহের ওজন মেপে, তার রক্তচাপ পরীক্ষা করে তবেই তিনি ইঞ্জেকশনের ডোজ নির্ণয় করেছিলেন। সে ক্ষেত্রে কোনও ভুল ছিল না। তবে শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষের বক্তব্য, “মানসিক চাপ কমাতে এবং খিঁচুনি ঠেকাতে এই ইঞ্জেকশন আমরা আকছার দিই ঠিকই। কিন্তু চেম্বারে বসে ইঞ্জেকশন না দিয়ে মেয়েটিকে কোনও হাসপাতালে ভর্তি করে ইঞ্জেকশন দেওয়া হলে ভাল হত। সব সময়ে নজরদারি চালানো যেত।” এ ব্যাপারে পার্থসারথিবাবুর মত, “আউটডোরে বা চেম্বারেও হামেশাই এই ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। কোনও সমস্যা হয় না।”
চিকিৎসকদের কেউ কেউ বলছেন, খালি পেটে কিংবা দুর্বল শরীরে ওই ইঞ্জেকশন দিলে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। ঐন্দ্রিলার অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, তাঁদের মেয়ে টানা তিন দিন কিছু খায়নি। বেশ কয়েক দিন অভুক্ত থাকা মেয়েটির দেহে ওই ইঞ্জেকশন কি কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে থাকতে পারে? পার্থসারথিবাবুর দাবি, “এমনটা কিন্তু হওয়ার কথা নয়। কারণ, নার্সিংহোমে মেয়েটিকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল।” তাঁর মতে, শরীরে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণই ঐন্দ্রিলার শারীরিক অবস্থার অবনতির মূল কারণ। পার্থসারথিবাবু বলেন, “মেয়েটির বাবা আমাকে অন্য এক জন চিকিৎসকের সঙ্গে ফোনে কথা বলান। আমি সেই চিকিৎসককে বলি, ওর টোটাল লিউকোসাইট (শ্বেতকণিকা) কাউন্ট ২০ হাজারের বেশি। ওকে অনেক আগেই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া উচিত ছিল। ওই চিকিৎসক আমার কথা মেনে নেন। আমার কাছ থেকে ইঞ্জেকশন নেওয়ার পরে বাড়ি ফিরে ওর অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু ওর বাবা রাতে ফোন করে জানান, ও ঘুমিয়ে পড়ায় ওষুধ খেতে পারেনি।”
ঐন্দ্রিলার বাবা কোন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলিয়েছিলেন? সেই নামটা পার্থসারথিবাবু জানাতে পারেননি। তবে ওই মেয়েটিকে প্রথম নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শিশু চিকিৎসক দ্বৈপায়ন ঘটকের কাছে। তাঁর দাবি, “আমি অ্যান্টিবায়োটিক চালু করার কথা আগেই বলেছিলাম। এমনকী যে নার্সিংহোমে ওকে ভর্তি করা হয়েছিল, সেখানকার ডাক্তাররাও অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করেন।” সেই অ্যান্টিবায়োটিক কি ঐন্দ্রিলাকে খাওয়ানো হয়েছিল? মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত ঐন্দ্রিলার বাবার কাছে এ দিন সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।
কিন্তু রক্তের লিউকোসাইট (শ্বেতকণিকা) বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে ওই ইঞ্জেকশনের কোনও বিরূপ সম্পর্ক নেই তো? চিকিৎসকেরা অবশ্য এমনিতে এ রকম কোনও সম্পর্কের কথা মনে করতে পারেননি। তাঁরা শুধু বলছেন, মেয়েটির প্যাথোলজিক্যাল ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না এলে কিছুই বোঝা যাবে না। |