টাকা না পেয়ে বিপাকে রোগীরা
চিকিৎসা-ধারা বদলালেও বিমার নিয়ম পড়ে সেই মান্ধাতার আমলেই
ক্যানসার থেকে কসমেটিক সার্জারি সব ক্ষেত্রেই আবিষ্কার হচ্ছে নিত্য-নতুন চিকিৎসা-পদ্ধতি। কিন্তু রোগীদের অভিযোগ, বিমা সংস্থাগুলি বহু ক্ষেত্রেই সে সবের খরচ দিতে অস্বীকার করছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কাছে রোগীদের সংগঠনগুলির তরফে লিখিত অভিযোগও পাঠানো হয়েছে। তবু পরিস্থিতি বদলায়নি। ইনশিওরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (আইআরডিএ) জানিয়ে দিয়েছে, কোন রোগের
চিকিৎসার খরচ বিমা সংস্থাগুলি দেবে, আর কোনটা দেবে না, তা সম্পূর্ণ ভাবেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির ইচ্ছাধীন। আপাতত তাই রোগীদের সমস্যার সমাধান অনিশ্চিত।
ইতিমধ্যেই ক্যানসার রোগীরা জোটবদ্ধ হয়ে চিঠি লিখেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে। তাঁদের অভিযোগ, ক্যানসারের বিভিন্ন আধুনিক চিকিৎসা, যেগুলি হাসপাতালে ভর্তি না থেকেও করানো যায়, তার খরচ দিচ্ছে না বিমা সংস্থা। ওরাল কেমোথেরাপির ক্ষেত্রে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি। এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত সুকান্ত মণ্ডল। তাঁকে চিকিৎসকেরা ওরাল কেমোথেরাপি নিতে বলেছিলেন। কিন্তু তার জন্য হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয় না। তাই সেই ওষুধের টাকা দিতে অস্বীকার করেছে বিমা সংস্থা।
চিকিৎসকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, চিকিৎসা-বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে বিমা সংস্থার নিয়ম বদলাবে না কেন? ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ওরাল কেমোথেরাপি প্রতি মাসেই নিতে হয়। কিন্তু তা প্রেসক্রাইব করলেই রোগীরা বলছেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি না থাকলে বিমা কোম্পানি টাকা দেবে না। কী ভাবে জোগাড় করব?’ কারও কারও এ জন্য মাসে ৮-১০ হাজার, কারও বা ২০-২৫ হাজার টাকাও খরচ হয়। কিন্তু বিমা সংস্থা একটি টাকাও দেয় না।”
এ ছাড়াও এমন বহু পরীক্ষা বা চিকিৎসা-পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে, যার জন্য রোগী সকালে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই বাড়ি ফিরতে পারেন। সে সব ক্ষেত্রেও বিমার টাকা পাওয়া যায় না। কাজেই প্রয়োজন না থাকলেও চিকিৎসকেরা রোগীদের এক রাত ভর্তি থাকার কথা লিখে দিতে বাধ্য হন। চিকিৎসকদের বক্তব্য, গোটা পৃথিবী যেখানে হাসপাতাল-বাসের মেয়াদ কমিয়ে আনছে, সেখানে বিমা সংস্থাগুলি এমন মান্ধাতার আমলের চিন্তাভাবনা আঁকড়ে বসে থাকবে কেন?
শরীরে মেদজনিত সমস্যা থেকে বাঁচতে এখন অনেক হাসপাতালে বেরিয়াট্রিক সার্জারি হয়। ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে করা হয় বিশেষ অস্ত্রোপচার। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি অনেক বিমা সংস্থা এই সব সার্জারিকে তাদের তালিকাভুক্ত করেনি। তাদের যুক্তিতে এগুলি ‘কসমেটিক সার্জারি’। রোগী ও চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, মেদ বাড়লে হৃদ্রোগ বা স্ট্রোকও হতে পারে। ডায়াবিটিস বাড়লে চোখের সমস্যা, কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া, পায়ে ক্ষত তৈরি হওয়া, হৃদ্রোগ প্রভৃতির আশঙ্কা থাকে।
চিকিৎসক তাপস চক্রবর্তী জানান, কোনও ভাবেই বিমা সংস্থাগুলি এমন করতে পারে না। সম্প্রতি তাঁরই এক রোগী এর বিরুদ্ধে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করে মোটা টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। কিন্তু কাঁকুরগাছির জিডি ভাইয়া বা ক্যামাক স্ট্রিটের রাজকুমারী গোয়েলরা এখনও অথৈ জলে। প্রথম জনের ডায়াবিটিসের অস্ত্রোপচার এবং দ্বিতীয় জনের বেরিয়াট্রিক সার্জারি হয়েছিল। কেউই বিমা সংস্থার কাছ থেকে টাকা পাননি।
বেরিয়াট্রিক সার্জন সুরেন্দ্র উগালে বলেন, “বিমা সংস্থাগুলি কেন টাকা দিচ্ছে না, বুঝতে পারছি না। কারণ বেশ কিছু ক্ষেত্রে ওজন কমাতে না পারলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বহু ক্ষেত্রে আচমকা হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়। বেরিয়াট্রিক সার্জারিকে কসমেটিক সার্জারি বলা যায় না। আমেরিকার সর্বত্র এই ধরনের অস্ত্রোপচারে বিমা সংস্থাগুলি টাকা দেয়।” ইনশিওরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (আইআরডিএ) অফ ইন্ডিয়ার অন্যতম সদস্য সুধীন রায়চৌধুরী বলেন, “চিকিৎসার পদ্ধতি বদলাতেই থাকে। এর আগেও যখন নতুন কোনও পদ্ধতি এসেছে, তখন ক্রমপর্যায়ে বিমা সংস্থাগুলি নীতি পরিবর্তন করেছে। আশা করা যায়, একটু দেরি হলেও ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়া বজায় থাকবে। তবে কোন পদ্ধতি তারা তাদের তালিকাভুক্ত করবে, কোনটা করবে না, এটা পুরোপুরি তাদের ইচ্ছাধীন। আমরা ওদের কাজে নজরদারি চালাতে পারি। কিন্তু নতুন চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দিতে পারি না।” সরকারি বিমা সংস্থা ন্যাশনাল ইনশিওরেন্সের জেনারেল ম্যানেজার সুবীর ভট্টাচার্যের কথায়, “আমরা ওরাল কেমোথেরাপি, আউটসাইড ওভারি প্রেগন্যান্সির মতো নতুন-নতুন বিষয়ে টাকা মঞ্জুর করার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি। তবে রোগা হওয়ার অস্ত্রোপচার কসমেটিক সার্জারি। ওটাকে স্বীকৃতি দেব না।” একটি বেসরকারি বিমা সংস্থার প্রধান সন্তোষ বালান বলেন, “এখন অনেক আধুনিক সার্জারিতে মাত্র এক বেলা হাসপাতালে থাকতে হয়। আগে এ ধরনের অস্ত্রোপচারগুলির জন্য টাকা দেওয়া হত না। এখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা হচ্ছে।” কিন্তু কাদের ক্ষেত্রে টাকা মঞ্জুর হচ্ছে, কাদের হচ্ছে না, তার কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম তাঁরা জানাতে পারেননি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.