এলাকার মানুষ যাতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা পান, তার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিজস্ব ভবন গড়তে বিনামূল্যে নিজের জমি দিয়েছিলেন গ্রামের বাসিন্দা হারাধন পাল। ওই জমিতেই জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের (এনআরএইচএম) অর্থানুকূল্যে গড়ে ওঠে ঝাঁ চকচকে ওই দ্বিতল বিশিষ্ট উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভবন। কিন্তু সুষ্ঠু স্বাস্থ্য পরিষেবা মেলা দূর অস্ত, তৈরি হওয়ার পর থেকেই বোলপুরের বাহিরী-পাঁচশোয়া পঞ্চায়েতের বড় শিমুলিয়ার ওই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র তালা বন্ধ। আরও অভিযোগ, ওই কেন্দ্রের জন্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে আসা ওষুধপত্রও রোগীদের কাছে পৌঁছয় না। অথচ ওই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরেই নির্ভরশীল স্থানীয় চড়িপুর, তালবেরা, কানার পাড়, ছোট শিমুলিয়া, করিমপুর-সহ এলাকার প্রায় আট হাজার মানুষ। এই সব বিষয় নিয়ে বারবার প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আবেদন করেও বাসিন্দারা কোনও সুরাহাই পাননি বলে জানিয়েছেন। যার জেরে ওই ভবনের সামনে বার কয়েক বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে খোদ শাসক দলের নেতা-কর্মীদেরই।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দীর্ঘ দিন ধরে গ্রামে অবস্থিত সুসংহত শিশু বিকাশ কেন্দ্রেই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা দেওয়া হত। পরে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিজস্ব ভবন গড়ার জন্য হারাধনবাবু গ্রামের মন্দির তলা এলাকায় চার শতক জমি দান করেন। সেখানেই বছর খানেক আগে শুরু হয় বড় শিমুলিয়া উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিজস্ব ভবন গড়ার কাজ। এনআরএইচএম-এর অর্থানুকূল্যে ২০১২ সালের শেষের দিকে গড়ে ওঠে ‘বড় শিমুলিয়া উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র’। |
স্থানীয় বাসিন্দা জয়গন্নিসা বিবি, সাদেকা বিবি, নাজিমা বিবিরা বললেন, “উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন দোতলা ভবন হওয়ায় আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। আরও ভাল এবং যে কোনও সময় স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার আশায় ছিলাম। কিন্তু মাসের পর মাস কেটে গেলেও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তা চালুই হল না! ” জমিদাতা প্রৌঢ় হারাধনবাবুর অভিযোগ, “নতুন ভবন তো চালুই হল না, এখন ওই কেন্দ্রের পরিষেবাও দিন কে দিন খারাপ হচ্ছে।” তাঁর কথায় সহমত জানিয়েছেন স্থানীয় রাবেয়া বিবি, রহিয়া বিবিরাও। পাশাপাশি তাঁদের অভিযোগ, “সম্প্রতি সুসংহত শিশু বিকাশ কেন্দ্রে প্রসব করাতে এসে কয়েক জন অন্তঃসত্ত্বা এখানে প্রয়োজনীয় পরিষেবা পাননি। একই ঘটনা ঘটেছে এক শিশুর ক্ষেত্রেও। অথচ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য সুনির্দিষ্ট ভবন চালু হয়ে গেলে এই সমস্যা মিটবে।” স্থানীয় বাসিন্দা তথা এলাকার তৃণমূল নেতা শেখ আব্দুল হাসিম জানান, মাসের পর মাস এ ভাবে নতুন ভবন পড়ে রয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে। তাঁর দাবি, “রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র আসে, অথচ তা রোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে না।” তাঁর কথাতেই সম্মতি জানিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
এ দিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ওই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দ্বিতীয় এএনএম জাহানারা বিবি বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। স্বাস্থ্য দফতরের সরবরাহ থেকে সময় মতো প্রয়োজনীয় ওষুধ বিলি করা হয়।” একই দাবি প্রথম এএনএম চন্দনা মণ্ডল এবং সুপারভাইসার বীণা রায়েরও। তাঁরা বলেন, “এই পরিকাঠামোয় যেটুকু পরিষেবা দেওয়া সম্ভব, আমরা তা দিয়ে থাকি। অন্তঃসত্ত্বা, প্রসূতি ও শিশুদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হয় না।” প্রত্যেকেরই দাবি, এলাকার প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে তাঁরা নিয়মিত জনসচেতনতার কাজ করেন।
ওই কেন্দ্রের স্বাস্থ্য পরিষেবার দশা নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেছেন বাহিরী-পাঁচশোয়া পঞ্চায়তের তৃণমূল প্রধান শ্যামলী দাস। তাঁর আশ্বাস, “বড় শিমুলিয়ায় ঠিক কী হয়েছে আমি অবিলম্বে খোঁজ নিচ্ছি। এ বিষয়ে উপরমহলেও আবেদন জানাব। স্বাস্থ্যের মতো জরুরি পরিষেবা জনগণের সমস্ত স্তরে পৌঁছে দিতেই হবে।” এ নিয়ে বোলপুরের বিএমওএইচ সব্যসাচী রায় বলেন, “আমরা সব দিক খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।” ওই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে ঠিক কী হয়েছে, তার খোঁজ নেব বলে জানিয়েছেন সহকারি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়ন্ত শুকুল। তা ছাড়া স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে বোলপুরের বিএমওএইচ-এর কাছে তিনি একটি রিপোর্টও তলব করেছেন। অন্য দিকে, বীরভূম জেলা পরিষদের নতুন সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, “বিষয়টির খোঁজ নিচ্ছি। তবে স্বাস্থ্য পরিষেবা বিঘ্নিত হবে বা কেউ বিঘ্নিত করার চেষ্টা করলে কর্তৃপক্ষ তা মেনে নেবেন না।” |