অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নিতে চায়নি কলকাতার সরকারি হাসপাতালগুলো। আর সেই ঝুঁকিটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়ে সফল হল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
বহরমপুর লাগোয়া রাধারঘাট এলাকার রানিনগর গ্রামের নেকবাস আলির বাম দিকের চোয়ালের হাড়ে টিউমার হয়। ধীরে ধীরে ওই টিউমার বড় আকার নেয়। গত তিন বছর চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, মুম্বইয়ের বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে বেড়ান তিনি। অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নিতে না চেয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিল কলকাতার বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালও।
শেষ পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘ইএনটি অ্যান্ড হেড-নেক’ সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক গৌতম বিশ্বাসকে দেখিয়ে সোমবার হাসপাতালে ভর্তি হন নেকবাস। পরের দিন, মঙ্গলবারেই অস্ত্রোপচার করে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই টিউমার।
পরিকাঠামোগত অভাব থাকা সত্ত্বেও মেডিক্যাল কলেজে পাক্কা ছ’ঘন্টা ধরে ওই অস্ত্রোপচার হয়। ওই অস্ত্রোপচারে গৌতমবাবুর সঙ্গে সহায়তা করেন সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অনাদি আচার্য ও চিকিৎসক রুবেল গঙ্গোপাধ্যায়। |
গৌতমবাবু বলেন, “চোয়ালের হাড়ে যেখানে টিউমার হয়েছিল, ওই হাড়ের পিছনেই রয়েছে প্রধান ধমনী। তার মাধ্যমেই মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন হয়ে থাকে। অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে কোনও ভাবে তা কেটে গেলে রোগীর ব্রেন ডেথ হতে পারত। সম্ভবত এই ঝুঁকিটাই কেউ নিতে চায়নি।”
ওই চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নেকবাসের চোয়ালের হাড়ের যে অংশটুকু কেটে বাদ দিতে হয়েছে, কোমরের হাড় থেকে সেই পরিমাণ হাড় কেটে চেয়ালের হাড়ের সঙ্গে জোড়া দিতে হয়েছে। ওই অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজন ‘মাইক্রোডিল’, যা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেই। গৌতমবাবু নিজের কেনা ওই মাইক্রোড্রিল কলকাতা থেকে নিয়ে আসেন। সেই সঙ্গে ‘বোন গ্রাফটিং’-এর জন্য ‘টাইটানিয়াম মডিবিউলার প্লেট’ও কিনেছেন তিনি। নেকবাস আলির পরিবারের কাছে ওই চিকিৎসক এখন ‘ভগবান’।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “চিকিৎসকের সদিচ্ছা থাকলে বহরমপুরের মত মফস্সল শহরেও যে জটিল অস্ত্রোপচার করা সম্ভব, এটা তারই প্রমাণ।” |