সপ্তাহে ছ’দিন থেকে মাসে তিন দিন। বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত গ্রাম আমলাশোলে নিখরচায় ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা পরিষেবার দিন কমানোর নির্দেশ ঘিরে এলাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসে নতুন নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। তাতে বলা হয়েছে, সপ্তাহে ৬ দিনের পরিবর্তে এখন প্রতি মাসের ৯, ১৮ ও ২৫ তারিখে আমলাশোলে ভ্রাম্যমান চিকিৎসা শিবির হবে। এতে আমলাশোল ও আমঝর্ণা, দলদলি, বগডুবা, জুজারধরা, তেলিঘানা, ময়ূরঝর্ণার মতো পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা গোটা পনেরো প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ সমস্যায় পড়বেন। স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য জানিয়েছে এই নির্দেশ সাময়িক। দফতরের মুখপাত্র সুমন বিশ্বাস বলেন, “জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে ওই মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিট (এমএমইউ) চলত। তবে তাতে কেন্দ্রীয় অনুমোদন ছিল না। সম্প্রতি কেন্দ্রের অনুমোদন মিলেছে। শীঘ্রই আমরা এলাকার চাহিদা অনুযায়ী এই পরিষেবা দেওয়া শুরু করব।” এর ফলে, চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার দিন বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে তা ফের সপ্তাহে ৬ দিনই হবে কিনা স্বাস্থ্য নির্দিষ্ট ভাবে জানায়নি। তবে স্বাস্থ্যকর্তাদের আশ্বাস, এলাকার চাহিদা অনুযায়ী পরিষেবার দিন ঠিক করা হবে।
২০০৪ সালে আমলাশোল গ্রামে অনাহার ও অপুষ্টিতে ভুগে পাঁচ গ্রামবাসীর মৃত্যুর পর রাজ্য তোলপাড় হয়েছিল। তারপর এই এলাকার উন্নয়নে নানা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর গোটা জঙ্গলমহলের উন্নয়নেই বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল ফেরাতেও জোর দেওয়া হয়েছে। আলাদা স্বাস্থ্য জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ঝাড়গ্রামকে। গত বছর নভেম্বরে আমলাশোলে কয়েকজন শিশু চর্মরোগে আক্রান্ত হয়। তারপরই ডিসেম্বরে চালু হয় ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা পরিষেবা। রবিবার বাদে সপ্তাহে ৬ দিন স্থানীয় বিদ্যাধর মুড়ার বাড়িতে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত মেডিক্যাল ইউনিট বসত। থাকতেন একজন চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট, এক্স-রে টেকনিশিয়ান ও ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান। এক্স-রে, রক্ত পরীক্ষা সবই এখানে বিনামূল্যে করা হয়। ওষুধপত্রও মেলে নিখরচায়। আমলাশোল গ্রামের লক্ষ্মীকান্ত মুড়া, বুধু শবর, বিভূতি মানকি, হাঁদু মুড়াদের বক্তব্য, “এর ফলে সবাই খুব উপকৃত হচ্ছিলাম।”
শুধু বেলপাহাড়ি নয়, পার্শ্ববর্তী পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ানের গুড়পানা, লোটোঝর্ণা, লসিকলাগর, ডুলুকডি-র মতো প্রত্যন্ত ও দুর্গম গ্রামগুলির বাসিন্দারাও আমলাশোলে চিকিৎসা পরিষেবার জন্য আসতেন। বেলপাহাড়ির বিডিও সর্বোদয় সাহা বলেন, “আমলাশোলের মতো প্রত্যন্ত গ্রামে ওই ভ্রাম্যমান স্বাস্থ্য ইউনিট নিয়মিত পরিষেবা দেওয়ার ফলে বাসিন্দারা খুবই উপকৃত হচ্ছিলেন। এই পরিষেবা নিয়মিত বহাল রাখার দাবি করেছেন এলাকাবাসী।” তাঁদের কথায়, “আমাদের এলাকাটি ম্যালেরিয়া প্রবণ। জ্বর হলে আগে রক্ত পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। ওই ইউনিট-টি চালু হওয়ার ফলে, দীর্ঘ দিনের সমস্যার সমাধান হয়েছিল। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা পরিষেবা গ্রামেই পাচ্ছিলাম। এখনও ম্যালেরিয়া ও ডায়েরিয়ার সমস্যা রয়েছে। কেন এ ভাবে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হল বুঝতে পারছি না।” |