ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে শিলিগুড়ি বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশার লার্ভা মারতে স্প্রে করার কাজে বেসরকারি সংস্থার সদস্যদের দল বেঁধে নামানো হল। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা রাজ্যের স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যের উদ্যোগে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহায়তায় ওই কাজ শুরু হল। রুদ্রবাবু বিধায়ক তহবিল থেকে ৪০টি স্প্রে মেশিন এবং মশার লার্ভানাশক ওষুধ কেনার টাকা দিয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সদস্যরা ৪ জন করে ৪০টি দলে বিভিন্ন ওয়ার্ডে এ দিন থেকে স্প্রে করার কাজ শুরু করেন। এ দিন পুরসভার ১, ৪২, ৪৩, ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে স্প্রে করা হয়েছে। স্প্রে করার জন্য বিশেষ উদ্যোগের কথা জেনে এ দিন বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বাসিন্দারাও এসেছিলেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা স্প্রে করার সময় তাঁরাও সহযোগিতা করতে চান।
রুদ্রবাবু জানান, “ডেঙ্গির বাহক মশা নিয়ন্ত্রণে স্প্রে করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তারা এ দিন থেকে কাজে নেমেছেন। যে সমস্ত ওয়ার্ডে ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি আগে সেই সমস্ত এলাকায় স্প্রে করা শুরু হচ্ছে।” স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে অমিত খাসনবিশ জানান, শহরে সমস্ত ওয়ার্ডেই একে একে স্প্রে করা হবে। বাসিন্দাদের সচেতনতায় মাইকিং এবং পথনাটকের ব্যবস্থাও হয়েছিল। এ দিন মাটিগাড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে এলাকায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রুদ্রবাবুকে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। সংগঠনের তরফে মলয় বাগচী জানান, মাটিগাড়ার গভর্নমেন্ট কলোনি, বাজার, প্রমোদনগর এলাকায় ডেঙ্গি মারাত্মক আকার নিয়েছে। অথচ স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সেখানে অনেক পরিবারের অধিকাংশ সদস্য ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। মশা নিয়ন্ত্রণে সেখানেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন রুদ্রবাবু। |
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি এবং আশেপাশে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৪০০ পেরিয়েছে। এখন পর্যন্ত শিলিগুড়িতে ডেঙ্গিতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস জানান, সেপ্টেম্বর মাসে এখন পর্যন্ত ৩৫৫ রোগী ডেঙ্গি সন্দেহে চিকিৎসা করাতে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে ৩২৪ জনের রক্তে এনএস-১ পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবানু মিলেছে। রোগ সংক্রমণ নিশ্চিত হতে তাঁদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৩৭ জনের ‘ম্যাক এলাইজা’ পরীক্ষা করা হয়েছে। তাঁদের ৮৫ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে জলপাইগুড়ির গরুবাথান, মালবাজার এলাকার রোগীও রয়েছেন। এ ছাড়া শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন ডেঙ্গি আক্রান্তদের অনেকে। এ দিন ফের ১২ জন জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। নার্সিংহোমগুলিতেও অন্তত ৬০ জন রয়েছেন। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গত ১৪ দিনে ১৮ জন কচিকাঁচা ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা করাতে এসেছিল। এখন তাদের মধ্যে ৮ জন ভর্তি রয়েছেন। জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভার সংযোজিত ওয়ার্ডগুলিতে এবং শিলিগুড়ি লাগোয়া রাজগঞ্জ ব্লকের এলাকাগুলি থেকে তাঁরা রক্তের নমুনা সংগ্রহ করছেন। এখন পর্যন্ত ১২১ জনের রক্তে ডেঙ্গির জাবীণু মিলেছে। তার মধ্যে পুরসভার সংযোজিত ১৪টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৯৯ জন।
ডেঙ্গির বাহক মশা নিয়ন্ত্রণে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের একটি বিশেষজ্ঞ দল এ দিন মাটিগাড়া এবং শিলিগুড়ির কয়েকটি ওয়ার্ডে ঘুরে মশা এবং মশার লার্ভা সংগ্রহ করেছেন। তবে ডেঙ্গি সংক্রমণ ছড়ানোর আগেই ওই কাজ করা প্রয়োজন বলে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ মনে করেন। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক দিলীপ কুমার দাস বলেন, “ওই সমীক্ষা বছর ভর হওয়া প্রয়োজন। তা হলেই আগাম ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।” তবে উত্তরবঙ্গে সে ধরনের বিশেষজ্ঞ নেই। সে কারণেই কলকাতা থেকে ওই দল আনা হয়েছে।
শহরে ডেঙ্গির আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। অথচ ডেঙ্গি মোকাবিলা নিয়ে কোন কাজই পুরসভা করছে না বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার ডেঙ্গি মোকাবিলা সহ আট দফা দাবি জানিয়ে পুরকমিশনার প্রভুদত্ত ডেভিড প্রধানকে স্মারকলিপি দেয় সিপিএম এর ৫ নম্বর লোকাল কমিটির সদস্যরা। এ দিন কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিৎ নাগ বলেন, “এলাকায় কোন কাজ করছে না পুরসভা। ডেঙ্গি মোকাবিলায় যে সমস্ত কাজ কার উচিত তার কিছুই হচ্ছে না।” ডুয়ার্সের নাগরাকাটা ব্লকের লুকসানের বাসিন্দা ৫ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। শুল্কাপাড়া ব্লক হাসপাতাল থেকে এ দিন জানানো হয়েছে যে, লুকসান মোড়ের বাসিন্দা বাবা ও ছেলের রক্তপরীক্ষায় এনএস১ পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। |