ফেরার ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েই কথা রাখলেন বাবা
নেকেই কথা রাখে না। কেউ কেউ যে রাখে, প্রমাণ দিলেন দমদম কাজিপাড়ার সুব্রত পাল।
বলেছিলেন, পলাতক ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাড়িতে ডেকে আনবেন তিনি। তার পরে নিজেই তাঁকে তুলে দেবেন পুলিশের হাতে।
কথা রাখলেন বাবা। রবিবার সকালে উঠেই বারবার ফোন করেন ছেলে শুভঙ্করের মোবাইলে। সাড়া মিলছিল না। বাবাও নাছোড়। ফোন করেই চলেন নাগাড়ে। হঠাৎই এক সময় সাড়া দেয় শুভঙ্করের মোবাইল। ছেলেকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে বাড়িতে ডেকে আনলেন সুব্রতবাবু। সকাল ৮টা নাগাদ শুভঙ্কর কাজিপাড়ার বাড়িতে ফিরতেই আর দেরি করেননি তিনি। ছেলেকে রিকশায় চাপিয়ে সোজা চলে যান দমদম থানায়।
সুব্রত পাল
শুভঙ্কর বেকার। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে হাজির হন দমদমের ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে। অন্যদের দেখাদেখি হাত লাগান ভাঙচুরে। অধ্যক্ষার ঘরের লোহার শিক ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। শুভঙ্কর যে শিক ভাঙছেন, সেই ছবি শুক্রবার সংবাদপত্রে ছাপাও হয়। তার পর থেকেই গা-ঢাকা দেন তিনি। ছেলের সেই অপরাধ মেনে নিতে পারেননি প্রেসার কুকার সারাইয়ের মিস্ত্রি সুব্রতবাবু। স্ত্রীর চোখের জল উপেক্ষা করে ছেলেকে থানায় নিয়ে গেলেন। তুলে দিলেন পুলিশের হাতে। ঘটনার দিন রাতে ওই স্কুলের অধ্যক্ষাকে গ্রেফতার করা হলেও যারা ভাঙচুর চালিয়েছিল, তাদের ধরতে পুলিশ কিন্তু শনিবার সকাল পর্যন্ত আদৌ উদ্যোগী হয়নি। খবরের কাগজে ছবি বেরোনোর পরেও নয়। পুলিশ গড়িমসি করলেও সংবাদপত্রে ছেলের ছবি দেখে সুব্রতবাবু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, পুলিশ বাড়িতে শুভঙ্করকে খুঁজতে আসুক বা না-আসুক, তিনি কর্তব্য পালন করবেন। ছেলেকে ধরিয়ে দেবেন নিজেই।
ভাঙচুরে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে বলে মহাকরণ থেকে নির্দেশ আসার পরে পুলিশ সুব্রতবাবুর বাড়িতে যায় শনিবার গভীর রাতে। শুভঙ্করকে ধরতে বাড়িতে তল্লাশিও চালায়। তাঁকে না-পেয়ে ধরে নিয়ে যায় সুব্রতবাবুকেই। ওই পাড়ার আরও দু’জনকে (তাঁরা শুভঙ্করের বন্ধুদের অভিভাবক) ধরে পুলিশ। তিন জনকে সারা রাত আটকে রাখা হয় দমদম থানায়। ছাড়া হয় রবিবার ভোরে। সুব্রতবাবু বলেন, “বড়বাবু বলেছিলেন, রবিবার সকালের মধ্যে যেখান থেকে হোক ছেলেকে খুঁজে থানায় যেতে হবে।”
ভোরের আলো ফুটতেই আত্মীয়দের বাড়ি বাড়ি ফোন করতে থাকেন সুব্রতবাবু। ছেলেকে খুঁজতে শুরু করেন। কিন্তু খোঁজ পাননি। বারবার ফোন করছিলেন ছেলের মোবাইলে। কিন্তু শুক্রবার থেকে তা বন্ধ ছিল। সুব্রতবাবু বলেন, “পাগলের মতো সেই নম্বরে ডায়াল করতে করতে হঠাৎ এক বার ওটা বেজে উঠল। ও-প্রান্তে ছেলের গলা। ওকে বোঝালাম। বললাম, ওকে না-পেয়ে পুলিশ কী ভাবে আমাকে রাতদুপুরে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। ছেলে বুঝল। সকাল ৮টায় ফিরে এল বাড়িতে।”
ছেলেকে সঙ্গে করে থানায় নিয়ে যাবেন বলে স্ত্রীকে জানিয়ে দেন সুব্রতবাবু। স্বামীর এই কঠিন সিদ্ধান্ত শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন শুভঙ্করের মা মিত্রাদেবী। কিন্তু সে-দিকে ফিরে তাকাননি প্রৌঢ়। বাবার দায়িত্ব পালন করতে ছেলেকে হাত ধরে নিয়ে আসেন বাড়ির বাইরে। রিকশায় তুলে নিজেই নিয়ে যান দমদম থানায়।
একটি যুবকের হাত ধরে প্রৌঢ় সুব্রতবাবুকে থানায় ঢুকতে দেখে পুলিশ অফিসারেরা কম অবাক হননি। সংবাদপত্রে ছবি বেরোনোয় শুভঙ্কর এখন পরিচিত মুখ। তাঁকে চিনতে ভুল হয়নি ওসি-র। বাবা ছেলেকে এগিয়ে দিতেই লক-আপ খুলে শুভঙ্করকে ঢুকিয়ে দেয় পুলিশ। নাম নথিভুক্তি এবং আনুষঙ্গিক লেখালেখির পাট চুকিয়ে ফেলা হয় দ্রুত। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তাদের কাছে খবরটা পৌঁছে দেন ওসি, ‘আরও এক জন অভিযুক্ত, শুভঙ্কর পালকে আমরা গ্রেফতার করেছি।’
ছেলে বাড়ি ফেরার পরে যত তাড়াতাড়ি থানার পথ ধরেছিলেন, শুভঙ্করকে পুলিশের হাতে দিয়ে তত দ্রুত বাড়িমুখো হতে পারেননি সুব্রতবাবু। ছেলে লক-আপে। থানার বাইরে দাঁড়িয়ে বাবা। অনেক ক্ষণ। পুলিশ তো শুভঙ্করকে ভ্যানে চাপিয়ে আদালতে নিয়ে যাবে। একটি বার যদি ছেলেটাকে দেখতে পান! কিন্তু পুলিশ এ দিন শুভঙ্করকে আদালতে নিয়েই যায়নি। অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ি ফিরে গেলেন সুব্রতবাবু। কান্না চাপতে চাপতে বললেন, “অপরাধের শাস্তি ওকে পেতেই হবে।”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.