ছেলের কীর্তিতে স্তম্ভিত বাবা ধরে নিয়ে যেতে চান থানায়
বেশি দূর লেখাপড়া করার সুযোগ পাননি নিজে। সেই আক্ষেপ মেটাতে সামর্থ্যের বাইরে গিয়েই ছেলেকে ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন সুব্রত পাল। আশা ছিল, ইংরাজি মাধ্যম স্কুলের শৃঙ্খলা, আদব-কায়দা শিখে সকলকে তাক লাগিয়ে দেবে একমাত্র সন্তান। কিন্তু ছেলে যে কাজ করে ‘তাক’ লাগালেন, তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না বাবা!
দমদমের ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িয়ে গিয়েছে সুব্রতবাবুর ১৯ বছরের ছেলে শুভঙ্করের নাম। শুধু নাম জড়িয়েছে বললে কম বলা হবে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গিয়েছে, অধ্যক্ষের ঘরের জানলার রড বাঁকানোর চেষ্টা করছেন শুভঙ্কর। ছেলের সেই ছবি ‘তাক’ লাগিয়ে দিয়েছে সুব্রতবাবুকে।
সে দিনের পর সেই যে ঘর ছেড়েছে ছেলে, শনিবার পর্যন্ত তাঁর কোনও খবর নেই। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন যে শুক্রবার থেকে বাড়িতে হাঁড়ি চড়েনি। ছেলের কথা ভেবে সারা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি পাল দম্পতি। তবু অপত্য স্নেহ দুর্বল করেনি সুব্রতবাবুকে। কাজীপাড়ার বাড়িতে বসে চোয়াল শক্ত করে শনিবার তিনি বলেছেন, “যে অন্যায় ও করেছে, তার শাস্তি পেতেই হবে। বাড়ি ফিরলে আমি নিজেই ওকে থানায় নিয়ে যাব। লুকিয়ে থেকে রেহাই পাবে না। শাস্তি না পেলে ও শোধরাবে কেমন করে?”
সুব্রত পাল।
বৃহস্পতিবার সকালে পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের সামনে হাজির হয়েছিলেন শুভঙ্কর। তার পরে যোগ দিয়েছিলেন ওই তাণ্ডবেও। কেন গিয়েছিলেন? পরিবারের কেউ কি ওই স্কুলের ছাত্রী? সুব্রতবাবু বলেন, “এই একই প্রশ্ন আমিও ছেলেকে করেছিলাম। ও বলেছিল, ‘বন্ধুরা তাঁকে বলেছে, পাড়ার বোনেরা ওই স্কুলে পড়ে। সেখানে একটা বাচ্চা মেয়ে এ ভাবে মারা গেল। আমরা চুপ করে থাকব?’ তখনও অবশ্য আমি জানতাম না স্কুলে গিয়ে ও কোন কাণ্ডটা ঘটিয়েছে!”
শুক্রবারের কাগজে ছেলের ছবি দেখে পুরো বিষয়টা জানতে পারেন সুব্রতবাবু। ছেলেকে বকাবকিও করেন। তার পরেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান শুভঙ্কর। তখন থেকে তাঁর মোবাইল ফোনও বন্ধ। শুক্রবার রাতে ছেলের বন্ধুদের বাড়ি গিয়ে খোঁজ করে এসেছেন সুব্রতবাবু। কিন্তু কেউই কোনও হদিশ দিতে পারেনি। স্ত্রী সমানে কেঁদে চলেছেন। আত্মীয়রা এসে সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছেন। সুব্রতবাবুর কথায়, “এত লজ্জিত জীবনে কখনও হইনি। বাকি জীবনের মতো আমার মাথাটা হেঁট করে দিল ও।”
পড়শিরা জানান, লেখাপড়ায় বিশেষ মন ছিল না শুভঙ্করের। সুব্রতবাবুও জানান, উচ্চ মাধ্যমিকে দু’বার ফেল করার পরে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তাঁর ছেলে। অথচ নিজের প্রেশার কুকার সারানোর ছোট্ট দোকান চালিয়ে যা আয় হতো, তার বেশিরভাগটাই ছেলের পড়াশোনার পিছনে খরচ করতেন তিনি। তাঁর আক্ষেপ, “সেই ছেলেই যখন লেখাপড়া

সে দিন ছেলে শুভঙ্কর।
ছেড়ে দিল, তখনও আমি এতটা কষ্ট পাইনি, যা এখন পাচ্ছি। ছেলেটাকে বার বার বলতাম, সৎপথে রোজগারের চেষ্টা কর। অন্তত আমার দোকানে গিয়ে বস। ও বলত, ‘সময় নেই’। সর্বক্ষণ বন্ধুদের সঙ্গে টইটই। এখন তার খেসারত দিচ্ছে নিজেই।” কোন বন্ধুরা সে দিন তাঁর ছেলেকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের নাম জানাতে চাননি সুব্রতবাবু। তিনি চান না কাউকে বিব্রত করতে।
এ দিন সকালে কাজীপাড়ার বাড়িতে বেল বাজাতেই দরজা খুলে দেন এক শীর্ণ প্রৌঢ়। অপরিচিত কয়েকটা চেহারা দেখে প্রথমেই চমকে ওঠেন তিনি। ‘শুভঙ্করের বাবার সঙ্গে কথা বলতে চাই’ জানালে তিনি বলেন, “আমিই ওর বাবা। আপনারা কি পুলিশের লোক?” মিডিয়া শুনেও অবশ্য আশ্বস্ত হননি তিনি। বলেছেন, “শুক্রবার সকাল থেকে বেল বাজলেই মনে হচ্ছে, পুলিশ এসেছে।” কথা চলাকালীনই ছুটে এলেন শুভঙ্করের মা মিত্রা পাল। বিধ্বস্ত চেহারা। আকুল হয়ে জানতে চাইলেন, “আমার ছেলেটার কোনও ক্ষতি হবে না তো? ও খুব বোকা জানেন!” মুহূর্তে কঠিন হয়ে উঠল সুব্রতবাবুর মুখ। বললেন, “যা করেছে তার পরিণাম বুঝতে পারেনি! সত্যিই এতটা বোকা ও?”
কথা বলতে বলতে গোটা শরীরটা থরথর করে কাঁপছিল প্রৌঢ়ের। বললেন, “আমি সুগারের রোগী।
দিন কয়েক আগেও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। ক’দিন বাঁচব জানি না। চেয়েছিলাম, ছেলেটা মানুষ হোক। আমাদের সব স্বপ্ন ও নষ্ট করে দিল...।”

—নিজস্ব চিত্র।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.