পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন ওঁরা। কেউ কর্মসূত্রে প্রবাসী। কেউ বা ঘরণী হয়ে। সব দূরত্ব পেরিয়ে নিজেদের স্কুলের এমন একটি ঘটনায় রীতিমতো বিচলিত ক্রাইস্ট
চার্চ গার্লস হাইস্কুলের প্রাক্তনীরা। ঐন্দ্রিলার মৃত্যু-সংবাদে তাঁরা যেমন বেদনাহত, তেমনই সাধের স্কুলবাড়িটায় অভিভাবকদের তাণ্ডব-ভাঙচুর তাঁরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।
টরন্টো প্রবাসী মীনাক্ষী দত্ত, সিডনির ইন্দ্রাণী দত্ত, মুম্বইবাসী শ্রেয়সী সেনরা গত কয়েকদিন ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের প্রতিটি ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ খোঁজ নিয়েছেন। কখনও ই-কাগজে চোখ রেখেছেন, কখনও খুঁটিয়ে দেখেছেন নিউজ চ্যানেল। কেউ কেউ আবার কলকাতায় আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবদের ফোন করে বিষয়টা বুঝতে চেয়েছেন। ঘটনার কথা যত জেনেছেন, ততই শিউরে উঠেছেন প্রাক্তন এই ছাত্রীরা। মীনাক্ষীদেবী, ইন্দ্রাণীদেবীদের বক্তব্য, “পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ঐন্দ্রিলা দাসের মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। সেই সঙ্গে একশো তিরিশ বছরের ঐতিহ্যমণ্ডিত আমাদের স্কুলে যে ভাবে ভাঙচুর চালানো হল, বর্ষীয়ান শিক্ষিকা ও হস্টেলের পড়ুয়ারা যে ভাবে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন, তা মেনে নেওয়া যায় না। যে স্কুল এত বছরে কখনও বন্ধ থাকেনি, তার দরজা আজ বন্ধ দেখে আমরা মর্মাহত।” বিদেশ-বিভুঁইয়ে থাকা ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের প্রাক্তনীদের দাবি, যথাযথ নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করে অবিলম্বে স্কুল খোলা হোক।
গোটা ঘটনার প্রেক্ষিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা দফতর এবং প্রশাসনের কাছে কয়েকটি আর্জি রেখেছেন ক্রাইস্ট চার্চের প্রাক্তনীরা। কানাডার শার্লটটাউনের বাসিন্দা মৌমিতা রায়, দুবাই প্রবাসী মণিদীপা দাসরা প্রথমেই চান ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর যথাযথ তদন্ত। তাঁদের কথায়, “আমরা জানতে চাই, এই দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর ঘটনার কারণ কী চিকিৎসায় ত্রুটি, মানসিক চাপ না অন্য কিছু। এ ক্ষেত্রে স্কুলের ভূমিকা ঠিক কতটা ছিল, সেটাও জানা জরুরি।” স্কুল-কর্তৃপক্ষ যাতে ঐন্দ্রিলার মৃত্যুতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন’ নেয়, সেই দাবি জানিয়েছেন প্রাক্তনীরা। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা ঠেকাতে অভ্যন্তরীণ নিয়মকানুন ঢেলে সাজা এবং স্কুলের কর্মকাণ্ডের উপর নিয়মিত নজরদারি চালানোর বন্দোবস্ত করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি, স্কুলে ভাঙচুরের ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন প্রাক্তনীরা। মীনাক্ষীদেবী, মণিদীপাদেবীদের মতে, “যাঁরা স্কুলে ঢুকে ভাঙচুর চালালেন, যাঁদের তাণ্ডবের জেরে দিনভর সন্ত্রস্ত হয়ে থাকতে হল প্রবীণ শিক্ষিকা ও হস্টেলের ছোট ছোট মেয়েদের, তাঁরাও তো কম দোষী নন।” এই সব কাঁটাছেঁড়া-তদন্তের আগে স্কুল খোলার দাবি জানিয়েছেন মীনাক্ষীদেবীরা। তাঁদের মতে, উপযুক্ত নিরাপত্তা দিয়ে অবিলম্বে স্কুল খোলা হোক। কিছু মানুষের নিন্দনীয় আচরণের জন্য স্কুল বন্ধ রেখে পড়ুয়াদের সমস্যায় ফেলা উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে স্কুল-কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি শিক্ষা দফতর এবং প্রশাসন উদ্যোগী হবেন বলেই ক্রাইস্ট চার্চের প্রবাসী প্রাক্তনীদের আশা। |