আন্দোলনের নামে পাহাড়ে যাতে ফের অশান্তির মেঘ না জমে, তা নিশ্চিত করতে বাড়তি নজরদারি শুরু করল রাজ্য সরকার।
মোর্চার পাহাড়-অচল করার আন্দোলনে ঘরে-বাইরে পরোক্ষ ‘মদতদাতা’ যে অনেকেই, গোয়েন্দা সূত্রে সে খবর আসছিল মহাকরণে। সম্প্রতি সে ব্যাপারে বেশ কিছ নির্দিষ্ট অভিযোগও মিলেছে বলে শনিবার মহাকরণ সূত্রে জানা গিয়েছে। তার জেরেই বাড়তি ‘নজরদারির’ হুঁশিয়ারি।
এ দিন, মহাকরণ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিকিম এবং পড়শি রাষ্ট্র নেপালের অন্তত তিন জন বড় মাপের ব্যবসায়ীর ‘সন্দেহজনক ভূমিকা’ নিয়ে স্পষ্ট তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের মধ্যে কেউ ‘রসদ’ পাঠিয়ে, কেউ আবার সরাসরি ‘আর্থিক লেনদেনে’ যুক্ত বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ। গোয়েন্দা সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে যে, অবাধ সীমান্তের সুযোগ নিয়ে নেপালের একটি রাজনৈতিক দলের একাংশও পাহাড়ের অশান্তিতে ‘পরোক্ষ’ মদত জুগিয়ে চলেছে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দার্জিলিঙের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে যে বৈঠক ডেকেছিলেন, সেখানে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের দেওয়া এমনই বেশ কিছু তথ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মহাকরণের এক কর্তা জানান, সিকিম, শিলিগুড়ি তো বটেই, প্রতিবেশী দেশ নেপালের মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী, ক’জন নেতার ভূমিকা নিয়ে যে সব তথ্য, অভিযোগ মিলেছে তা কেন্দ্রকে জানানো হবে। রাজ্যের পক্ষ থেকে মোর্চা নেতাদেরও বহিরাগতরা কী ভাবে পাহাড়ে অশান্তি ছড়াতে চাইছে, জানিয়ে সতর্ক করা হবে।
এত দিন কড়া মনোভাব দেখালেও গত কয়েক দিনে মোর্চার ‘নরম মনোভাবে’ রাজ্যও কিছুটা সতর্ক হয়ে পা ফেলতে চাইছিল। কিন্তু এ দিন গোয়েন্দা সূত্রে তা জানতে পেরে উদ্বিগ্ন হয় প্রশাসন। তবে, এ নিয়ে এখনই কোনও ‘কড়া’ পদক্ষেপ করা হবে না। মহাকরণ সূত্রে এমনই জানা গিয়েছে।
এ দিন সকালে তাই ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এর সদস্য তথা নারী মোর্চার প্রথম সারির নেত্রী ঊর্মিলা রুম্ভাকে পুলিশ পুরনো একটি মামলায় গ্রেফতার করলেও তাঁর জামিনের বিরোধিতা করেনি সরকার। ৬৩ বছরের ঊর্মিলাদেবীকে জাতীয় সড়ক অবরোধের মামলায় গ্রেফতারের পরে মোর্চা নেতারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। মোর্চার তরফে ক্ষোভ প্রকাশ করে নানা মহলে জানানো হয়, বন্ধ তুলে পাহাড়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখার পরেও সরকার নরম মনোভাব না দেখানোয় জটিলতা ফের বাড়তে পারে। এরপরেই ওই নেত্রীর জামিনের ব্যাপারে বাধা দেওয়া হবে না বলে সরকারি ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ অবশ্য জানায়, বয়সের কারণেই ঊর্মিলাদেবীর জামিনের আর্জির বিরোধিতা করা হয়নি। তবে, ২৫ সেপ্টেম্বর তাঁকে ফের আদালতে হাজির হতে হবে। তবে, তাঁদের আন্দোলনে সিকিম, নেপালের ব্যবসায়ীদের মদত দেওয়ার যে অভিযোগ রাজ্য সরকার তুলেছে, সে ব্যাপারে ক্ষুব্ধ মোর্চা নেতারা। মোর্চার সহকারী সাধারণ সম্পাদক জ্যোতিকুমার রাই বলেন, “আমরা যেখানে আলোচনার উপরে জোর দিয়েছি, ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের আশ্বাস পেয়ে বন্ধ তুলেছি, সেখানে কেন আমাদের নামে মিথ্যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে? কেন বৃদ্ধা নেত্রীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে? এ ভাবে আমাদের দেশবিরোধী তকমা দেওয়ার চক্রান্ত হলে পাহাড়বাসী মানবেন না।”
আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর কার্শিয়াঙে তৃণমূল শান্তি মিছিল করলে তাতেও গোলমালের আশঙ্কাও রয়েছে বলে মোর্চা নেতারা এ দিন জানান। মোর্চার এক শীর্ষ নেতার আশঙ্কা, যে হেতু দলের কট্টরপন্থীদের একাংশ বন্ধ তোলার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি, তাই তাঁদের মধ্যে কেউ ওই শান্তি মিছিলের বিরোধিতা করতে পারেন। অশান্তি এড়াতে তাই বিকেলেই শাসকদলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ১৬ সেপ্টেম্বর কার্শিয়াঙে মিছিল বাতিল। দলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “পুরভোটের প্রচার নিয়ে সকলে ব্যস্ত। তাই আপাতত কার্শিয়াঙে মিছিল হবে না।” এতে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন মোর্চা নেতারা। এক নেতা জানান, ২৮ সেপ্টেম্বর জিটিএ-এর নতুন ‘চিফ’ নির্বাচনের আগে আন্দোলনে ধৃত জিটিএ সদস্য-সহ সকলে মুক্তি পেলে আর জটিলতা বাড়ার কথা নয়। সে জন্য এ দিন জিটিএর প্রধান সচিবের কাছে ধৃতদের বিনা শর্তে মুক্তি দেওয়ার দাবিতে স্মারকলিপি দেন মোর্চা নেতারা।
|