নিকুম্ভ স্যর আর তাঁর ছাত্রেরা আজও ব্রাত্য এই রাজ্যের স্কুলে
পোশাকি নামটা বেশ ভারী‘স্পেশাল এডুকেটর’। কাজটাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বইকীপ্রতিবন্ধী শিশুদের সমান্তরাল শিক্ষাব্যবস্থার উপযুক্ত করে তোলা। ‘তারে জমিন পর’ সিনেমায় যেমন নিকুম্ভ স্যরের মতো শিক্ষকের হাত ধরে উঠে এসেছিল ঈশান অবস্তীর মতো ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত ছাত্র, তেমনই এই শিক্ষকদের সাহায্যে পড়াশোনায় ঘুরে দাঁড়াবে প্রতিবন্ধী পড়ুয়ারা, এমনই পরিকল্পনা ছিল সর্বশিক্ষা মিশনের।
কিন্তু সে সুযোগ দিচ্ছে কে? না তাঁদের দফতরে এসে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় হয় প্রতিবন্ধী শিশুদের, না স্কুলে-স্কুলে গিয়ে বিশেষ শিক্ষানীতির পরিকল্পনা করে দিতে পারেন তাঁরা। সর্বশিক্ষার প্রচুর প্রকল্পের অনেক টাকাসেগুলির বিলি ব্যবস্থাতেই দিন কাটে মূলত। সবচেয়ে বড় সমস্যা, গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে শিক্ষক হিসেবে এঁদের কোনও স্বীকৃতি নেই। প্রতিবন্ধী দিবস পালন অনুষ্ঠান, শিশু সহায়ক যন্ত্রপাতি ও টাকা বিলি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলাএসব সামলেও স্কুলে গেলে ভ্রু কুঁচকে যায় শিক্ষকদের। ‘আবার এসেছেন!’শিক্ষকরা বিরক্ত হন। তিন জন প্রতিবন্ধী পড়ুয়ার জন্য ক্লাসে আর এক জনকে টেনে নিয়ে যাওয়াটা বাতুলতা মনে হয় তাঁদের।ছে। প্রাথমিক স্কুলগুলিতে সামান্য গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও উচ্চ বিদ্যালয়গুলিতে না থাকারই নামান্তর। অলক্ষ্যে যে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়ছে, নজরে রাখে কে?
শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, ৬-১৪ বছর বয়সী শিশু-বালক-বালিকাদের পঠনপাঠন সুনিশ্চিত করা রাষ্ট্রের প্রাথমিক কর্তব্য। যার মধ্যে পড়ছে প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরাও (চিলড্রেন উইথ স্পেশাল নিডস্)। ‘স্কুল চলো’ অভিযানের মতো প্রকল্পগুলি শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতন করে তুলতে পেরেছে বলেই বিদ্যালয়ে অন্য শিশুদের সঙ্গে প্রতিবন্ধী বা বিশেষ শিশুদের নামও নথিভুক্ত করা গিয়েছে।
এদের সাধারণ ছেলেমেয়েদের সঙ্গে পড়াশোনার উপযোগী করে গড়ে তুলতে সর্বশিক্ষা মিশনের অধীনে স্পেশাল এডুকেটর নিয়োগ করা হয়েছে এই রাজ্যে। নিয়ম মতো মানসিক প্রতিবন্ধী ৫ জনের জন্য এক জন এবং শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ১০ জনের জন্য এক জন করে স্পেশাল এডুকেটর থাকা উচিত। কিন্তু রাজ্যের কোথাওই চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্পেশাল এডুকেটর নিয়োগ হয়নি। প্রতি চক্রে (সার্কেল অফিস) মানসিক, দৃষ্টিগত ও শ্রবণগত প্রতিবন্ধীদের জন্য অন্ততপক্ষে তিন জন স্পেশাল এডুকেটর থাকা দরকার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, চার-পাঁচটা চক্র মিলিয়ে অনেক সময়ে এক জনও রয়েছেন।
সোম ও বুধবার চক্র কার্যালয় লাগোয়া রিসোর্স সেন্টার বা সম্পদ কেন্দ্রে বসতে হয় স্পেশাল এডুকেটরদের। শুক্রবার যেতে হয় চক্র কার্যালয়ে। মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার স্কুলে। রিসোর্স সেন্টারে মূলত বিভিন্ন থেরাপি এবং প্রশিক্ষণ দেন স্পেশাল এডুকেটররা। যেখানে শুধুমাত্র মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্পেশাল এডুকেটর রয়েছেন, সেখানে দৃষ্টিহীনেরা কোনও প্রশিক্ষণ পান না। তবে মানসিক প্রতিবন্ধীরাও কতটা নিয়মিত ওই কেন্দ্রে যান, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। স্কুলে শিক্ষকদের সঙ্গে ক্লাসে গিয়ে প্রতিবন্ধীদের সুবিধা-অসুবিধার দিকটি বুঝে পড়ানোর ধরন ঠিক করে দেওয়ার কথা এই শিক্ষকদের। কিন্তু এক জন স্পেশাল এডুকেটরের অধীনে রয়েছে ৮০-৮৫টা স্কুল। তাই তা সম্ভব হয় না। পূর্ব মেদিনীপুরের এক স্পেশাল এডুকেটর মেনে নেন, “এত কাজ থাকে যে সপ্তাহের তিন দিন স্কুলে যেতে পারি না। হয়তো এক দিন পারি। কোনও স্কুলে এক বার যাওয়ার পরে ফের যেতে তিন থেকে চার মাস লেগে যায়।” তৃণমূল প্রভাবিত স্পেশাল এডুকেটর অ্যাসোসিয়েশনের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক অসিত মণ্ডল স্বীকার করেন, “স্পেশাল এডুকেটরের সংখ্যা কম হওয়ায় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শিক্ষায় ঘাটতি থাকছে। স্পেশাল এডুকেটরদের দিয়ে করণিকের কাজ করানোয় তাঁরা নিয়মিত স্কুল পর্যবেক্ষণেও যেতে পারছেন না।”
রয়েছে স্কুলের অসহযোগিতাও। ছাত্র-ছাত্রীদের সামান্য একটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য কত বার যে স্পেশাল এডুকেটরদের স্কুলে যেতে হয়। আজ অমুক ছাত্র আসেনি, ছাত্রের বাড়িতে খবর পাঠানো যাবে না, কাল পরশু নাগাদ আসুনএভাবে চলতে থাকে। কখনও আবার প্রতিবন্ধী পড়ুয়াদের শংসাপত্র বের করার কাজও করতে হয় তাঁদের। মুর্শিদাবাদের সারগাছি চক্রের স্পেশাল এডুকেটর সুজিত মণ্ডল বলেন, “জেলার অনেক স্কুল বিশেষত মাধ্যমিক স্কুলগুলি গুরুত্ব দিতে চায় না। ফলে আপার প্রাইমারিতে ভর্তি হয়েও রাজ্যে বহু প্রতিবন্ধী শিশু স্কুলছুট হচ্ছে। আমরা খোঁজ রাখি না।”
তথ্য সহায়তা: শুভাশিস সৈয়দ।

অবহেলার ছবি
• এ রাজ্যে প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা ২ লক্ষ ৭০ হাজার।
• স্কুলের খাতায় নাম রয়েছে ১ লক্ষ ৯৩ হাজার শিশুর।
• রাজ্যে স্পেশাল এডুকেটর রয়েছেন মাত্র ১৩০০ জন



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.