|
|
|
|
|
|
|
ল্যাজে পা |
চন্দ্রিল ভট্টাচার্য |
আমরা নিজের গায়ের ময়লা নিয়ে খেলি, নাকের শুকনো সিকনি কানের গুঁড়ো খোল চামড়ার ঘামের গোল্লা মজাসে পাকাই, রাস্তার ইটকে শট মারতে মারতে নিয়ে যাই এ-গলি থেকে ও-গলি, বালতির মধ্যে মগ ঝপাং করি, মায়ের মৃত্যুকামনা করে অ্যাল কাটি, ভীষণ মন দিয়ে দেখি পাশের বাড়ির বউদির হাঁটার সময় আন্দোলিত পাছা, বড় নেড়িদের ভয় পাই আবার ছোট নেড়িদের ভালবাসি, দোকানে পাঁউরুটি কিনতে গিয়ে এক বার শুঁকে নিই যদিও শুঁকে কী বুঝব নিজেই জানি না, বন্ধুর দুর্দশার গল্পের সময় আউট অব ফোকাস হয়ে যাই ও মাঝে মাঝে বলি ইশ্শ্, বড়লোকদের পার্টিতে নেমন্তন্ন পেলে গলে পড়ি কিন্তু গিয়ে তুম্বো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি কারণ বড়লোকরা খুব অমানুষ এবং আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না, খুব সেক্স করতে চাই কিন্তু কোনও মেয়ে যদি আলাপের পরেই শোয়া-শোয়া ভাব করে মনে মনে বলি ‘বেশ্যা’, বাবাকে দেখে ভাবি আর যাই হোক এ রকম ভোঁদাই আমি কোনও দিন হব না, সত্যজিৎ রায়ের মতো ওয়েস্টার্ন ক্লাসিকাল বুঝবই ঠিক করি এবং বাখ চালিয়ে আকুল নাক ডাকাই, নিজের বাচ্চার ছোট্ট সাইজের পাশবালিশ দেখে একলা ঘরেই খি-খি হাসি, ট্র্যাফিক কন্ট্রোল করা পাগলাকে দেখে ভাবি শালা কী খায় এত ভাল হেল্থ?, বাথরুমে গিয়ে একটা রবীন্দ্রসংগীত গাই কিন্তু দেড় লাইনের পরেই কোনও কথা মনে নেই তাই হুঁ হুঁ দিয়ে ম্যানেজ করি কিন্তু ব্যারিটোনটা মাইরি বেশ গমগমে, কাগজে উত্তরাখণ্ডের খবর পড়ি কিন্তু শিয়োর থাকি আমার কোনও দিন এরম হবে না, এক বার দেখি তো কিছু ভাল হচ্ছে কি না ভেবে রিমোটটা হাতে নিই আর পর পর চ্যানেল টিপে চলি যত ক্ষণ না খেতে ডাকছে এবং ভাত মেখে বলি শালা একটা কিচ্ছু হয় না এই শুয়ার টিভিতে, পুজো এলেই শঙ্কিত হয়ে পড়ি এই বার তো পুলিশ গাড়ি ঘুরিয়ে দেবে আর নিজের বাড়িই ঢুকতে দেবে না, অনেক সময় আবিষ্কার করি নিজের ভুঁড়ি বাজিয়ে চলেছি এবং বলতে নেই বেশ তালে তালেই, রাস্তার পাগলি দেখলে ঝুঁকে স্তনটাকে মেপে নিই বেশ কিছু ক্ষণ, শ্মশানে গেলে ভাবি যাব্বাবা এইটুকু চুল্লির মধ্যে ঢুকব কী করে দম তো বন্ধ হয়ে আসবে তার পর তাড়াতাড়ি চা খেতে যাই, রোজ বারান্দায় কাগজ ছুড়ে দিয়ে যায় আর তুলতে গিয়েই কোমরে খচাৎ লাগে কাল থেকে ভুজঙ্গাসন মাস্ট, ‘পিতামাতার আশীর্ব্বাদ’-এর বদলে বাসের গায়ে প্রথম প্রেমিকার নাম দেখে ভাবি পৃথিবী ইঙ্গিত পাঠাচ্ছে, চা খাই শুধু ভাঁড়টাকে পা দিয়ে মুড়মুড় ফাটাবার মজার জন্যেই, যত বারই নিভৃতে যৌনাঙ্গ চুলকোই তত বারই হাতটা আচ্ছাসে শুঁকে নিই, কথায় কথায় তক্কো জিততে চেঁচাই ‘এটা সাইন্টিফিক!’ |
|
ছবি: চন্দ্রিল ভট্টাচার্য |
কিন্তু আসলে সাইন্সের কিচ্ছু জানি না, অনেক ভেবে দেখি একদম সৎ নির্মল সুখ পেয়েছিলাম দূরদর্শনে যখন মাইকেল আসত আর কখনওই নয়, মেট্রোয় ব্যাগ চেক করতে চাইলে কাঁউকাঁউ খেঁকিয়ে উঠি ‘আমায় কি টেররিস্টের মতো দেখতে?’, আলমারি থেকে ছেঁড়া আর বেঢপ জামাগুলো নামাই বন্যাত্রাণে দিয়ে দেব বলে, জলে চোবা ফল্স দাঁত দেখে প্রাণপণ রাত্রি-ওয়াক আটকাই, কেউ নতুন মোবাইল কিনলেই জিজ্ঞেস করি ‘কত নিল?’, মিসম্যাচ কাপ্ল দেখে ভাবি যাশ্শালা এত সুন্দর মেয়েটা এই চোয়াড়েটাকে বালিশে সয় কী করে, বাসে যেতে যেতে ফুটপাতে মামলেট ভাজার গন্ধ পাই ও প্রাণ ভরে টানি, লো-ওয়েস্ট প্যান্ট দেখে ভাবি দৌড়ে সাঁৎ করে টেনে নামিয়ে দিই গে, বাইশ বছর বয়সের জন্য মনখারাপ ঘাই মারে কিন্তু প্রভূত কোঁত পেড়েও এক ইঞ্চি ফ্ল্যাশব্যাক বেরোয় না, লেক-এ প্রেমিক-প্রেমিকাদের জরিপ করি ও হুটহাট ঠোঁটচোষাও নজরে আসে তখন বউকে একটা অসভ্য এসএমএস করতে ইচ্ছে করতে যায় কিন্তু আজকাল ওর মুখে বড্ড গন্ধ, জেরক্স করাতে গিয়ে কিছুতেই দোকানটা খুঁজে পাই না অথচ ক’দিন আগেও এখানেই ছিল, হাতে চুন খসে পড়লে আঁতকে উঠি এই রে শ্বেতী শুরু হচ্ছে না তো!, ভায়রাভাইয়ের গৃহপ্রবেশে গিয়ে অবাক হই আনকুথ গাধাটা ঘোঁতঘোঁত করে চলছে আর ইংরিজি বলার সময় ভার্ব অবধি লাগাতে জানে না ক্যালানেটা অ্যাদ্দূর ওঠে কোন রুটে, পার্কিং-এর লোকটা ইচ্ছে করে সাড়ে ছ’টাকে ছ’টা লিখে ঠকাল আর আমায় দিতে হল দশের জায়গায় কুড়ি: জ্বলুনিতে মাঝরাত্রে উঠে পড়ি, লোমের মধ্যে দিয়ে পিঁপড়ে চলেছে দেখে ঠাওরাই ওর কাছে এটা গহন জঙ্গল, আতান্তরে না পড়লে কিচ্ছুতে খরচা করি না চকচকে দশ টাকার কয়েন, কথায় কথায় ‘মাক্কালী!’ বলার অভ্যেসটা একদম চলে গেছে দেখে নিজেই খুব অবাক হই, পায়রাগুলোকে এ-ওর ওপর উঠে পড়তে দেখে ভাবি সত্যি এত নড়বড়ে ব্যালান্সে এরা ঠিকঠাক সঙ্গম করে পৌঁছতে পারবে তো ডিম অবধি, গেটের দারোয়ানের মুখ খাওয়ার ভয়ে সাঁইসাঁই পা চালিয়ে বাড়ি ফিরি সাড়ে ন’টার মধ্যে, অন্ধ লোককে রাস্তা পার করে দেব ভাবি কিন্তু ঠিক তখনই অটো এসে যায়, টেলিফোনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ভাবি এক দিন তো ভাই তুমি বেজে উঠবেই সেই সাংঘাতিক খারাপ খবরটা মুখে নিয়ে, বাজার গিয়ে রোজ বিড়বিড়োই খুব বড় মাপের শুয়োরের বাচ্চা ছাড়া কেউ বিয়ে করে না শালা কী বাজখাঁই স্বাধীন ছিলাম শুধু সাড়ে তিন মিনিট চিড়িক পেতে কুড়ুল মারলাম, গাড়িতে যেতে যেতে ভীষণ চমক পাই ও যত ক্ষণ দেখা যায় দেখে নিই চলে-যাওয়া ট্রেন, ছেলেদের সামনে খিস্তি করি ছিপিহীন কিন্তু মেয়েদের সামনে কপাৎ গিলে ফেলি, বাসে খুচরোর বদলে ডিউ স্লিপ পেলে কন্ডাক্টরের মুখে ছুড়ে মারতে ইচ্ছে করে কিন্তু ব্যাগে ঢোকাই উইথ ‘এই তো জীবন’ মুচকি, রিকশাওয়ালার হাঁ-করা ঘুম দেখে ভাবি পাখি হেগে দিলে কী হবে, হিসি শেষ করেই খামখা ঘোয়াক ঘোয়াক কফ ওগরাই যেন দুটো আউটলেট-এর স্কোর হোক ১-১, শপিং মল-এ ডবকার পর ডবকা দেখে ভাবি উফ শালা কেউ না কেউ তো ডেলি এদের খালিগায়ে পায়!, ইংরিজি সিনেমায় সবাই জামাপ্যান্ট মায় জুতো না ছেড়েই বিছনায় শুয়ে পড়ছে দেখে আন্তরিক অবাক মানি, ঝিমিয়ে আসা ফোঁড়া টিপে নিশ্চিত হই কুকুর পোষার চেয়ে দশ গুণ ভাল সামান্য ব্যথা পোষা, ইয়াংদের ইতর লক্কামো দেখে ভয়ে সিঁটিয়ে যাই শালা আমায় না এক দিন ঘিরে অপমান করে, খুব প্রতিজ্ঞা করি এই বছরটা ডাইরি লিখব এবং বেছেবুছে একটা কিনিও কিন্তু লিখতে গিয়ে দেখি রোজ একটাই কথা ভাল্লাগছে না ভাল্লাগছে না, শার্সি দেওয়া জানলা আর হলদে আলো দেখে বুঝি ওখানেই আছে শ্রেষ্ঠ নরম, রাত্রে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানার সময় ছাঁৎ ছোবল খাই: যৌবনে যা সবচেয়ে ঘেন্না করতাম প্রিসাইসলি তা-ই হয়েছি, রাস্তা দিয়ে ভুঁঁড়িওলা বাচ্চাগুলো ‘চিঁপস দাঁও চিপস দাঁও’ ঘ্যানঘ্যান করতে করতে যাচ্ছে দেখে ভাবি বাপ-মাগুলো ঠাটিয়ে চড়াতে পারে না?, বিষতেতো ট্যাবলেটের কোর্স করেও যখন পেটব্যথা কমে না তক্ষুনি হোমিয়োপ্যাথিতে বিশ্বাস পেড়ে আনি, বন্ধুর বউয়ের সঙ্গে গল্প করতে গিয়ে যত জোর করে মুখের দিকে তাকাই তত সড়াৎ বুকের দিকে তাকিয়ে ফেলি এবং সেও ক’সেকেন্ড গ্যাপ দিয়েই ঠিক করে নেয় ওড়না, হাসপাতালে কী একটা দিয়ে মেঝেফেঝে ধোয় সেই গন্ধটা সহ্য করতে পারি না বলে দেখতে যাই না ক্যানসার-ছোটকা, সিগনালে চেঞ্জিং লাল সংখ্যার দিকে হিপনোটাইজ্ডের মতো তাকিয়ে থাকি, মশারি টাঙাতে গিয়ে রোজ ভাবি ফ্যানের ব্লেডে গলা গেল রে, রেপ-এর বিবরণ পড়ে একটু যৌন তেজ পাই তার পরই নিজেকে বলি ছিছিছি, শাঁখ শুনে পুরো প্রণামটা না করে নাকে হাত ঠেকাই, বেড়াল দেখলেই হ্যাট হ্যাট করি পা আছড়াই, দুটো বিরক্তি-বমির মতো কালচে পকোড়া দেখে বলি এগুলো শালা পকোড়া না স্টমাকের পোকা, একটা খাবি নাকি— এই খোকা, হ্যা-য়! |
|
|
|
|
|