তাঁর সামনে যত বিপজ্জনক বাউন্সারই আসুক না কেন, লড়াই ছাড়া নিজের উইকেট দেওয়ার যেন ইচ্ছে নেই নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের।
শুক্রবার নয়াদিল্লিতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই এ দিন চেন্নাইয়ে আবার এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করলেন শ্রীনিবাসন। শুধু তাই নয়, সেখানে এমন ভঙ্গিতে কথা বললেন শ্রীনি যে বৈঠকে উপস্থিত পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিরা রীতিমতো হতবাক হয়ে যান। আগামী আট-নয় সপ্তাহের রূপরেখা কী হবে, আইসিসি-তে এশিয়ার ভূমিকা কী হবে, বৈঠকে সে সব নির্দেশ দিয়ে দেন শ্রীনিবাসন। একটা সময় বাকি প্রতিনিধিদের এটাও বলে দেন যে, দুবাইয়ে আইসিসি চিফ এগজিকিউটিভ মিটিংয়ে আপনারা কতগুলো বিষয় নিয়ে বিতর্ক তৈরি করুন।
কী কী বিষয়?
এক, ওয়ান ডে-তে ২৫ ওভার করে নতুন বল ব্যবহারের বিরোধিতা করুন। ৫০ ওভারই এক বলে খেলার দাবি তুলুন।
দুই, লাইট মিটার ব্যবহারের নিয়মটা বদলাতে হবে।
তিন, ডিআরএস-এর ধারাবাহিক বিরোধিতা করে যেতে হবে। অ্যাসেজ সিরিজটা পুরো নষ্ট করে দিয়েছে ডিআরএস।
চার, ২০১৫ বিশ্বকাপের সূচি নিয়ে আপত্তি। পারথে ইন্ডিয়া দুটো ম্যাচ খেলতে রাজি নয়। |
এ ছাড়া বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেল-কে শ্রীনি বলেন যে, হারুণ লর্গ্যাট যখন দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে কথা বলতে আসবে, তখন ওকে একদম পাত্তা দেবে না। আইসিসি-তেও ওর বিরুদ্ধে বলে আসবে।
এশীয় প্রতিনিধিদের শ্রীনিবাসন পরিষ্কার বলে দেন, আপনারা আইসিসি-কে জানিয়ে দেবেন যে, এ সব ব্যাপারে আমাদের আপত্তি আছে। ছ’সপ্তাহ বাদে এগজিকিউটিভ বোর্ডের মিটিংয়ে বাকি কাজটা আমি করব। যা শুনে বৈঠকে উপস্থিত কর্তারা আশ্চর্য হয়ে যান, যে লোকটা ২৯ সেপ্টেম্বর বোর্ড নির্বাচনের পরে থাকবে কি না তারই ঠিক নেই, সে কী ভাবে এ সব বলে যাচ্ছে? বিশেষ করে যখন বৈঠকে তোলা শ্রীনির প্রত্যেকটা পরিকল্পনাই দীর্ঘমেয়াদী। এবং প্রতিটা পরিকল্পনাই করা হয়েছে তাঁকে ঘিরে।
এখানেই শেষ নয়। প্রতিনিধিদের শ্রীনিবাসন আরও নির্দেশ দেন যে, আজকের মিটিং নিয়ে সাংবাদিকরা কিছু জানতে চাইলে আপনারা বলবেন এটা বেসরকারি মিটিং। যার কোনও মিনিটস রাখা হবে না। শ্রীনি এটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই বাকিরা বুঝতে পারেন যে সূক্ষ্ন হলেও আইনের কোনও একটা ঝামেলা রয়েছে, যেটা এড়াতে শ্রীনিবাসন মিটিংয়ের মিনিটস রাখতে চান না।
গত আটচল্লিশ ঘণ্টায় ভারতীয় ক্রিকেট রাজনীতিতে শ্রীনিবাসনের এ রকম নাটকীয় প্রত্যাবর্তনের পরেও তাঁর বিপক্ষ শিবির আশা ছাড়ছে না। তারা এখনও বলছে, নাটক আরও বাকি আছে। যেটা পরপর ঘটবে আগামী তিন দিনে। শ্রীনি-বিরোধীরা তাকিয়ে আছেন দুটো জিনিসের দিকে। এক, জগন্মোহন রেড্ডি মামলায় সিবিআই নতুন নির্দেশ দিতে পারে। আর দুই, স্পট-ফিক্সিং নিয়ে মুম্বই পুলিশের চার্জশিট। যা বেরোতে বেশি দেরি নেই। আর যার মধ্যে জড়িয়ে আছে শ্রীনিবাসনের জামাই গুরুনাথ মইয়াপ্পনের নামও।
অরুণ জেটলিকে বোর্ডের কিছু কিছু সদস্য জিজ্ঞেস করেন যে, শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকের শেষে আপনি কী ভাবে শ্রীনিবাসনের পাশে বসে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন? জেটলি তখন বলেন, বোর্ড প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতিতে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি তাদের রায় ঘোষণা করতে পারে না।
পরপর দু’দিন বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে শ্রীনির প্রকাশ্যে আসায় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে জগমোহন ডালমিয়ার ভূমিকা নিয়েও। কেউ কেউ যেমন বলছেন, অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্টের ভূমিকা তো এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘আদার ওম্যান’-এর মতো! যা শুনে ডালমিয়ার বক্তব্য, “আমাকে বোর্ড যা নির্দেশ দিয়েছে, আমি সেটাই মেনে চলছি। এখানে তাই তাড়াহুড়ো করে ছেড়ে দেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই।”
বোর্ড রাজনীতিতে শ্রীনিবাসনের ভবিষ্যৎ শেষ পর্যন্ত যা-ই হোক, এখানে জেটলির ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। যেহেতু তিনি সিএবি-সহ সাতটা ভোট নিয়ন্ত্রণ করেন। যদি সম্মুখসমর হয়, তা হলে এই সাতটা ভোটে সুইং না হলে নির্বাচনে শ্রীনিবাসনকে হারানো যাবে না। বিরোধীরা আশাবাদী যে, জেটলি তাঁর আগেকার ‘নন-কমিটাল’ অবস্থান থেকে ঘুরছেন। আর ঘুরছেন যে, সেটা আগামী দু’দিনেই দেখা যাবে। শ্রীনি-লবি যদিও সেটা মনে করে না। তারা মনে করে জেটলি এখনও তাদের দিকেই আছেন। শশাঙ্ক মনোহর কবে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেবেন, ধোঁয়াশা রয়েছে সেটা ঘিরেও।
সব মিলিয়ে বোর্ড রাজনীতির রঙ্গ জমজমাট। |