|
|
|
|
মালকানগিরির দলই কি জড়িত সুকমা হানায় |
কাকভোরে পুলিশি হানা, নিহত ১৩ মাওবাদী |
সুরবেক বিশ্বাস • কলকাতা |
ছত্তীসগঢ়ের সুকমায় কংগ্রেস নেতাদের কনভয়ে হামলা চালিয়ে প্রায় ৩০ জনকে হত্যা করার চার মাসের মাথায় মাওবাদীদের বড়সড় ধাক্কা দেওয়া গিয়েছে বলে দাবি করল ওড়িশা পুলিশ। তাদের বক্তব্য, শনিবার ভোরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক মহিলা-সহ ১৩ জন মাওবাদী নিহত হয়েছে, সেই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে এক মাওবাদীকে।
এ দিনের ঘটনাস্থল ওড়িশার মালকানগিরি জেলার চিলাকোটা জঙ্গল। পুলিশের দাবি, সেখানে জনা তিরিশ মাওবাদীদের একটি শিবির ছিল। ওই জায়গা থেকে সুকমায় কংগ্রেস নেতাদের উপর হামলার ঘটনাস্থলের দূরত্ব বড়জোর ২০ কিলোমিটার। এমনকী, ছত্তীসগঢ়ের গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ওড়িশা পুলিশ এ দিন ‘অপারেশন’ চালায়। সব মিলিয়ে প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে, গত ২৫ মে সুকমায় কংগ্রেস নেতাদের উপর হামলাকারী দলটিরই একাংশ মালকানগিরির ওই জায়গায় ঘাঁটি গেড়ে ছিল। সুকমার ঘটনার পরেই তদন্তকারীরা জানান, হামলাকারীদের মধ্যে ছিল মালকানগিরি থেকে আসা মাওবাদীদের একটি দলও।
ওড়িশায় এর আগে একটি মাত্র পুলিশি অভিযানে এত জন মাওবাদী এক সঙ্গে নিহত হয়নি। মালকানগিরি ও কোরাপুটএই দু’টি জেলা ওড়িশায় মাওবাদীদের দুই প্রধান ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তা ছাড়া, শনিবার কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী ছাড়াই ওড়িশা পুলিশ ওই অভিযান চালিয়েছিল। |
|
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত মাওবাদীদের দেহ। শনিবার মালকানগিরিতে। ছবি: এএফপি |
এ দিনের সফল পুলিশি অভিযানের পর ওড়িশা পুলিশের ডিজি প্রকাশ মিশ্র বলেছেন, “অন্য রাজ্যের মাওবাদীদের আমরা সাবধান করে দিচ্ছি। ওড়িশায় ঢুকতে গেলে তাদের এই ১৩ জনের মতোই পরিণতি হবে।” শুধু ওড়িশা কেন, সাম্প্রতিক অতীতে গোটা দেশেই পুলিশ সশস্ত্র মাওবাদীদের বিরুদ্ধে এই পর্যায়ে সাফল্য পায়নি। উল্টে, গত জুলাই মাসে ঝাড়খণ্ডের দুমকার কাঠিকুণ্ডে হামলা চালিয়ে পাকুড়ের এসপি অমরজিৎ বলিহার-সহ সাত পুলিশকর্মীকে হত্যা করে মাওবাদীরা। তবে গত বছর জুন মাসে ছত্তীসগঢ় পুলিশ ও সিআরপি যৌথ অভিযান চালিয়ে বিজাপুরের কোট্টেগুড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১৮ জন মাওবাদীকে হত্যা করে বলে দাবি করেছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেখানে নিরীহ গ্রামবাসীদের নিরস্ত্র জমায়েতের উপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছিল। তবে এ দিন ওড়িশা পুলিশ জানিয়েছে, দু’পক্ষের মধ্যে প্রবল গুলি বিনিময়ের পর ঘটনাস্থল থেকে এ কে-৪৭ রাইফেল, প্রেশার মাইন ও গ্রেনেড-সহ মাওবাদীদের বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের পরিচয় জানতে ছত্তীসগঢ় পুলিশের একটি দলও মালকানগিরি যাচ্ছে।
মালকানগিরিতে এ দিনের নিহতদের পরিচয় জানতে উৎসুক পশ্চিমবঙ্গ পুলিশও। কারণ, মালকানগিরিতে প্রশিক্ষণ নেওয়া এ রাজ্যের নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ার চার জন তরুণী সুকমায় কংগ্রেস নেতাদের উপর হামলায় অংশ নিয়েছিল বলে তদন্তকারীরা জানতে পারেন। এ দিনের পুলিশি অভিযানের নেতৃত্ব যিনি দিয়েছিলেন, মালকানগিরির সেই পুলিশ সুপার অখিলেশ্বর সিংহ অবশ্য টেলিফোনে আনন্দবাজারকে বলেন, “নিহত মাওবাদীদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের কেউ নেই বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। সকলেই মাওবাদীদের কালিনেলা স্কোয়াডের সদস্য। সংঘর্ষে এক মহিলা-সহ ওই স্কোয়াডের ১৩ জন নিহত হলেও স্কোয়াডের নেতা রাকেশ-সহ ১৭ জন পালিয়ে গিয়েছে। নিহতদের শনাক্ত করার জন্য আমরা স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তা নিচ্ছি।” |
|
নিহত ১৩ জনের দেহই পুলিশ উদ্ধার করেছে। ওড়িশার ডিজি প্রকাশ মিশ্র এ দিন বলেন, “মালকানগিরির ওই জঙ্গলে ঘাঁটি গেড়ে থাকা মাওবাদীরাই গত ২৫ মে ছত্তীসগঢ়ের সুকমার দরবা ঘাটে কংগ্রেস নেতাদের কনভয়ের উপর হামলায় জড়িত বলে সন্দেহ করছি।”
তবে ছত্তীসগঢ়ের অতিরিক্ত ডিজি (নকশাল দমন) আর কে ভিজের বক্তব্য, “নিহতদের পরিচয় পুরোপুরি জানার আগে আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না যে, তারাই সুকমায় কংগ্রেস নেতাদের কনভয়ের উপর হামলা চালিয়েছিল। তবে ছত্তীসগঢ়ের দেওয়া গোয়েন্দা-তথ্যের উপর নির্ভর করে অভিযান চালিয়েই ওড়িশা পুলিশ এ দিন মালকানগিরিতে এত বড় সাফল্য পেয়েছে। আর মালকানগিরির ওই জায়গা সুকমার ঘটনাস্থলের কাছে। সুকমার হামলায় অংশ নিতে যে মালকানগিরি থেকেও মাওবাদীরা এসেছিল, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।”
এ দিন ভোর পাঁচটা নাগাদ চিলাকোটা জঙ্গলে মাওবাদীদের ওই শিবির ঘিরে নেয় ওড়িশা পুলিশের স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ (এসওজি) ও ডিস্ট্রিক্ট ভিলেজ ফোর্স (ডিভিএফ)-এর মোট ৪০ জনের একটি দল। এসপি অখিলেশ্বর সিংহের কথায়, “শিবিরে থাকা অধিকাংশ মাওবাদীর ঘুম তখনও ভাঙেনি। শিবিরের বাইরে পাঁচ জন সেন্ট্রি ডিউটি করছিল (পাহারা দিচ্ছিল)। ওরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমরা আক্রমণ করি। এ কে ৪৭, পিস্তল ও দেশি বন্দুক থেকে গুলি ছুঁড়ে, গ্রেনেড ছুড়ে এবং ল্যান্ডমাইন ফাটিয়ে পাল্টা জবাব দেয় মাওবাদীরাও। শেষ পর্যন্ত এঁটে উঠতে পারেনি।” টানা ৩৫ মিনিট গুলির লড়াইয়ের পর রণে ভঙ্গ দেয় মাওবাদীরা। সংঘর্ষে পুলিশের কেউ জখম হননি। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ মাওবাদীদের একটি এ কে-৪৭, একটি নাইন এম এম পিস্তল, তিনটি .৩১৫ রাইফেল, ন’টি দেশি বন্দুক, একটি প্রেশার মাইন ও একটি আইইডি এবং বেশ কয়েকটি গ্রেনেড উদ্ধার করেছে। এই মালকানগিরিতেই ২০১১-র ফেব্রুয়ারিতে তদানীন্তন দেলাশাসক ভিনিল কৃষ্ণ ও এক জন ইঞ্জিনিয়ারকে অপহরণ করেছিল মাওবাদীরা। মাওবাদীদের হাতে সেই প্রথম কোনও আইএএস অফিসার অপহৃত হন। তবে সম্প্রতি মালকানগিরিতে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে পুলিশ পর পর সাফল্য পাচ্ছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর মালকানগিরিতেই তিন মহিলা-সহ ন’জন মাওবাদী অস্ত্র-সহ আত্মসমর্পণ করে। গত ২৩ অগস্ট মালকানগিরিতে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে এনকাউন্টারে মাওবাদী নেতা মাধব ওরফে গোল্লা রামুল্লু নিহত হন। |
পুরনো খবর: ছত্তীসগঢ়ে খতম সালওয়া জুড়ুমের হোতা, জখম বিদ্যাচরণ |
|
|
|
|
|