পানচাষিদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে চলেছে। রাজ্যে তৈরি হচ্ছে পানপাতার সংরক্ষণের ব্যবস্থা। প্রথম হিমঘরটি তৈরি হচ্ছে নদিয়ার করিমপুরে। উদ্যানপালন মন্ত্রী সুব্রত সাহা বলেন, “ওই এলাকা থেকে অনেক পান রফতানির হয়। কম পয়সায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে চাষিরা অনেকটাই লাভ পাবেন।”
কেন্দ্রের রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা প্রকল্পে ১ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে করিমপুর-১ ব্লকের ফুনকোতলা এলাকায় তৈরি হচ্ছে ওই হিমঘর। করিমপুর ১ বিডিও তাপস মুখোপাধ্যায় জানান, নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। পান বাছাই এবং ‘গ্রেড’ অনুযায়ী প্যাকেটবন্দি, সংরক্ষণ, বিক্রি, সব ব্যবস্থাই থাকবে। তৈরি হচ্ছে বরফকল, রোজ পাঁচ মেট্রিক টন বরফ মিলবে। হিমঘরে রাখা যাবে আড়াইশো মেট্রিক টন পান। চাষিদের জন্য শেড আর অফিসও হবে। জেলার উদ্যান পালন আধিকারিক রাহুল বারিক জানান, নদিয়ায় সব চেয়ে বেশি, এবং ভাল পান চাষ হয় করিমপুর-১ ব্লকে। গাছ থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার পর পান আর রাখা যায় না। পানের বাজারও বেশ ওঠানামা করে। “সংরক্ষণের ব্যবস্থা হলে পানচাষিরা উপকৃত হবেন,” বলেন তিনি।
রাজ্যে পান চাষ হয় হাওড়া, মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, হুগলি, বাঁকুড়া ও মুর্শিদাবাদের কিছু এলাকায়। এই সব জেলাতেই বহু দিন হিমঘরের চাহিদা রয়েছে। তবে রফতানির দিক থেকে করিমপুরের পানের ভাল কদর রয়েছে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে। বাংলাদেশের বাজারেও বিক্রি হয় এই পান। করিমপুর উদ্যান ও কৃষি কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বিশ্বনাথ বিশ্বাস বলেন, “সরকার উদ্যোগী হলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে ভাল আয় হবে।” করিমপুরের ৭০% চাষি পান চাষ করেন। প্রায় ১৫০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। তার মধ্যে ২০ শতাংশ পান নষ্ট হয়ে যায় হিমঘর বা হিমায়িত ট্রাক না থাকায়। শিকারপুর পানচাষি কল্যাণ সমিতির সম্পাদক সুবোধ বিশ্বাসের কথায়, “হিমঘরটা তৈরি হলে এলাকার পান চাষে বড় পরিবর্তন আসবে।” পান রাখতে গেলে চাষিদের কত টাকা দিতে হবে সেটা এখনও স্থির হয়নি। তবে সরকারি কর্তাদের বক্তব্য, চাষিদের যেন লাভ থাকে, সে দিকে দৃষ্টি রেখেই হার ঠিক হবে। পূর্ব মেদিনীপুরের পানচাষি রাজু মোদক বলছেন, “নদিয়াতে হিমঘর হয়ে গেল। সরকার আমাদের দাবি কবে পূরণ করে, সেটাই দেখার।” |