|
|
|
|
বিচার পেল মেয়ে, স্বস্তির নিঃশ্বাস মায়ের |
সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি |
কয়েক মুহূর্ত আগেই চার অপরাধীর মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেছেন বিচারক। সাকেত আদালতের বাইরে পা ফেলতেই নির্ভয়ার বাবা-মা-দুই ভাইকে ছেঁকে ধরলেন সাংবাদিকরা। আদালত চত্বরে তখন কান পাতা দায়। এক দিকে আম জনতার উচ্ছ্বাস, অন্য দিকে মাইক হাতে সাংবাদিকদের জটলা। থিকথিক করছে পুলিশ। জনস্রোত আটকাতে পথের এ ধারে ও ধারে ব্যারিকেডের বাঁধ।
এই সাকেতের এক মাল্টিপ্লেক্সেই গত বছর ১৬ ডিসেম্বর বন্ধুর সঙ্গে ‘লাইফ অফ পাই’ দেখতে গিয়েছিলেন নির্ভয়া। ফেরার পথে মুনিরকা থেকে বাস ধরেন। আর তার পরেই সেই ভয়াবহ অধ্যায়।
প্রৌঢ় দম্পতির চোখেমুখে আজ খানিক প্রশান্তির ছায়া। সন্তানকে ফিরে পাবেন না জানেন, তবু বিচার তো মিলেছে। গত বছর এক শীতের রাতে দিল্লির বাসে নৃশংস ভাবে ধর্ষণ করা হয়েছিল তাঁদের তেইশ বছরের মেয়েকে। ১৩ দিনের মাথায় মারা যান নির্ভয়া। আইনি লড়াইটা শুরু হয়েছিল তখনই। শেষ হল আজ। তরুণীর মা বললেন, “শেষ পর্যন্ত নিঃশ্বাস নিতে পারছি। এখন অনেকটা হালকা লাগছে। আমরা শান্তি পেলাম। মেয়ে সুবিচার পেল।”
আজই যে সাজা ঘোষণা হবে, ঠিক হয়ে গিয়েছিল পরশু। তাই গোড়া থেকেই আদালত কক্ষে হাজির ছিল নির্ভয়ার পরিবার। প্রতিপক্ষের উকিলের যুক্তি-পাল্টা যুক্তিতে সরগরম। ঘড়িতে তখন ২টো বেজে ২২ মিনিট। প্রৌঢ়া তখনও জানেন না, তাঁদের দীর্ঘ লড়াইয়ে আজ জয় মিলবে। বললেন, “আদালতের কাছে প্রার্থনা, আমাদের মেয়েটা যেন বিচার পায়।” মিনিট দশেক বাদে বিচারক যোগেশ খন্না ঘোষণা করলেন, “দেশ জুড়ে যখন মেয়েদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বাড়ছে, আদালত কিছুতেই চোখ বুজে থাকতে পারে না। সব দিক থেকেই এই মামলা বিরলের মধ্যে বিরলতম। ফাঁসিই অপরাধীদের যোগ্য শাস্তি।”
পরে নির্ভয়ার বাবা বলেন, “পথটা খুব কঠিন ছিল। সত্যিই আমাদের সুবিচার মিলেছে। বিচারে আমরা খুশি।” তাঁদের মেয়ে কিন্তু চেয়েছিল পুড়িয়ে মারা হোক অপরাধীদের। এক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সে প্রসঙ্গ উঠে আসে। তাঁরা বলেন ফাঁসি তো কয়েক মুহূর্তের ঘটনা। মেয়ে চেয়েছিল তিলতিল করে মারা হোক ওদের। তবু তাঁরা খুশি। বললেন, “এ আসলে মানুষের জয়, সংবাদমাধ্যমের জয়। ধন্যবাদ পুলিশকেও।”
নির্ভয়ার গণধর্ষণের ঘটনায় এক সময় উত্তাল হয়েছিল রাজধানী। পথে নেমেছিল বিক্ষুব্ধ জনতা। প্রতিবাদ-আন্দোলনের জেরে শেষমেশ ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে বিচার শুরু হয়। রায় ঘোষণা হল ন’মাসের মাথায়। তবু পথ চলা এখনও বাকি। প্রতিপক্ষ আইনজীবী এ পি সিংহ জানিয়ে দিয়েছেন, উচ্চতর আদালতে আবেদন জানাবেন তাঁরা। তাঁর মতে, রাজনৈতিক চাপেই আজকের এই রায়। “কী আর করা যাবে। ওরা যেখানে যেখানে যাবে, আমাদেরও ছুটতে হবে” বললেন নির্ভয়ার বাবা-মা। আবারও যেন হতাশায় ডুব দিলেন কয়েক মুহূর্তের জন্য।
দিল্লি থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে উত্তরপ্রদেশের বালিয়ায় নির্ভয়ার গ্রামের বাড়িতেও আজ জয়ের উল্লাস। জয় তাঁদের মেয়ের। বন্যাবিধ্বস্ত মেড়াওয়ার কালান গ্রাম এখনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি। তবে সে দিকে তাঁদের নজর নেই আজ। গ্রামের মানুষ সকাল থেকেই বসে পড়েছিল টিভি-র সামনে। রায় ঘোষণার পড়েই ঢাক-ঢোল বাজাতে বাজাতে পথে নেমে পড়েন। প্রদীপ জ্বালান গ্রামের মন্দিরে। মিষ্টি বিতরণ করেন বাড়িতে বাড়িতে। তবে এখনও পথ হাঁটা বাকি অনেকটা। প্রার্থনা এটুকুই, জয়ের স্বাদ যেন থাকে শেষেও।
|
পুরনো খবর: কামদুনির মাকে সাহস দিলেন নির্ভয়ার মা |
|
|
|
|
|