|
|
|
|
ভোগান্তি চরমে, দক্ষিণেশ্বর বাস টার্মিনাস যেন নরক |
শান্তনু ঘোষ |
কাদা প্যাচপেচে রাস্তা দিয়ে কোনও মতে বাসের কাছে পৌঁছলেন এক বয়স্ক ব্যক্তি। কিন্তু উঠতে গিয়েই বিপত্তি। সামনে জল জমে থাকা গর্তটি যে এত বড় তা বুঝতে পারেননি। জোরে আছাড় খেলেন। হাত-পায়ে অল্প চোট পেলেন। পোশাক কাদা মাখামাখি হয়ে গেল।
শুধু এই একটি ঘটনাই নয়, খানাখন্দে ভর্তি, কাদায় ভরা দক্ষিণেশ্বর বাস টার্মিনাসে এমনটা হামেশাই ঘটে। অভিযোগ, প্রশাসন সব কিছু জেনেও নির্বিকার। রাজ্যে পর্যটন শিল্পের বিকাশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। পর্যটনের কাজে আরও জোর দিতে বদলি করা হয়েছে পর্যটন সচিবকে। বিভিন্ন পর্যটনস্থল সাজিয়ে তুলতে চলছে পরিকল্পনা। সম্প্রতি শ্রীরামকৃষ্ণ, সারদাদেবী ও স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতি বিজড়িত জায়গাগুলিকে এক সুতোয় বাঁধতে কলকাতা থেকে হাওড়া, বেলুড়, বাগবাজার, দক্ষিণেশ্বর হয়ে আড়িয়াদহ পর্যন্ত লঞ্চ পরিষেবা চালু হয়েছে। সেখানে শ্রীরামকৃষ্ণের স্মৃতি বিজড়িত দক্ষিণেশ্বরের পাশের বাস টার্মিনাসটির এই হাল নিয়ে প্রশাসন কেন উদাসীন তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন বাসিন্দা এবং দর্শনার্থীরা।
এই অঞ্চলটি পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের বিধানসভা কেন্দ্র কামারহাটির মধ্যে পড়ে। বিষয়টি জানার পরেও তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। যদিও মদনবাবু আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী এক মাসের মধ্যেই দক্ষিণেশ্বর বাস টার্মিনাসের হাল বদলে ফেলা হবে। তিনি বলেন, “কী ভাবে ওই টার্মিনাসটি সাজানো হবে তার পরিকল্পনা হয়ে গিয়েছে।” |
|
|
দক্ষিণেশ্বর বাস টার্মিনাসের বেহাল দশার দুই চিত্র। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়। |
|
পিডব্লিউডি রোডের পাশে নিবেদিতা সেতুর নীচে প্রায় ১০ বিঘা জমির উপর রয়েছে এই টার্মিনাস। প্রতি দিন এখান থেকে ধর্মতলা, সেক্টর ফাইভ, বাবুঘাট, বারাসত, বনগাঁ, নাকতলা, পার্কসার্কাস, দত্তপুকুর সমেত মোট ১৪টি রুটের বাস ছাড়ে। এ ছাড়াও দু’টি রুটের অটো, ট্যাক্সি ও যাত্রিবাহী ভ্যান থাকে। প্রতি দিন গড়ে ১০ হাজার যাত্রী এই টার্মিনাস ব্যবহার করেন। উৎসবের দিনে তা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। পিডব্লিউডি রোডে আলমবাজারের দিক থেকে ঢোকার এবং দক্ষিণেশ্বরের দিকে বাইরে যাওয়ায় পথ রয়েছে। রয়েছে গাড়ি সারানোর গ্যারাজও।
স্থানীয় সূত্রের খবর, নিবেদিতা সেতু তৈরির সময় দক্ষিণেশ্বরের পুরনো বাস টার্মিনাসটি ভেঙে দেওয়া হয়। তখন প্রশাসন জানিয়েছিল, কাজ শেষ হলেই নতুন টার্মিনাস তৈরি করে দেওয়া হবে। কিন্তু কিছুই হয়নি। ২০১০-এ একটি দুর্ঘটনার পরেই বাসচালকেরা এক প্রকার জোর করে সেতুর নীচে বাস রাখতে শুরু করেন।
কী অবস্থায় রয়েছে টার্মিনাসটি?
দু’টি গেটের সামনে বড় বড় গর্ত। তাতে বৃষ্টির জল জমে। ফলে গর্ত কত বড় তা বোঝা যায় না। পুরো টার্মিনাসটি কাদায় ভরা। কোথাও মাটির স্তূপ। কোথাও ঝোপ। নিকাশি নালাগুলি দীর্ঘ দিন সাফ না হওয়ায় ময়লা-আবর্জনা জমে রয়েছে। এই ভোগান্তি সহ্য করেই টার্মিনাসটি ব্যবহার করছেন অসংখ্য দর্শনার্থী। উত্তর শহরতলি বাস-মিনিবাস সমন্বয় কমিটির সভাপতি গণপতি মজুমদার বলেন, “প্রতি দিনই কেউ না কেউ বাসে উঠতে-নামতে গিয়ে পড়ে চোট পাচ্ছেন। বহু বার জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় বিধায়ককে জানিয়েছি। কোনও সুরাহা হয়নি।”
রাতে অবস্থা আরও খারাপ হয় বলে যাত্রী ও বাসকর্মীদের অভিযোগ। কয়েকটি আলো টিমটিম করে জলে। নেই পানীয় জল কিংবা শৌচাগারের ব্যবস্থাও। দত্তপুকুরের বাসিন্দা স্বপন মাইতির কথায়: “দক্ষিণেশ্বরের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রের বাস টার্মিনাসের এই অবস্থা ভাবা যায় না।” ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি বলেন, “জায়গাটি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের। ওঁদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হয়েছে। সেতুর নীচে একটি জায়গা ওঁরা চিহ্নিত করেছেন। সেখানেই স্থায়ী ও পরিকাঠামোগত ভাবে উন্নত একটি বাস টার্মিনাস তৈরি করা হবে।
পুরো কাজটিই করবেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।”
যদিও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কলকাতার প্রকল্প রূপায়ণ ইউনিটের জেনারেল ম্যানেজার এস কে কুশবাহা বলেন, “একটি পরিকল্পনার রয়েছে। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।”
|
পুরনো খবর: স্থায়ী স্ট্যান্ড কবে |
|
|
|
|
|