|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা |
দক্ষিণেশ্বর |
স্থায়ী স্ট্যান্ড কবে |
কাজল গুপ্ত ও শান্তনু ঘোষ |
ডানলপ থেকে দক্ষিণেশ্বরের রাস্তা যানজট থেকে মুক্ত করতে নানা পরিকল্পনা কার্যকর হয়েছে। চালু হয়েছে নিবেদিতা সেতু। স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের কথায়, এর ফলে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রতিশ্রুতি মোতাবেক দক্ষিণেশ্বরে আজও কোনও স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড তৈরি হয়নি। ফলে ডানলপ থেকে আলমবাজার মোড়, আড়িয়াদহের রাস্তায় যানজটও কমেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিবেদিতা সেতু তৈরির সময় দক্ষিণেশ্বর বাসস্ট্যান্ড ভেঙে দেওয়া হয়। সেই সময় স্থানীয় বাসিন্দা, বাসচালক ও মালিকদের দাবি ছিল, সেতু তৈরির পরে দক্ষিণেশ্বর মোড় সংলগ্ন এলাকায় একটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস তৈরি করতে হবে। তখন প্রশাসনের তরফে আশ্বাস মিলেছিল, সেতুর কাজ শেষ হলেই বাস টার্মিনাস গড়ে তোলা হবে। কিন্তু নিবেদিতা সেতু তৈরির পরে প্রায় পাঁচ বছর কেটে গেলেও আজও বাসস্ট্যান্ড তৈরি হয়নি। বদলে নিবেদিতা সেতুর নীচে জাতীয় সড়কের জমিতে অস্থায়ী ভাবে বাসস্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। অনেক বাস আবার রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে থাকে। বাদ যায় না অটো, ট্যাক্সিও। ফলে যানজট লেগেই থাকে।
সমস্যার কথা স্বীকার করে বরাহনগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় বলেন, “দক্ষিণেশ্বর মোড়ের জন্য বিটি রোডেও যানজট হয়। সাংসদ সৌগত রায় এবং আমি ওই এলাকায় গিয়ে সকলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। নিবেদিতা সেতুর নীচে একটি বাস টার্মিনাস ও যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি।” |
|
উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতার সঙ্গে হাওড়া, হুগলি এবং ২ ও ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের (দিল্লি রোড ও মুম্বই রোড) সংযোগকারী রাস্তা পিডব্লিউডি রোড। এই রাস্তাতেই দক্ষিণেশ্বর মোড়। সেই মোড়েই নিবেদিতা সেতুর নীচে তৈরি হয়েছে বাসস্ট্যান্ড। বনগাঁ, বারাসত, পার্ক সার্কাস, কুঁদঘাট সমেত উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতার বিভিন্ন জায়গার বাস, মিনিবাস ছাড়ে ওই স্ট্যান্ড থেকেই। প্রতি দিনই এখানে দর্শনার্থী ও নিত্যযাত্রীদের সংখ্যা বেশ কয়েক হাজার। শনি, রবি ও অন্য যে কোনও ছুটির দিনে এবং দক্ষিণেশ্বর, আদ্যাপীঠে উৎসবের দিনে এই চাপ আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
বাসকর্মীদের কথায়, প্রথম দিকে রাস্তায় বাস রাখা হলেও যানজট, দুর্ঘটনা এড়াতেই কার্যত জোর করে মাস পাঁচেক আগে তাঁরা নিবেদিতা সেতুর নীচের ফাঁকা জায়গায় বাস রাখতে শুরু করেছেন। যদিও সেই বাসস্ট্যান্ডের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। বাসকর্মী ও যাত্রীদের জন্য পানীয় জল, শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। আলোও পর্যাপ্ত নয়। স্ট্যান্ড জুড়ে বড় বড় গর্ত। বর্ষায় জল-কাদায় সেখানে কেউই ঢুকতে পারেন না। বাসকর্মীদের কথায়, স্ট্যান্ডের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য পিডব্লিউডি রোডের উপরেও বাস রাখতে হয়। পাশাপাশি, অটো, ট্যাক্সিও রাস্তার ধারেই দাঁড়িয়ে থাকে। সব মিলিয়ে দক্ষিণেশ্বর মোড় ও পার্শ্ববর্তী রাস্তায় নিত্য যানজটের ছবিটা বদলায়নি। ফলে এখনও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
নিত্যযাত্রী ও দর্শনার্থীদের অভিযোগ, সেতুর নীচ থেকে বেরিয়ে বাসগুলি যাত্রী তোলার জন্য রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে পিডব্লিউডি রোড থেকে বালি, আলমবাজার ও আড়িয়াদহের রাস্তায় প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। বাসকর্মী দীনেশ সিংহ বলেন, “অনেক যাত্রীই সেতুর নীচে বাসস্ট্যান্ড আছে বলে বুঝতে পারেন না। অধিকাংশ মানুষই বাস ধরতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন। তাই বাধ্য হয়েই স্ট্যান্ড থেকে বাস বের করে রাস্তায় কিছু ক্ষণ দাঁড়াতে হয়।” |
|
দক্ষিণেশ্বর-আমতলা বাস, মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক বিনোদপ্রসাদ সিংহ বলেন, “দক্ষিণেশ্বর থেকে ১৩টি রুটের বাস ছাড়ে। এখানে প্রায় ১৮০টি বাস রয়েছে। কিন্তু রাখার জায়গা ছিল না। শেষে সেতুর নীচে রাখতে শুরু করি। সেখানেই একটি স্থায়ী স্ট্যান্ড তৈরির জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।” বনগাঁ রুটের বাস কন্ডাক্টর বিশু মজুমদারের কথায়: “জলের কল, বাথরুম না থাকায় দূরের যাত্রীরা সমস্যায় পড়েন। বেশি সমস্যা হয় মহিলা ও বাচ্চাদের। স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড তৈরি হলে আমাদেরও সুবিধা হবে।”
দমদম লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী সৌগত রায় বলেন, “নিবেদিতা সেতুর নীচে বাসস্ট্যান্ডটি অপরিকল্পিত ভাবে রয়েছে। জায়গাটি নোংরায় ভর্তি। কয়েক মাস আগে দ্বিতীয় বিবেকানন্দ সেতু টোলওয়ে সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ওখানে যৌথ ভাবে সমীক্ষা করেছিলাম। তাঁরা একটি বাসস্ট্যান্ড তৈরি করে দেবেন বলেছেন। সে ক্ষেত্রে আমরা টাকা দিতে রাজি আছি।”
দ্বিতীয় বিবেকানন্দ সেতু টোলওয়ে সংস্থার চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার লালা কৃষ্ণকিশোর রায় বলেন, “নিবেদিতা সেতুর নীচের জমিটির মালিক জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। তাঁদের সবুজ সঙ্কেত না পাওয়া পর্যন্ত আমরা ওখানে কোনও কাজ করতে পারি না।”
তিনি জানান, ওখানে যে বাসস্ট্যান্ডটি রয়েছে সেটি খুবই বিপজ্জনক। কেননা, বাস ঘোরানোর সময় কোনও ভাবে সেতুর স্তম্ভে ধাক্কা লাগলে যন্ত্রাংশের ক্ষতি হতে পারে। তখন সেতুর ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাই পরিকল্পনামাফিক একটি বাসস্ট্যান্ড তৈরি হলে বিপদের আশঙ্কা কমবে।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে কলকাতা ডিভিশনের ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “আমরা এখনও পর্যন্ত সরকার ও ওই টোলওয়ে সংস্থার তরফে কোনও লিখিত আবেদন পাইনি। পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। তার পরে বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা
করা যাবে।”
|
ছবি: রণজিৎ নন্দী |
|
|
|
|
|