৫৮৭ রেশন ডিলারকে শো-কজ পাহাড়ে
কৌশিক চৌধুরী • শিলিগুড়ি |
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার টানা বন্ধের সময়ে দার্জিলিং পাহাড়ে রেশন দোকানগুলিও বন্ধ ছিল। তাতে পাহাড়ের গণবণ্টন ব্যবস্থা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে কড়া ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে রাজ্য সরকার।
গত সোমবার পাহাড়ের তিন মহকুমার ৫৮৭ জন রেশন ডিলার, ১১ জন ডিস্ট্রিবিউটরের পাশাপাশি খাদ্য সরবরাহ দফতরের ইন্সপেক্টর থেকে করণিক পর্যন্ত ৭৬ জন অফিসার ও কর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। আজ, শনিবারের মধ্যে সকলকে শো কজের উত্তর দিতে হবে। গণবণ্টন ব্যবস্থা নিয়ে যে কোনও অসঙ্গতির অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে খাদ্য সরবরাহ দফতর নোটিসও জারি করেছে। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার সুখিয়াপোখরি থেকে নন্দকিশোর গর্গ নামে এক ডিস্ট্রিবিউটরকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “ওই ডিস্ট্রিবিউটরের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। আমরা সবই খতিয়ে দেখছি।”
বন্ধের সময়ে রেশন বিলি না করায় ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটরদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে আগেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ৩ সেপ্টেম্বর লেপচাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কালিম্পঙে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ কথা বলেছিলেন। কিন্তু তারপরেও তখন পাহাড়ের প্রায় কোনও রেশন দোকানই খোলেনি। গত সোমবার পাহাড়ে বন্ধ শিথিল হওয়ার পরে গণবণ্টন ব্যবস্থাও আবার চালু হয়।
পাহাড়ের রেশন ডিলারদের বক্তব্য, বন্ধ চলাকালীন মোর্চার নির্দেশ উপেক্ষা করে দোকান খোলা রাখা সম্ভব ছিল না। দার্জিলিং গোর্খা হিল এমআর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এনডি ভুটিয়া বলেন, “রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের উপরেই পাহাড়ে ব্যবসা নির্ভর করে। তবে যখনই বন্ধে ছাড় মিলেছে, তখনই দোকান খুলে রেশন বরাদ্দ বিলি করে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও সরকার শো কজ করেছে। আমরা উত্তর দিচ্ছি। আশা করি, সরকার মানবিক দৃষ্টিতেই সব বিচার করবে।”
বৃহস্পতিবার খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, পাহাড়ে গণবন্টন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, “শো কজের উত্তর সন্তোষজনক না হলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। সেক্ষেত্রে বরখাস্ত করা থেকে বিরাট অঙ্কের জরিমানা বা প্রয়োজনে এফআইআর করা, সবই হতে পারে।” মন্ত্রীর অভিযোগ, “পাহাড়ে গুদামে বহু সরকারি রসদ বিলি না করে রাখা হয়েছিল। সেগুলি মোর্চার হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বলেও অভিযোগ। এটা হতে দেওয়া যাবে না।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও জানান, দোকান বন্ধ রেখে অন্যত্র রসদ সরবরাহ মেনে নেওয়া হবে না।
মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি অবশ্য দাবি করেছেন, অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাঁর কথা, “রেশনের মালপত্র আমাদের কাছে কখনও আসেনি। আন্দোলনের দমনের জন্য এমন নানা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।”
তবে জঙ্গলমহলের ধাঁচে পাহাড়ের তিন মহকুমায় ৩৯টি ‘রিটেল আউটলেট’ খোলারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য দফতর। দফতর সূত্রে খবর, চলতি সপ্তাহ থেকেই ওই দোকানগুলি খোলার চেষ্টা চলছে। সেখানে চাল, আটার পাশাপাশি ডাল, তেল, নুন এবং মশলা দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে শিলিগুড়িতে ২০ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ২৪ হাজার মেট্রিক টন আটা মজুত করা হয়েছে। রেশন দোকান ছাড়াও এর আগে ১১টি জায়গা থেকে রেশন পণ্য সরবরাহ করেছে খাদ্য সরবরাহ দফতর। সমস্ত কাজ তদারকির জন্য আলাদা আঞ্চলিক অধিকর্তা পদ তৈরি করে সেখানে সম্প্রতি অফিসার নিয়োগ করাও হয়েছে। |