বেআইনি ভেড়ির ব্যবসার প্রতিবাদ করেই খুন হয়েছেন হাসনাবাদের সিপিএম নেতা জাহাঙ্গির আলম মণ্ডল মূল অভিযুক্ত-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করার পরে এমনই দাবি করল পুলিশ। যদিও সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশেই খুন করা হয়েছে জাহাঙ্গিরকে। ধৃতেরা সকলেই তৃণমূল সমর্থক। সে কথা যথারীতি অস্বীকার করেছেন শাসক দলের নেতারা। স্থানীয় মানুষের একাংশের বক্তব্য, ধৃতেরা সকলে নেহাতই চুনোপুঁটি। খুনের পিছনে একাধিক বড় মাথা আছে। তা খতিয়ে দেখুক পুলিশ।
গত সোমবার রাতে হাসনাবাদ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা সিপিএম নেতা জাহাঙ্গিরকে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। যা নিয়ে শোরগোল শুরু হয় রাজ্য রাজনীতিতে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবেই খুন করা হয়েছে এলাকার জনপ্রিয় সিপিএম নেতাকে, এমন অভিযোগ তুলে সরব হন সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব। তৃণমূলের বিরুদ্ধে লাগাতার সন্ত্রাস, খুন-জখমের অভিযোগ তুলে লোকসভা ভোটের আগে সিপিএমও যে কড়া পদক্ষেপ করবে, সেই ইঙ্গিত দেন বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা। ঘটনার কথা সরাসরি উল্লেখ না করলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারাসতের জনসভায় এসে ঘটনাটিকে সিপিএমের অন্তর্দ্বন্দ্ব বলে ব্যাখ্যা করেন। জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এ দিন বলেন, “মেছোভেড়ির লেনদেন নিয়ে বিবাদের জেরেই খুন, পুলিশি তদন্তে তা স্পষ্ট হয়েছে। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।” |
জাহাঙ্গিরকে খুনের ঘটনায় বুধবার রাতে মনিরুল শেখ, মান্নান গাজি ও কওসর গাজিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মূল অভিযুক্ত মনিরুলের ভেড়ির ব্যবসা। পুলিশের দাবি, জেরায় খুনের কথা স্বীকারও করেছে সে। মনিরুল-সহ বাকিদের বিরুদ্ধে গরু পাচার, ডাকাতি-সহ নানা অসামাজিক কাজের অভিযোগ আছে পুলিশের খাতায়। বৃহস্পতিবার বসিরহাট আদালতে তোলা হলে ধৃতদের ৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “নদী থেকে খাল কেটে তিনশো বিঘা জমিতে মেছোভেড়ি করেছিল
মনিরুল। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাকে এই ব্যবসা বন্ধ করতে বলেছিলেন। তারই জেরে খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।”
সে কথা অবশ্য মানতে নারাজ সিপিএম নেতৃত্ব। দলের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, “কৃষিজীবী মানুষের সমস্যার কথা ভেবে বরাবর বেআইনি মেছোভেড়ির বিরোধিতা করেছেন জাহাঙ্গির। কিন্তু বিরোধীরা সে কথায় কর্ণপাত না করে ব্যবসা বাড়িয়েই চলেছিল। ধৃতেরা তৃণমূল আশ্রিত, সে কথা এলাকায় সকলেই জানে। এটি অবশ্যই রাজনৈতিক খুনের ঘটনা।” জ্যোতিপ্রিয়বাবুর দাবি, সিপিএম ঘটনাটি নিয়ে নোংরা রাজনীতি করছে।
|