বারাসতের কামদুনিতে কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ করে খুনের মামলার দ্রুত বিচার এবং দোষীদের চরম শাস্তি চেয়ে শুধু রাস্তায় নয়, আদালত-চত্বরেও বিক্ষোভ চলছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা জেলা ও দায়রা আদালত (বিচার ভবন) এবং তার লাগোয়া এলাকায় মিছিল, সমাবেশ, এমনকী স্লোগান দেওয়ার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক (বেঞ্চ-২) সঞ্চিতা সরকার বৃহস্পতিবার এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে তা বলবৎ করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
কামদুনির ঘটনাটি ৭ জুনের। শুরুতে সেই মামলা চলছিল বারাসত আদালতে। সেখানেও শুনানির দিনগুলিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন ধর্ষিতা ও নিহতের পরিবার-সহ কামদুনিবাসী। ওই আদালতে তারা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে বলে অভিযুক্তদের তরফে অভিযোগ জানানো হয়। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মামলাটি সরিয়ে দেওয়া হয় কলকাতার আদালতে। মামলাটি বারাসতে ফিরিয়ে আনার আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন কামদুনির বাসিন্দারা। শীর্ষ আদালত তাঁদের আবেদন খারিজ করে জানিয়ে দেয়, কলকাতার আদালতেই ওই ধর্ষণ-খুনের মামলার বিচার হবে।
১০ সেপ্টেম্বর, কামদুনি মামলার চার্জ গঠনের দিনেও কলকাতার ওই আদালত-চত্বরে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন সেখানকার বাসিন্দাদের একাংশ। ধর্ষণ ও খুনের ওই ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবিতে এবং নারীদের উপরে নির্যাতনের প্রতিবাদে জোরালো স্লোগানও দিচ্ছিলেন তাঁরা। শুধু ওই দিন নয়, হাইকোর্টের নির্দেশে যে-দিন বিচার ভবনে কামদুনি মামলার বিচার শুরু হয়েছে, তখন থেকেই ওই আদালত-চত্বরে এই ধরনের বিক্ষোভ, আন্দোলন চলছে। এই অবস্থায় চার্জ গঠনের আগের মুহূর্তে অভিযুক্তদের আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি ও সঞ্জীব দাঁ বিচারকের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, এই ধরনের বিক্ষোভ ও স্লোগান অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার।
বিক্ষোভ-আন্দোলন কেন বন্ধ হওয়া দরকার, তার ব্যাখ্যাও দেন ওই দুই আইনজীবী। তাঁরা জানান, বারাসত আদালতে এই মামলার বিচার চলাকালীন অভিযুক্তদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে একই ভাবে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। মূলত সেই কারণেই মামলাটি বারাসত আদালত থেকে অন্যত্র সরানোর আবেদন জানিয়ে তাঁরা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। বিচারককে জানানো হয়, আদালত চত্বরে যে-ভাবে অনেক লোক জড়ো হয়ে তীব্র চিৎকার করছেন, তাতে বিচার প্রক্রিয়া ভন্ডুল হতে বসেছে। সরকার বা অভিযুক্ত, কোনও পক্ষই শুনানিতে যোগ দিতে পারছেন না। বিচারকও কিছু শুনতে পাচ্ছেন না। সেই জন্যই আদালত-চত্বরে অবস্থান-বিক্ষোভ, স্লোগান বন্ধ হওয়া জরুরি বলে সওয়াল করেন দুই আইনজীবী।
এই মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী দীপকরঞ্জন সরকার এবং অনিন্দ্য রাউতও সে-দিন অভিযুক্তদের আইনজীবীদের আবেদনের বিরোধিতা করেননি। বিচারক সঞ্চিতা সরকার অভিযুক্তদের আইনজীবীদের আবেদন মঞ্জুর করেন। তিনি হেয়ার স্ট্রিট থানার ওসি-কে নির্দেশ দিয়েছেন, ১৮ সেপ্টেম্বর, কামদুনি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন থেকে কলকাতা জেলা ও দায়রা আদালত (বিচার ভবন) চত্বরে বিক্ষোভ, মিছিল, সমাবেশ, স্লোগান যাতে বন্ধ হয়, পুলিশকে তা নিশ্চিত করতে হবে। বিচারকের এই নির্দেশের একটি প্রতিলিপিও পাঠানো হয়েছে ওই ওসি-র কাছে।
|