দুই থেকে তিন হয়েছিল। এ বার তিন থেকে ছয়।
আগের দিন এক সাক্ষী জানিয়ে যান, খুনের সময়ে প্রদীপ সাহা এবং লোকনাথ দেবনাথ ছাড়াও হেলমেট পরা আরও এক জনকে তিনি ঘটনাস্থলে দেখেছিলেন। বৃহস্পতিবার পূর্বস্থলীর তৃণমূল নেতা ফজলুল হক মণ্ডল সাক্ষ্য দিতে এসে বললেন, অন্য মোটরবাইকে আরও তিন জন ছিল। এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের শেষ দিনে চিহ্নিত করে গেলেন অভিযুক্ত সোহরাবউদ্দিন, সইফুদ্দিন ও হানিফ মণ্ডলকে। সিপিএম সমর্থক বলে পরিচিত তিন জন একই পরিবারের। বাড়ি পূর্বস্থলীর রামকৃষ্ণপল্লিতে।
নবদ্বীপ আদালতে সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই সাক্ষ্যদান পর্বে এর আগে কোনও প্রত্যক্ষদর্শীই অন্য মোটরবাইক বা তার আরোহীদের কথা বলেননি। জামিনে ছাড়া থাকা ওই তিন অভিযুক্তকে চিনতেও পারেননি কেউ। এর মধ্যে রয়েছেন পূর্বস্থলীর ব্যবসায়ী গৌতম নাথও, ঘটনার রাতে যাঁর সঙ্গে ফজলুল নবদ্বীপ হাসপাতালে গিয়েছিলেন। বুধবার গৌতম তাঁর সাক্ষ্যে হেলমেট পরা তৃতীয় জনের কথা বলেন। আর কারও কথা তিনি বলেননি। কিন্তু হাসপাতাল ভবনের সামনে গৌতমের সঙ্গেই দাঁড়িয়ে থাকা ফজলুল জানিয়ে গেলেন, গুলি খেয়ে সজল ঘোষ লুটিয়ে পড়ার পরে দু’টি মোটরবাইকে তিনি ছ’জনকে পালাতে দেখেছেন।
গত বছর ৯ জানুয়ারি দুপুরে বর্ধমানের পূর্বস্থলী কলেজে মনোনয়ন জমা নিয়ে সংঘর্ষে টিএমসিপি-র দু’জন এবং এসএফআইয়ের এক ছাত্র জখম হন। তাঁদের নদিয়ার নবদ্বীপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ফজলুল জানান, টিএমসিপি সমর্থক ছাত্রদের দেখতে রাত সাড়ে দশটার পরে তিনি মোটরবাইকে হাসপাতালে আসেন। সঙ্গে ছিলেন গৌতম নাথ। দোতলার মেল ওয়ার্ডে দু’জনকে দেখে তাঁরা নীচে নেমে ভবনের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। সে সময়ে পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়, দলের নেতা পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায়, কাজল শেখ ও গৌতম ভট্টাচার্য হাসপাতালে আসেন। তপনবাবু তাঁদের দাঁড়াতে বলে উপরে উঠে যান। খানিক পরে পঙ্কজবাবু, কাজল শেখ ও গৌতম ভট্টাচার্য নেমে এসে তাঁদের সঙ্গে গল্প শুরু করেন। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে সজল ঘোষ নেমে তাঁদের পাশ কাটিয়ে সামনের রাস্তা দিয়ে দশ-পনেরো হাত এগিয়ে যান।
অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি বিকাশকুমার মুখোপাধ্যায় জানতে চান, “তার পর?”
ফজলুল বলেন, “ইতিমধ্যে দু’টো মোটরবাইক হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে পড়েছিল। একটায় প্রদীপ সাহা, লোকনাথ দেবনাথ আর লাল হেলমেট পরা এক জন ছিল। অন্যটায় ছিল সোহরাবউদ্দিন, সইফুদ্দিন ও হানিফ মণ্ডল। ‘একে না সরালে পূর্বস্থলী কলেজে ভোট করা যাবে না’ বলেই সজল ঘোষকে জাপটে ধরেন প্রদীপ সাহা। চাদরের ভিতর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে সজলবাবুর বুকে ঠেকিয়ে গুলি করে লোকনাথ। আমরা হতবাক। তারই মধ্যে দু’টো মোটরবাইকে চেপে ছ’জন পালিয়ে যায়।” কৌঁসুলি প্রশ্ন করেন, ঘটনাস্থল থেকে কত দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন? ফজলুল বলেন, “হাত দশ-পনেরো।” সব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল? “হ্যা।”ঁ কৌঁসুলি জানতে চান, যারা খুন করেছিল তাদের কেউ এজলাসে আছেন কি? ফজলুল দেখিয়ে দেন, “প্রদীপ সাহা, সোহরাবউদ্দিন, সইফুদ্দিন ও হানিফ মণ্ডল রয়েছেন।”
এর পরে কাঠগড়ায় উঠে পূর্বস্থলী পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল প্রধান কাজল শেখ কিন্তু ছ’জন নয়, গৌতমের মতো তিন জনের কথাই বলেছেন। তাঁর কথা অনুযায়ী, গুলি চলার সময়ে তিনি পিছন ফিরে দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ গুলির শব্দে চমকে ফিরে দেখেন, সজল ঘোষকে ধরে আছেন প্রদীপ সাহা। সামনে দাঁড়িয়ে লোকনাথ। সবাই ছুটে যেতেই তারা পালিয়ে যায়। এজলাসে হাজির প্রদীপ সাহা ও সন্তু ভৌমিককে চিহ্নিতও করেন তিনি। লুটিয়ে পড়া সজলবাবুকে তুলে হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে যাওয়ার পরে যে দুই চিকিৎসক তাঁরে ‘মৃত’ ঘোষণা করেন, এর পরে তাঁদের সাক্ষ্য হওয়ার কথা। তবে তার দিন এখনও স্থির হয়নি। |