বছরখানেক আগে বন্ধ্যাকরণ হয়েছিল তাঁর। কিন্তু অঘটনটা ঘটে গিয়েছিল মাস দুয়েক আগে, আচমকাই। এক সন্ধ্যায় সর্প দংশনে মারা যায় তাঁর এক মাত্র ছেলে।
বছর তেইশের আজমিনা খাতুনের উপরে অত্যাচারটা শুরু হয়েছিল তারপরেই। অজ্ঞ স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ির ধারণা হয়েছিল বন্ধ্যাকরণের ফলে আর কখনও ‘মা’ হতে পারবেন না ওই তরুণী। তার জেরেই ওই মহিলার উপরে নিত্য নির্যাতন চালাতেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এমনই অভিযোগ করেছেন আজমিনার বাবা কানুদ্দিন শেখ।
৩১ অগস্ট মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে খবর পাঠানো হয়, আজমিনা নিখোঁজ। কানুদ্দিন বলেন, “জামাইয়ের কথাবার্তায় সন্দেহ হয়েছিল তখনই। দু’দিন অপেক্ষা করে থানায় গিয়ে তাই মেয়েকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছিলাম।” নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানা আজমিনার স্বামী ওয়াজ শেখ ও শ্বশুর আলাই শেখকে জেরা করতেই তারা ভেঙে পড়ে। আজমিনার শাশুড়ি আইতন বিবি কবুল করেন, বৌকে খুন করে তারা পুঁতে দিয়েছে গোয়ালঘরে। ওয়াজ ও তার বাবা-মাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালেই বাদবিল্ব গ্রামে গিয়ে ওই গোয়ালঘর খোঁড়ে পুলিশ। তবে সেখানে আজমিনার কিছু পোশাকের হদিস মিললেও দেহ মেলেনি। পুলিশ ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলা রুজু করেছে। আদালতের নির্দেশে অভিযুক্তেরা পুলিশ হেফাজতে।
নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমন মিশ্র বলেন, “ওই মহিলার স্বামী খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছে। তার কথামতো মাটি খুঁড়েও দেহটি অবশ্য মেলেনি। আমাদের অনুমান, বাড়ির লোকেরাই মহিলার মৃতদেহটি অন্য কোথাও সরিয়ে দিয়েছে।”
কানুদ্দিন বলেন, “বন্ধ্যাকরণ করা নিয়ে জামাইয়ের আপত্তি ছিল। কিন্তু মেয়ে জোর করেই হাসপাতালে গিয়ে তা করিয়েছিল। তারপর থেকেই মেয়ের উপরে অত্যাচার শুরু হয়।” আজমিনার পুত্র মারা যাওয়ার পরে সেই অত্যচারের মাত্রা বাড়তে থাকে। গ্রামে প্রতিবেশী আল্লারাখা শেখ বলেন, “মেয়েটা শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে এক দিন আমার কাছে এসেছিল। আমি তাকে পুলিশের কাছে নিয়ে যাবও বলেছিলাম। কিন্তু তার আগেই হঠাৎ এক দিন মেয়েটা নিখোঁজ হয়ে গেল। সে দিন আমারও সন্দেহ হয়েছিল।” সন্দেহটা গ্রামের অনেকেরই হয়েছিল। কিন্তু কেউ কেন পুলিশের কাছে সে কথা বলেননি? কানুদ্দিনের আফসোস সেটাই। |