ইডেনের গ্যালারিতে ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষের ঢল।
মাঠে দু’দল, ভারত ও পাকিস্তান।
সচিন তেন্ডুলকরের বিদায়ী টেস্ট।
আপনি যদি কলকাতাবাসী হন এবং চোখ বন্ধ করে মনের পর্দায় দৃশ্যটা দেখার চেষ্টা করেন, তা হলে নিশ্চয়ই আপনার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে!
এই দৃশ্য কল্পনা করে তাঁর শরীরেও এমন শিহরণ জাগে, জানালেন ওয়াসিম আক্রম।
ক্রিকেটের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফয়জলাবাদ উলভস-কে ভারত সরকারের লাল সঙ্কেত দেখানোর পর দিন ওয়াসিম আক্রমের এমন কল্পনা অলীক স্বপ্ন মনে হলেও, তাঁর ধারণা, সচিন তেন্ডুলকরকে বিদায় দেওয়ার এর চেয়ে ভাল আবহ আর হতেই পারে না।
“কেন হবে না বলতে পারেন?”, বৃহস্পতিবার আনন্দবাজারকে বললেন পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক। অদ্ভুত ভাবে তাঁকে বেশ আশাবাদী মনে হল। বলে চললেন, “ইডেনে ভারত-পাক টেস্ট। গ্রেট মাস্টারকে বিদায় জানানোর জন্য এর চেয়ে ভাল মঞ্চ আর হতেই পারে না। এমনটা হলে আমি তো ওখানে যাবই। আমার অন্যতম প্রিয় বন্ধু সৌরভও নিশ্চয়ই থাকবে। আমরা দু’জনে একসঙ্গে কমেন্ট্রি করব। জমে যাবে।”
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের শহরের প্রেমে তাঁর এত মজে থাকার যে যথেষ্ট কারণ আছে, তা বোঝা গেল পরের কথাগুলোতে। বললেন, “কলকাতার মতো খেলাপাগল শহর আর আছে না কি? ক্রিকেট, ফুটবল সবেতেই কলকাতা একেবারে পাগল। আমি বহু বার ওখানে গিয়েছি। এত ভালবাসা সম্মান পেয়েছি যে, কোনও দিন ভুলতে পারব না। ওখানে গিয়ে মনে হয় না, করাচি বা লাহৌরের বাইরে আছি। নিজের শহর বলেই মনে হয়। কলকাতা নাইট রাইডার্স যে বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হল, সে বার ওরা আমাকে এই সাফল্যের জন্য কম কৃতিত্ব দেয়নি। ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়েছিল। এত সম্মান, ভালবাসা ভোলা যায়?”
কিন্তু ফয়সলাবাদ দলের ভারতে আসা নিয়ে যা হল, তার পরও অদূর ভবিষ্যতে ভারত-পাক টেস্ট কী করে সম্ভব? আক্রমের ব্যাখ্যা, “যদি ভারতের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর বাতিল হয়, তা হলে তো ভারতের পক্ষে পাকিস্তান দলকে আমন্ত্রণ জানানো সম্ভব। সচিনকে স্মরণীয় বিদায় সংবধর্র্না জানানোর জন্য অন্তত তা করুক বিসিসিআই।” চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের খেলোয়াড়কেও যে এত সম্মান দেওয়া যায়, তা আক্রমের সঙ্গে কথা না বললে উপলব্ধিই করা যেত না। যাঁর টেস্ট অভিষেকে বিপক্ষে তিনি নিজেই ছিলেন, সেই সচিন তেন্ডুলকর সম্পর্কে নির্দ্বিধায় আক্রম বললেন, “সচিনই সেরা। স্যর ডন ব্র্যাডম্যানের টেস্ট গড় (৯৯.৯৪) ছাড়া অন্য সব নজিরের মালিক তো সচিনই। আমাকে যদি শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় বাছাই করতে বলে কেউ, তা হলে সচিন ছাড়া আর কারও কথা ভাববই না। শুধু সেরা ব্যাটসম্যান নয়, মানুষ সচিন তেন্ডুলকরও একজন রোল মডেল। মাঠে ও মাঠের বাইরে ওর আচার-ব্যবহার-কথাবার্তা, সতীর্থ তরুণ ক্রিকেটারদের সাহায্য করার উৎসাহ এ সব অন্য ক্রিকেটারদের কাছে সব সময়ই অনুসরণ করার বিষয়। আগামী প্রজন্মগুলির কাছে সচিন চিরকাল আদর্শ হয়ে থাকবে।”
কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই একই কথা মনের মধ্যে আসছিল। এই পরিস্থিতে বছরের শেষে ক্রিকেট মাঠে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হওয়া কী করে সম্ভব? ব্যাপারটা নিয়ে বেশ বিরক্ত আক্রম বললেন, “যদিও কঠিন, তবু বলব, খেলা আর রাজনীতিকে একদম আলাদা করে দেওয়া উচিত। ক্রিকেটই দুই দেশের শত্রুতা মিটিয়ে দিতে পারে। আগেও তো এমন হয়েছে। ১৯৯৯-এ প্রচুর হুমকি সত্ত্বেও আমরা ভারতে গিয়েছিলাম এবং দারুণ অভ্যর্থনা পেয়েছিলাম। সেই সিরিজের সব ক’টা টেস্টই চিরস্মরণীয়। শেষেরটা হয়েছিল কলকাতায় এবং ওটাই সেরা। ওখানকার মানুষগুলোর মতোই দারুণ কলকাতার মিষ্টি। ভারত-পাক টেস্ট যেখানেই হোক, আমি আছি।”
|