বামফ্রন্টই প্রধান শত্রু। তাই উত্তর দিনাজপুরে জেলা পরিষদের সভাধিপতি নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাল তৃণমূল। তবে তাতেও শেষরক্ষা হলো না। ২৬ আসনের জেলা পরিষদে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস-তৃণমূল জোট দু’পক্ষের সঙ্গেই ছিল ১৩টি করে ভোট। তাই শেষ পর্যন্ত লটারি হয়। তাতে জিতে জেলা পরিষদ দখল করল বামফ্রন্ট। সভাধিপতি হলেন সিপিএমের লাডলি চৌধুরী। অঙ্কের হিসেবে জেলা পরিষদের স্থায়ী সমিতিগুলি থাকবে বামেদেরই হাতে।
তৃণমূলের অন্দরের খবর, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিয়েছিলেন, কোনও অবস্থাতেই সিপিএমের সুবিধা করে দেওয়া যাবে না। ফলে কংগ্রেস নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে যতই বিরোধ থাক, সিপিএমের ক্ষমতা দখল ঠেকাতে প্রয়োজনে তাঁদের সমর্থন জোগাতে হবে। উত্তর দিনাজপুর জেলা নেতৃত্বের কাছেও পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল সেই বার্তা। জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য এ দিন বলেন, “বামেদের ঠেকাতেই আঞ্চলিক স্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে জেলা পরিষদ গঠনের চেষ্টা করা হয়েছিল।” তবে একই সঙ্গে তিনি জানান, তবে রাজ্য রাজনীতির ক্ষেত্রে কংগ্রেসের বিরোধিতা করার রাস্তা থেকে সরে আসছে না তৃণমূল। |
এই জেলায় এইমস ধাঁচের হাসপাতাল গড়া নিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূলের বিরোধ বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। তার পরেও জেলা কংগ্রেসই বা কেন তৃণমূলের সঙ্গে জোট করার ঝুঁকি নিল? কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সির বক্তব্য, “তৃণমূল যদি আমাদের ভোট দেয়, তা হলে আমাদের কী করার আছে?” তিনি বলেন, “আমাদের সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, বাম বিরোধী হিসাবেই আমরা সভাধিপতি এবং সহ সভাধিপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। তৃণমূলও প্রথমে সভাধিপতি এবং সহ সভাধিপতি পদে লড়বে বলে ঘোষণা করে। কিন্তু এ দিন তারা ওই দুই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না-করে কংগ্রেসকে সমর্থন জানায়।” বালুরঘাটে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায় অবশ্য বলেন, “কোন পরিস্থিতিতে কী হয়েছে, তা খতিয়ে দেখব।”
কংগ্রেস ও তৃণমূল অবশ্য লটারি প্রক্রিয়া নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলেছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক তথা ওই নির্বাচনের প্রিসাইডিং অফিসার তুষারকান্তি বিশ্বাস সেই অভিযোগ খারিজ করে জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী লটারি করা হয়েছে। জেলা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক বীরেশ্বর লাহিড়ি বলেন, “ক্ষমতার লোভে গোপনে জোট করেও বোর্ড গঠন করতে ব্যর্থ হওয়ায় কংগ্রেস ও তৃণমূলের নেতারা জাত, মান ও কুল সবই খুইয়েছেন। মুখ বাঁচাতে নানা গল্প ফাঁদা হচ্ছে।”
কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচনেও তাঁদেরই আধিপত্য থাকবে বলে বাম নেতাদের দাবি। মোট ১০টি স্থায়ী সমিতিও দখলে রাখতে পারবেন বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। কারণ, স্থায়ী সমিতির ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিধায়ক ও সাংসদেরাও ভোট দিতে পারেন। বামফ্রন্টের ক্ষেত্রে তাই মোট ভোট দাঁড়াচ্ছে ২৩টি। তার মধ্যে জেলা পরিষদের সদস্য ১৩ জন, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ৬ জন, ৩ জন বিধায়ক এবং বালুরঘাটের আরএসপি সাংসদ প্রশান্ত মজুমদার। তাঁর সাংসদ এলাকার মধ্যে এই জেলারও কিছুটা অংশ থাকায় তিনি ভোটদানে অধিকারী। কংগ্রেসের ক্ষেত্রে ভোটের সংখ্যাটা মাত্র ১৩ (জেলা পরিষদ সদস্য ৮, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ২ জন এবং ৩ জন বিধায়ক)। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ায় রায়গঞ্জ লোকসভা আসন থেকে জয়ী দীপা ভোট দিতে পারবেন না। তৃণমূলের ক্ষেত্রে স্থায়ী সমিতিতে মোট ভোট ৮ (জেলা পরিষদ সদস্য ৫, পঞ্চায়েত সমিতি ১, বিধায়ক ২)। তৃণমূলেরও ইসলামপুরের বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরি মন্ত্রী হওয়ায় ভোট দিতে পারবেন না।
|