উত্তর দিনাজপুরে বিরোধী আসনেই বসতে চায় কংগ্রেস। জলপাইগুড়ির পরে তাই উত্তরবঙ্গের আরও একটি জেলা পরিষদ আসতে চলেছে বামফ্রন্টের দখলে। কিন্তু মালদহে তৃণমূল না বাম, কার সহায়তা নিয়ে জেলা পরিষদ গড়া হবে, সেই ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কংগ্রেস। ফলে, মালদহের ত্রিশঙ্কু জেলা পরিষদের জট বুধবার পর্যন্ত কাটেনি।
উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদে ২৬টির মধ্যে বামফ্রন্ট পেয়েছে ১৩টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছে ৮টি এবং বাকি পাঁচটি তৃণমূল। পরিস্থিতি বিবেচনা করে এক দিকে কংগ্রেস ও তৃণমূল, দু’দলই বিরোধী আসনে থাকার কথা জানিয়ে দিয়েছে। তেমনই অন্য দিকে সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা জেলা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বীরেশ্বর লাহিড়ী দাবি করেছেন, তাঁরাই জেলা পরিষদ গড়বেন। বীরেশ্বরবাবুর বক্তব্য, “জেলার বেশির ভাগ গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদও দীর্ঘ দিন কংগ্রেসের দখলে ছিল। গ্রামীণ এলাকায় অনুন্নয়ন ও কংগ্রেস-তৃণমূলের দুর্নীতির প্রতিবাদে মানুষ আমাদের সমর্থন করেছেন। আমরাই জেলা পরিষদ গঠন করব।”
জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত বলেছেন, “কংগ্রেস দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে এবং গঠনমূলক কাজে সহযোগিতা করবে।” জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা ইটাহারের বিধায়ক অমল আচার্যেরও বক্তব্য, “আমরাও দায়িত্বশীল বিরোধীর ভূমিকা পালন করতে চাই।” এ নিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার দীপা দাশমুন্সির সঙ্গে প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের বৈঠক হওয়ার কথা।
তবে অনিশ্চয়তা কাটেনি মালদহে। তৃণমূল না বামফ্রন্ট কার সাহায্য নেওয়া হবে, তা নিয়ে এ দিন দুপুর ১২টা থেকে চার ঘণ্টা দলের জেলা দফতরে বৈঠকেও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি কংগ্রেস। দলীয় সূত্রের খবর, কাদের সমর্থন নেওয়া হবে, তা নিয়ে বৈঠকে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি মত দেন, তৃণমূল এবং সিপিএম, দু’পক্ষই শত্রু। তবে তৃণমূলের থেকে সিপিএম ভদ্র! যদিও শেষ পর্যন্ত কার সাহায্য নেওয়া হবে, তা জেলা কংগ্রেস সভাপতি ঠিক করবেন। সুজাপুরের কংগ্রেস বিধায়ক আবু নাসের (লেবু) খান চৌধুরী জানান, এর আগে জেলা পরিষদ চালাতে সিপিএমের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। তৃণমূল নেতারা কংগ্রেস ভাঙানোর চেষ্টা করছেন। কংগ্রেসকে শেষ করার চেষ্টা হচ্ছে। এ সব ভেবেই এগোতে হবে। এই অবস্থা চলায় বৈঠক বন্ধ করে দেন জেলা সভাপতি আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী। পরে ডালুবাবু বলেন, “কার সাহায্য নেব, ঠিক হয়নি। দলে দু’রকম মত উঠে আসায় প্রদেশ সভাপতি ফের বৈঠক করতে বলেছেন।” দু’-এক দিনের মধ্যে ফের বৈঠক হবে বলে তিনি জানান। তার পরেই প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা।
মালদহে এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও কোনও মতামত দেননি জেলার আর এক কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নূর। পরে তিনি বলেন, “জেলা কংগ্রেস বা প্রদেশ কংগ্রেস যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই মানব।” প্রসঙ্গত, এ বার ৩৮ আসন বিশিষ্ট জেলা পরিষদে কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট ১৬টি করে আসন পেয়েছে। তৃণমূল পেয়েছে ৬টি আসন। তবে মালদহ ও উত্তর দিনাজপুর, দুই ত্রিশঙ্কু জেলায় যে দলই জেলা পরিষদ গড়ুক, স্থায়ী কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া জটিল হতে চলেছে। |