সংগঠনে রদবদলের ভাবনা
মমতাকে বিঁধতে কারাটদের হাতিয়ার মীরা
ত দিন ছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এ বার সরাসরি মীরা পাণ্ডে!
পশ্চিমবঙ্গে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংসের দায়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দল তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলতে চেয়ে সিপিএমের নথিতে উঠে এল রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরার নাম! পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে এ রাজ্যে গণতন্ত্রের উপরে কী ভাবে আক্রমণ হয়েছে, তার সবিস্তার বিবরণ নিয়ে গোটা দেশে প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। প্রচারের উপকরণ হিসাবেই দলের কেন্দ্রীয় কমিটি যে পুস্তিকার খসড়া তৈরি করে প্রতিটি রাজ্য কমিটির কাছে পাঠিয়েছে, সেখানেই এ বার স্থান পেয়েছে মীরার কথা। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে শাসক দলের একের পর এক নেতা-মন্ত্রী নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন, এই অভিযোগ ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন কারাটেরা। এবং তা করতে গিয়েই ওই পুস্তিকায় তাঁরা দেখিয়েছেন, মীরার মতো এক জন বর্ষীয়ান মহিলা আইএএস কী ভাবে শাসক পক্ষের অন্যায্য আক্রমণের শিকার।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু-সহ সিপিএমের নানা স্তরের নেতারা পঞ্চায়েতের প্রচার-পর্বে কমিশনের উপরে তৃণমূলের আক্রমণের প্রসঙ্গে সরব ছিলেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনার মীরার নাম তাঁরা কেউ করেননি। এক ধাপ এগিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি সেই কাজ করায় দলেরই একাংশ ঈষৎ পুলকিত! মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা লাগাতার অভিযোগ করেছেন, সিপিএমই মীরাকে পদে বসিয়েছিল নিজেদের সুবিধার জন্য। তাদের এই পুস্তিকা প্রকাশ্যে এলে শাসক দল যে ফের দ্বিগুণ উৎসাহে কটাক্ষে নামবে, ধরেই নিচ্ছেন দলের কেউ কেউ! তবে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের ব্যাখ্যা, “যা যা ঘটেছে, তার ধারাবাহিক বর্ণনা ওই পুস্তিকায় রাখা হয়েছে। সেই সূত্রে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের নামও এসেছে। এর মধ্যে অন্য কিছু খোঁজার তো কিছু নেই!”
‘গণতন্ত্র বাঁচাও সন্ত্রাস ও হিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে’ শীর্ষক ওই পুস্তিকায় বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা বিবেচনা করেই সিনিয়র মহিলা অফিসার মীরা পাণ্ডের নেতৃত্বাধীন রাজ্য নির্বাচন কমিশন পাঁচ দফায় ভোট চেয়েছিল। যাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা যায়।’ এই সূত্রেই বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, রমজানে ভোট করার জন্য রীতিমতো ‘সাম্প্রদায়িক কায়দা’য় মীরাকে দোষারোপ-সহ আরও কী কী আক্রমণ শাসক দল করেছে। মুখ্যমন্ত্রী তো বটেই, মুকুল রায়, মদন মিত্র, শুভেন্দু অধিকারীদের উদ্ধৃতিও সেখানে রাখা হয়েছে। যা শুনে তৃণমূলের এক রাজ্য নেতা কটাক্ষ করছেন, “ভালই তো! নিজেদের দোস্তি ওঁরা নিজেরাই তুলে ধরছেন!”
বামফ্রন্টের একাংশ অবশ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিশেষ হইচই করার পক্ষপাতী নয়। বিশেষত, গণনার সময় কারচুপির অভিযোগ সত্ত্বেও সাড়া না মেলায় তাদের ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে কমিশনের উপর। ওই পুস্তিকার খসড়া অবশ্য ফল বেরোনোর আগেই তৈরি হয়েছে।
শাসক দলের সন্ত্রাস নিয়ে সর্বত্র এই প্রচারাভিযানের মধ্যেও সিপিএমের মধ্যে কিছু প্রশ্ন অবশ্য উঠছে। দলের একাংশের বক্তব্য, সন্ত্রাস নিয়ে হইচই করতে গিয়ে নিজেদের সাংগঠনিক ত্রুটি যেন আড়ালে চলে না যায়। কিছু জায়গায় সন্ত্রাসের দাপট তেমন না থাকা সত্ত্বেও ফল কেন খারাপ হল, তার জন্য সাংগঠনিক ময়না-তদন্তে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছে একাংশ। যেখানে যেখানে অতীতে দাদাগিরির অভিযোগ ছিল দলের নেতাদের বিরুদ্ধে, সেখানেই এখন মুখ থুবড়ে পড়তে হচ্ছে বলে ওই অংশের অভিমত। বিশেষত, দলের মধ্যেই দাবি উঠেছে বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুরে জেলা নেতৃত্বে রদবদলের। রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “বর্ধমানে তা-ও সন্ত্রাস চোখের উপরে দেখা গিয়েছে। তবু সেখানে যতটুকু সংগঠন ছিল, সেটা কাজ করল কোথায়? আর পশ্চিম মেদিনীপুর তো ভুল মূল্যায়নের উপরে চলেছে!”
দলের মধ্যেই ওঠা এই সব প্রশ্ন উড়িয়ে দিতে পারছে না আলিমুদ্দিন। একটি সূত্রের ইঙ্গিত, বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুরে জেলা সম্পাদক পদে রদবদলের ভাবনা বিবেচনায় রয়েছে। প্রয়োজনে বর্ধমান জেলাকে সাংগঠনিক ভাবে গ্রামীণ ও শিল্পাঞ্চল, দু’ভাগে ভেঙে পরিস্থিতি সামলানোর কথাও ভাবা হচ্ছে। দু’দিন ধরে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে আলোচনার পরে জেলা কমিটিগুলির কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। ২২-২৫ অগস্ট রাজ্য কমিটি ও বর্ধিত রাজ্য কমিটিতে তার ভিত্তিতেই চুলচেরা আলোচনা হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.