ত্রিশঙ্কু দুই জেলা নিয়েই কৌতূহল
শেষ পর্যন্ত রাজ্যের ১৩টি জেলা পরিষদ ঘরে তুলল তৃণমূল। ফল ঘোষণার আগে ঠিক যা ছিল তৃণমূল নেতৃত্বের প্রত্যাশা।
পরিসংখ্যানের হিসেবে দেখলে, জেলা পরিষদ জয়ের নিরিখে পাঁচ বছর আগের ছবিরই পুনরাবৃত্তি হল এ বার। ২০০৮ সালে বামফ্রন্টও ১৩টি জেলা পরিষদ জিতেছিল। কংগ্রেস ও তৃণমূল পেয়েছিল দু’টি করে জেলা পরিষদ। এ বার তৃণমূলের দখলেও সেই ১৩টিই। বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস পেয়েছে একটি করে জেলা পরিষদ জলপাইগুড়ি ও মুর্শিদাবাদ। উত্তর দিনাজপুর ও মালদহ ত্রিশঙ্কু। এই দুই জেলায় শেষ পর্যন্ত কারা জেলা পরিষদ গঠন করে, রাজনৈতিক কৌতূহল এখন তাই নিয়েই।
তৃণমূল, বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস তিন শিবিরের কেউই ত্রিশঙ্কু জেলা পরিষদের ব্যাপারে মঙ্গলবার পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদে বামফ্রন্ট পেয়েছে ১৩টি আসন। কংগ্রেস ৮টিএবং তৃণমূল ৫টি। বামফ্রন্টের আশা, কংগ্রেস বিরোধিতা না-করলে সেখানে তারাই শেষ পর্যন্ত জেলা পরিষদ গড়তে পারবে। তুলনায় মালদহের পরিস্থিতি বেশি জটিল। মোট ৩৮টির মধ্যে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস, দু’পক্ষই ১৬টি করে আসন পেয়েছে। তৃণমূলের দখলে ৬টি। ওই জেলায় কংগ্রেসের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত বোর্ড করা যাবে বলে তৃণমূল নেতৃত্ব আশাবাদী। এ ব্যাপারে তারা ইতিবাচক সাড়াও পেয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা মালদহ জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরীর কাছ থেকে। বামেরা অবশ্য অপেক্ষা করারই পক্ষপাতী।

তৃণমূল সমর্থক এফসিআই কর্মীদের উল্লাস। মঙ্গলবার। ছবি: দেবাশিস রায়।
মুর্শিদাবাদ বাদে দক্ষিণবঙ্গের সব জেলা এবং উত্তরবঙ্গেও দু’টি জেলা পরিষদ জয় এই ফলে সার্বিক ভাবে সন্তুষ্ট তৃণমূল নেতৃত্ব। গ্রাম পঞ্চায়েতের ফল দেখে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা যা ধারণা করেছিলেন, জেলা পরিষদে সেই ছবিই উঠে এসেছে। ফেসবুকে এ দিনও তিনি খুশি গোপন করেননি। বলেছেন, ‘কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপি একযোগে কাজ করেছিল। কিন্তু ফল প্রমাণ করেছে, মা-মাটি-মানুষের রায় পরিষ্কার ভাবে আমাদের দিকেই রয়েছে। মানুষের বিশ্বাস ও আস্থায় আমরা অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ’! রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। মহাকরণে এ দিনের বৈঠকে দলের সাংসদদেরও নিজেদের এলাকায় গিয়ে মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে বলেছেন বলে খবর। নির্বাচন-পরবর্তী অশান্তি যাতে কোথাও না হয়, সে দিকেও সতর্ক নজর রাখতে বলেছেন তিনি।
প্রাথমিক ভাবে তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন, উত্তর দিনাজপুরে কংগ্রেসেরই জেলা পরিষদ গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। জেলা পরিষদে কোনও সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ক্ষেত্রে জেলার বিধায়ক ও সাংসদেরা ভোট দিতে পারবেন, সেই সুবিধা কংগ্রেস পাবে (কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ায় দীপা দাশমুন্সির অবশ্য সেই সুযোগ নেই)। মালদহের বিষয়টি এখনও ততটা স্পষ্ট নয়।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এ দিন বলেছেন, “মালদহ, উত্তর দিনাজপুরের ব্যাপারে দল এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” কবে? মুকুলবাবুর জবাব, “হাতে এখনও অনেক সময় রয়েছে।” তবে দলের জেলা নেতৃত্বকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দ্রুত রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে।
ত্রিশঙ্কু দুই জেলাতেই বাম বা তৃণমূল কোনও এক পক্ষের সঙ্গে হাত মেলানো হবে নাকি বিরোধী আসনে থাকা হবে, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেননি প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য দু’এক দিনের মধ্যে প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে আসার কথা রায়গঞ্জের সাংসদ দীপা এবং মালদহের জেলা সভাপতি ডালুবাবুর। প্রাথমিক ভাবে এ দিন দু’জনের সঙ্গেই কথা হয়েছে প্রদীপবাবুর। জেলা নেতৃত্বের মতামতের ভিত্তিতে হাইকম্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা করবেন প্রদীপবাবু। মুর্শিদাবাদের অধীর চৌধুরীর মতও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রদীপবাবু জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “আগামী লোকসভা ভোটে যাতে ওই দুই জেলায় দলের ক্ষতি না হয়, তা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
ডালুবাবু অবশ্য এ দিনই জানিয়ে দিয়েছেন, জেলা পরিষদ গড়তে প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতেও তাঁর আপত্তি নেই। তাঁর কথায়, “তৃণমূল বা বামফ্রন্ট কারও সাহায্য তো বোর্ড গড়তে লাগবেই! প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।” জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করতে আজ, বুধবারই জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে।
জেলা পরিষদ
তৃণমূল ১৩
দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর,
হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, বর্ধমান, বাঁকুড়া,
পুরুলিয়া, বীরভূম, দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার
বামফ্রন্ট ১ জলপাইগুড়ি
কংগ্রেস ১ মুর্শিদাবাদ
ত্রিশঙ্কু ২
উত্তর দিনাজপুর, মালদহ

দোলাচলের মধ্যে প্রাথমিক ভাবে কংগ্রেসের একটি অংশে এমন মতও উঠে আসছে যে, উত্তর দিনাজপুরে জেলা পরিষদ গড়ার লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানো হোক। বাম বা তৃণমূল কারও হাত ধরেই জেলা পরিষদ গড়তে দীপা রাজি নন বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দের কথায়, “আমরা মানুষের রায়কে সম্মান জানাতে বামফ্রন্ট বা তৃণমূল, কাউকেই সমর্থন করব না।” আর তৃণমূলের জেলা সভাপতি অমল আচার্যের বক্তব্য, “তৃণমূলকে ঠেকাতে এই জেলায় কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট গোপন সমঝোতা করে লড়েছে, এটা আমরা মাথায় রাখছি!” সিপিএমের জেলা সম্পাদক বীরেশ্বর লাহিড়ীরও মত, “আমরা কারও সমর্থন নিয়ে জেলা পরিষদ গড়তে চাই না।”
আলিমুদ্দিনে এ দিন বামফ্রন্টের বৈঠকের পরে ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, “পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই আমরা কোনও নীতি-বিরোধী কাজ করব না। সুবিধাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নেব না। কংগ্রেস, তৃণমূল কোনও দলের সঙ্গে বোঝাপড়ার কোনও প্রশ্ন ওঠে না। বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে আমরা কারও সমর্থন নিতেও যাব না। দিতেও যাব না!” তা হলে মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরে জেলা পরিষদের কী হবে? বিমানবাবুর মন্তব্য, “ফল বেরোল। এ বার খেলোয়াড়রা খেলুক! দেখি! তার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে!” আলিমুদ্দিন মনে করছে, কংগ্রেস বিরোধিতা না-করলে তারা উত্তর দিনাজপুরে জেলা পরিষদ গঠন করতে পারবে। কারণ, বোর্ড গঠন হওয়ার পরে সাংসদ ও বিধায়কদের পাশাপাশি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের ভোটও গ্রাহ্য হবে। তাতেই এগিয়ে যাবে বামেরা। পক্ষান্তরে, মালদহ জেলা পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে বামেরা কংগ্রেসের বিরোধিতা করতে চায় না। তবে এ নিয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ হিসেবে আম, চেয়ার ইত্যাদি চিহ্ন নিয়ে যাঁরা ভোটে লড়েছেন, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে তাঁদের সঙ্গেও বামেরা বোঝাপড়া করবে না বলে বিমানবাবু জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা কারও সমর্থন চাইতে যাব না। যদি কেউ করে, তখন দেখা যাবে।” বামফ্রন্টের অভিযোগ, বহু বুথে সন্ত্রাস ও রিগিংয়ের পরে গণনাতেও কারচুপি হয়েছে। এর বিরুদ্ধে এবং রাজ্যে শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে আগামী ৭ অগস্ট কলকাতায় মিছিল করবে বামেরা। সেই মিছিলে কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি জেলার মানুষ অংশ নেবেন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.