|
|
|
|
নদিয়া ও দুই ২৪ পরগনা |
দক্ষিণে তৃণমূলের জয়ে কাঁটা রাখল তিন জেলা
সঞ্জয় সিংহ • কলকাতা |
দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূলের মসৃণ জয়ের পথে কিছু খানাখন্দ রেখে গেল তিন জেলা! উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং নদিয়া তিন জেলাতেই তৃণমূল জিতেছে জেলা পরিষদ। কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে বেশ কিছু জায়গায় কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে রাজ্যের শাসক দল। গত বার যে সব গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির আসনে তৃণমূল জয়ী হয়েছিল, এ বার তার বেশ কিছু তাদের খোয়াতে হয়েছে বামেদের কাছে।
তবে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব সরাসরি এই নিয়ে উদ্বেগ মানতে নারাজ। কিন্তু দলের অন্দরে এ নিয়ে পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, মঙ্গলবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে দলীয় সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকেও বিষয়টি উঠেছিল। কাউকে দোষারোপ না-করলেও নদিয়া ও দুই ২৪ পরগনায় আরও ভাল ফল কেন হল না, তা পর্যালোচনা করার কথা বলেছেন তৃণমূল নেত্রী।
তিন জেলার মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সিপিএম সাংগঠনিক ভাবে কিছু দিন আগে পর্যন্তও যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। দুই জেলায় নেতাও অনেক। নদিয়ায় সেই তুলনায় পরিচিত কোনও মুখ নেতৃত্বে নেই। একেবারে তৃণমূল স্তরের জনসমর্থন পেয়েই নদিয়ায় ফল ভাল হয়েছে বলে মনে করছেন সিপিএম নেতৃত্ব এবং সেই জন্যই তাঁরা বেশি উৎসাহিত। সুমিত দে জেলা সম্পাদক হওয়ার পরে তৃণমূল স্তরে সংগঠন কাজ করছে বলেও সিপিএম নেতৃত্বের অভিমত। অন্য দিকে, বিস্তর সন্ত্রাসের মধ্যেও দলকে রাস্তায় রাখতে পেরেছেন বলে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক গৌতম দেবকে কৃতিত্ব দিচ্ছে দল। দক্ষিণে কিছুটা প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া ছিল। তার সঙ্গেই সুজন চক্রবর্তী, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, শমীক লাহিড়ীদের পরিশ্রম কাজে এসেছে বলে দলের একাংশের মত।
উত্তর ২৪ পরগনার ২২টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে গত বার ১৮টি পেয়েছিল তৃণমূল। এ বার পেয়েছে ১৪টি। বামেরা চার থেকে বাড়িয়ে এ বার ৬টি পঞ্চায়েত সমিতি জিতেছে। বসিরহাট মহকুমায় গত বার জেলা পরিষদের ২২টি আসনের মধ্যে সিপিএম পেয়েছিল ১২টি। এ বার ২৫টির মধ্যে তাদের দখলে ১৫টি। তৃণমূলেরও অবশ্য চার থেকে আসন বেড়ে হয়েছে ৯। কিন্তু তৃণমূলের হাত থেকে হাসনাবাদ, স্বরূপনগর, হিঙ্গলগঞ্জ এবং সন্দেশখালি-২ পঞ্চায়েত সমিতি ছিনিয়ে নিয়েছে বামেরা। গত বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখে এ বার বামেদের ফল ভাল বনগাঁ মহকুমাতেও। গাইঘাটায় দু’টি পঞ্চায়েত এবং বাগদায় তিনটি পঞ্চায়েত দখল করেছে তারা। বনগাঁ এবং গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতিতেও গত বারের তুলনায় এ বার বেশি আসন পেয়েছে বামেরা।
রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, “কংগ্রেস ভোট কাটায় আমরা আসন হারিয়েছি।” তবে উত্তর ২৪ পরগনার নেতাদের একাংশের অভিযোগ, “আমাদের জনপ্রতিনিধিদের আচরণেও মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ভোট দেননি।”
দলের অন্য একাংশ এই বক্তব্য মানতে নারাজ। মুখ্যমন্ত্রী পঞ্চায়েত ভোটে প্রথম প্রচার করেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পুরনো এলাকা গাইঘাটায়। তবু স্থানীয় নেতাদের মধ্যে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জন্য প্রার্থীরা প্রচারে দলের পূর্ণ সমর্থন পায়নি। বসিরহাটেও প্রচারে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু দল ধাক্কা খেয়েছে সিপিএমের কাছে। তবু সার্বিক ভাবে খারাপ ফল হয়নি বলেই মনে করেন জ্যোতিপ্রিয়। তাঁর কথায়, “কে কী বলছে, জানি না! বসিরহাট-১ ও বাদুড়িয়ায় কংগ্রেসের ভিত এ বার নড়িয়ে দিয়েছি!”
দক্ষিণ ২৪ পরগনার শহরতলি এলাকার ঠাকুরপুকুর এবং মহেশতলা দু’টি পঞ্চায়েত সমিতির দখল এ বার তৃণমূলের থেকে সিপিএমের হাতে গিয়েছে। জয়নগর, কুলতলি, মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার, কুলপি, ফলতায় ত্রিস্তরেই এ বার বামেদের রমরমা। এখানেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বকেই দায়ী করছে জেলা তৃণমূলের একাংশ। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুজনবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, ওই সব এলাকায় মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারায় ফল তাঁদের পক্ষে গিয়েছে। তবে জেলা তৃণমূলের ভাইস চেয়ারম্যান শক্তি মণ্ডল বলেন, “কোথায় কী ফল হয়েছে, পর্যালোচনা হবে। তবে গত বার বাসন্তী, গোসাবায় আমরা কোনও আসন পাইনি। এ বার পঞ্চায়েত, সমিতি এমনকী জেলা পরিষদ আসনেও জয়ী হয়েছি।”
নদিয়ায় পঞ্চায়েত সমিতি দখলের বিচারে শাসক দলকে হারিয়ে দিয়েছে বামেরা। তাদের হাতে ৮টি, তৃণমূল পেয়েছে ৭টি। জেলা পরিষদের মোট ৪৭টি আসনের ২৫টি পেয়েছে তৃণমূল, ২১টি পেয়ে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বামেরা। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় অবশ্য পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করেছেন, “জেলা পরিষদ থেকে পঞ্চায়েত সমিতি, সর্বত্রই আমরা বামেদের টেক্কা দিয়েছি।” জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তেরও দাবি, গত বারের তুলনায় এ বার পঞ্চায়েত সমিতিতে ৭৮টি ও জেলা পরিষদে ১৯টি আসন বেশি পেয়েছেন তাঁরা। |
|
|
|
|
|