১৬-১৭য় বসবে পলিটব্যুরো, কেন্দ্রীয় কমিটি
কোন পথে হাঁটবে সিপিএম, ধন্দ রয়েছে দলের মধ্যেই
রাজ্যের মানুষের আস্থা ফিরে পেতে গেলে তাঁদের যে আরও অনেক পথ হাঁটতে হবে, সেটা অষ্টম পঞ্চায়েত ভোটের ফল প্রকাশের পরে আরও বেশি করে বুঝতে পারছেন সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু সেই পথ কোনটা, তা নিয়েই দলে মতভেদ রয়েছে। দলের পুরনো জঙ্গি নেতারা মনে করেন, জেলায় জেলায় সংগঠন ফের চাঙ্গা করতে পেশিশক্তির প্রয়োজন রয়েছে। যদিও আলিমুদ্দিনের নেতারা তাড়াহুড়ো না-করে দলকে নতুন ভাবে গড়ে তোলার পক্ষপাতী। দিল্লির নেতারাও তাতেই সায় দিচ্ছেন।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মদন ঘোষ দলীয় মুখপত্রে লিখেছিলেন, “মানুষের নীরবতাকে পরোক্ষ সমর্থন ধরে নিয়ে তৃণমূল আগ্রাসী হয় বেশি। নেতা-মন্ত্রীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশে মুষ্টিমেয় সমাজবিরোধীদের ময়দানে নামিয়ে প্রশাসন পঞ্চায়েত দখল করতে মরিয়া। এই অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে প্রতিরোধ।” তাঁর মত ছিল, হাতে অস্ত্র থাকলেও মানুষের সঙ্ঘ-শক্তিকে সমাজবিরোধীরা ভয় পায়। এই পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যেই ভোটের আগে বেশ কিছু জঙ্গি বিবৃতি দিয়েছিলেন গৌতম দেব এবং রেজ্জাক মোল্লার মতো নেতারা।
সিপিএম পলিটব্যুরো কিন্তু এই জঙ্গি কথাবার্তায় অখুশি। তাদের মতে, জেলায় জেলায় এই পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষমতা এখন দলীয় সংগঠনের নেই। আমজনতার সমর্থন নেই। তাই প্রকাশ কারাট ও সীতারাম ইয়েচুরি দু’জনেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্রের রাজনৈতিক লাইনের প্রতি আস্থা রাখছেন। বুদ্ধবাবু মনে করছেন, তাঁর নেতৃত্বে নতুন সিপিএম গড়ার যে প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল, সেটা যেখানে থেমেছে, সেখান থেকেই আবার যাত্রা শুরু করতে হবে।
চৌত্রিশ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে দলে যে বিস্তর বেনোজল ঢুকেছে, সে কথা বহু বার স্বীকার করেছেন সিপিএম নেতারা।

আলিমুদ্দিনে বুদ্ধ। ছবি: সুদীপ আচার্য
সেই বেনোজল বার করে দলের শুদ্ধকরণই আশু কর্তব্য বলে মনে করেন বুদ্ধবাবুরা।
বিরোধী দলে থাকার সময় তৃণমূল অভিযোগ করত, সিপিএম, পুলিশ ও লুম্পেন সম্প্রদায়ের আঁতাঁতে রাজ্যে একটা রাজনৈতিক একাধিপত্য তৈরি হয়েছে। ব্যাপক সন্ত্রাস ও রিগিং করে তারা ভোটবাক্সে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন হতে দিচ্ছে না। আজ তৃণমূল সম্পর্কে সেই একই অভিযোগ তুলছে সিপিএম। কিন্তু পাল্টা গুন্ডাগিরির পথে যে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না, সেটা বুঝতে পারছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কারণ ক্ষমতায় এসেই সিপিএমের এই বিষ দাঁতগুলি ভেঙে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাদের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাদের মধ্যে লক্ষ্মণ শেঠ, সুশান্ত ঘোষকে জেলে পুরেছেন, দীপক ঘোষের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন, রেজ্জাক মোল্লার বিশ্বস্ত অনুচরদের গ্রেফতার করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোটে মোটেই ভাল ফল আশা করেনি আলিমুদ্দিন। সিপিএম নেতারা বুঝতে পেরেছিলেন যে, গত দু’বছরে তৃণমূলের কর্মকাণ্ডে জনগণের, বিশেষ করে নাগরিক জনসমাজের একাংশের মোহভঙ্গ হলেও এখনই সিপিএম-কে বিকল্প হিসেবে ভাবতে তারা রাজি নয়। পঞ্চায়েত ভোটের আগেই বেশ কয়েকটি দলীয় সাধারণ সভায় রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেছেন, চৌত্রিশ বছরে তৈরি মানুষের সিপিএম বিরোধী অসন্তোষ মাত্র দু’বছরে কর্পূরের মতো উবে যেতে পারে না। তাই চটজলদি পথে না-গিয়ে তিনি দীর্ঘমেয়াদি কৌশল গ্রহণের পক্ষে। যা বুদ্ধবাবু-সূর্যবাবুর মতের অনুসারী।
পঞ্চায়েতে দলের ফল যে খারাপ হবে, সে কথা পলিটব্যুরোকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিমানবাবুর অনুরোধে কারাট সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছিলেন, পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএমের জেতার সম্ভাবনা কম। কারণ হিসেবে অবশ্য দেখিয়েছিলেন তৃণমূলের সন্ত্রাসকে।
ভোটের পরে প্রাথমিক ভাবে ফল খতিয়ে দেখে সিপিএম নেতারা বলছেন, বিধানসভা ভোটের আগেই যে সব জেলায় তৃণমূলের দাপট ছিল, মোটের ওপর সেই সব জেলায় তাঁরা এ বার ভাল ফল করেছেন। ২০০৮-এ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ তৃণমূলের দখলে ছিল। সেখানে বেশ কিছু জায়গায় বামেদের ফল ভাল হয়েছে। নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনায় জেলা পরিষদ না পেলেও গত বার পঞ্চায়েত সমিতিতে ভাল ফল করেছিল তৃণমূল। এ বার ছবিটা কার্যত উল্টে গিয়েছে। ব্যতিক্রম অবশ্য পূর্ব মেদিনীপুর।
এই ছবি থেকে সিপিএম শীর্ষ নেতাদের বিশ্লেষণ, যেখানে তৃণমূল পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকেছে, সেখানে মোটের উপর তাদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া তৈরি হতে শুরু করেছে। তবে সেই হাওয়া অদূর ভবিষ্যতেই যে গোটা রাজ্য জুড়ে বইবে, এমন দুরাশা তাঁরা করছেন না। তাঁদের মতে, আরও সময় দিতে হবে। মানুষের কাছে দলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হবে। দলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, “আমাদের কমরেডদের আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে।”
১৬ ও ১৭ অগস্ট দিল্লিতে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। এই বৈঠকে পঞ্চায়েতের নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করা হবে। সীতারাম বলেন, “পুরো রাজ্যের রিপোর্ট দেখে, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিশ্লেষণ করে তার ভিত্তিতে আমরা রণকৌশল চূড়ান্ত করব।”
তবে তার আগেই সিপিএমের এক শীর্ষ নেতার সরস মন্তব্য, “বাঙালি আসলে খুব খারাপ উপভোক্তা। জুতোর পেরেক খুলে গেলেও চট করে জুতো ফেলে দেয় না। মুচিকে দিয়ে পেরেক মারিয়ে নেয়। সিপিএম-কে তারা ৩৪ বছর রেখেছিল। মমতাকেই বা এত সহজে ত্যাগ করবে কেন!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.