ঘাঁটি আগলাতে ব্যর্থ হয়ে বিপন্ন বাম শরিকেরা
তীতে ছাতুর সরবত খেয়ে চরকি পাক ঘুরতে দেখা যেত তাঁকে। বিরোধী তো বটেই, সিপিএমের সঙ্গেও টক্কর নিয়ে দুর্গ আগলাতেন। এ বার ভোটের ফল বেরোনোর পরের দিন সকালে বালুরঘাটের বাড়িতে থেকেও সহজে ধরা দিতে চাইছেন না বিশ্বনাথ চৌধুরী! দক্ষিণ দিনাজপুরে আরএসপি-র দাপুটে নেতা।
পঞ্চায়েত ভোটের ফল এ বার বিশ্বনাথবাবুর মতো বাম শরিক নেতাদের প্রায় ঘরবন্দি করে ফেলেছে। কারণ, নিজেদের ঘাঁটি আগলাতে এ বার ব্যর্থ শরিকেরা। দক্ষিণ দিনাজপুরে আরএসপি বা কোচবিহারে ফরওয়ার্ড ব্লকের একই দশা। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আরএসপি বা পুরুলিয়ায় ফ ব-র হালও একই। একের পর এক পঞ্চায়েত ভোটে বড় শরিক সিপিএমের সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করে, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে নিজেদের ঘাঁটি রক্ষা করতে দেখা যেত আরএসপি, ফ ব-কে। এ বার বামফ্রন্টের ঐক্য অতীতের তুলনায় অনেক মসৃণ। আর এ বারই পঞ্চায়েতে পরিবর্তনের ধাক্কায় সিপিএমের সঙ্গেই ভূমিশয্যায় শরিকেরা!
প্রাক্তন মন্ত্রী বিশ্বনাথবাবুর জেলার কথা ধরা যাক। জেলার ৬৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বামেদের দখলে ১৪টি। গ্রাম পঞ্চায়েত তো বটেই, টানা ৩০ বছর ধরে আরএসপি-র দখলে থাকা তপন পঞ্চায়েত সমিতি কেড়ে নিয়েছে তৃণমূল। জেলা পরিষদের দু’টি আসন হেরেছে আরএসপি। বালুরঘাটে ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত, দু’টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং তিনটি জেলা পরিষদের আসন খুইয়ে বসে আছে তারা।
কমল গুহের জেলা কোচবিহারে জেলা পরিষদ হাতছাড়া বামেদের। প্রয়াত কমলবাবুর খাস তালুক দিনহাটায় এবং সিতাইয়ে ফব-র হাত থেকে দু’টি পঞ্চায়েত সমিতি ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। সিংহভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতও তৃণমূলের দখলে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী সুভাষ নস্করের ঘাঁটি বাসন্তীতে আরএসপি কোণঠাসা। পুুরুলিয়ায় ফল ত্রিস্তরেই করুণ। সিপিএমের সঙ্গেই বেহাল দশা ফ ব-র, পুরুলিয়ার সাংসদ যে দলের। হাওড়া বা বীরভূমের মতো জেলায় ছোট ছোট কিছু এলাকায় ফ ব-র যা প্রভাব ছিল, গ্রাম পঞ্চায়েতের ফলে তা-ও অস্তমিত। জলপাইগুড়িতে আরএসপি-র ফল কিছুটা ভাল। তবে সরকার চলে যাওয়ায় অনেক সুযোগ সুবিধেই যে গিয়েছে, শরিক নেতারা তা মানছেন।
সিপিএমের সঙ্গে যুঝে যে দুর্গ এত বছর আগলাতে পারত শরিকেরা, এখন সেখানেই তৃণমূলের সঙ্গে কেন তারা এঁটে উঠতে পারছে না? আরএসপি-র দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি বিশ্বনাথবাবুর মতে, “তৃণমূলের দাপট আর অর্থকরী লেনদেনের সঙ্গে আমরা পেরে উঠিনি।” তপনের বিদায়ী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, আরএসপি-র আনিসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগই করা যায়নি। নেতারা তৃণমূলের ‘দাপটে’র দিকে আঙুল তুললেও টানা ৩৪ বছর ধরে তপন, বালুরঘাট ও কুশমন্ডিতে ব্লক স্তরের এক শ্রেণির নেতার দুর্নীতি এবং নেতৃত্বের তরফে সেই প্রক্রিয়ায় মদত দিয়ে যাওয়াকে দায়ী করছে দলেরই একাংশ।
বস্তুত, প্রতাপ হারানোর জন্য সব বাম দলের বাম শরিক নেতারাই দায়ী করছেন রাজ্যের শাসক দলের পেশি ও অর্থবলকে। কমল-পুত্র তথা ফ ব-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ যেমন বলছেন, “যদি সুষ্ঠু ভোট হত, মেনে নিতাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। এত নগ্ন ভাবে প্রশাসনকে ব্যবহার করে আগে কোনও শাসক দল ভোট করেনি! আমাদের ১২৭ জন নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে!” এক তৃণমূল কর্মীর খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত উদয়নবাবুর আগাম জামিন মঞ্জুর হয়েছে মঙ্গলবারই।
শাসকের সন্ত্রাস ও অর্থবলের সঙ্গে আগে এ ভাবে মোকাবিলা করতে হয়নি বলে অভিযোগ করেও আরএসপি-র সুভাষবাবু কবুল করছেন, “প্রায় ৪০ বছর ধরে গোসাবা-বাসন্তীর মানুষ সাংসদ, বিধায়ক বা পঞ্চায়েত সর্ব স্তরে আরএসপি-কেই দেখে আসছেন। নতুন প্রজন্মের মনে এটা নিয়ে কিছু বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছিল।” এই ব্যর্থতার আবহেও সিপিআই নেতা গৌতম রায় জানাচ্ছেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনারই ফলতায় তিনটির মধ্যে দু’টি তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতলেও একটি জিতেছে সিপিআই।
সম্পূর্ণ বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে হার নিয়ে শরিকি দোষারোপ শুরু হয়নি। উত্তরবঙ্গের আরএসপি-র একাংশের অভিযোগ, কালচিনির মতো কিছু জায়গায় আসন সমঝোতার পরেও সিপিএমের পূর্ণ সহযোগিতা তারা পায়নি। বাসন্তীতেও আরএসপি এবং সিপিএমের ভোট নিজের নিজের এলাকায় ‘ক্রস ভোটিং’ হয়ে তৃণমূলের সুবিধা করে দিয়েছে বলে সন্দেহ।

(সহ-প্রতিবেদন: অনুপরতন মোহান্ত)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.