শৃঙ্খলাভঙ্গ বরদাস্ত নয়, সোমেনকে বার্তা দিলেন মমতা
লে থেকে দলের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা যে তিনি বরদাস্ত করবেন না, মঙ্গলবার তৃণমূল সাংসদদের বৈঠকে তা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, এ বার থেকে এ বিষয়ে কড়া হবেন তিনি। তৃণমূল নেত্রী বিশেষ কোনও সাংসদকে লক্ষ্য করে এ কথা না-বললেও তৃণমূল শিবিরের অনেকেরই ধারণা, কথাগুলি তিনি শুনিয়ে রাখলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ সোমেন মিত্রকে। বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে যাঁর সঙ্গে দলের দূরত্ব ইদানীং বেড়েছে।
আসন্ন সংসদ অধিবেশনে দলের রণকৌশল, সাংসদ কোটার টাকা খরচ এবং পঞ্চায়েত ভোটের পর জেলায় জেলায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে আলোচনা করতে এ দিন মহাকরণে নিজের ঘরে দলীয় সাংসদদের ডেকেছিলেন মমতা। সেখানে খানিকটা প্রসঙ্গান্তরে গিয়েই তিনি বলেন, তৃণমূলের প্রতি নিষ্ঠাবান ছেলেরা গত পনেরো বছর ধরে অসম্ভব পরিশ্রম করে দলটাকে গড়ে তুলেছে। এই ভাল কাজের ফসল তিনি কোনও ভাবেই নষ্ট হতে দেবেন না। এত দিন এ সব নিয়ে তিনি ততটা কঠোর মনোভাব দেখাননি। কিন্তু এ বার দেখাবেন। তবে এ সব কথা বলতে গিয়ে মমতা রাগারাগি করেননি বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর। শান্ত অথচ দৃঢ় ভাবে তিনি নিজের মনোভাব জানান উপস্থিত সাংসদদের।
শৃঙ্খলা রক্ষার এই বার্তা কেন সোমেনবাবুর উদ্দেশে বলে মনে করা হচ্ছে তার ব্যাখ্যা দিয়ে তৃণমূল শিবিরের একাংশ বলছে, গত লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস ছেড়ে আসা এই নেতার সঙ্গে সম্প্রতি দলের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে উপদলীয় কাজকর্মের অভিযোগও উঠেছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরে জমি বণ্টন ও পণ্য খালাস নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন সোমেনবাবু। ওই চিঠিতে তিনি সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন। সোমেনবাবু যখন ওই চিঠি লেখেন, তখন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তা ছাড়া, হলদিয়া বন্দরের সঙ্গে তৃণমূলের আরও দুই সাংসদেরও ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে।
এর পর পার্কসার্কাস থেকে পরমা আইল্যান্ড পর্যন্ত উড়ালপুল নির্মাণ নিয়ে রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের কাজের সমালোচনা করে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রীকে একাধিক বার চিঠি লিখেছেন সোমেনবাবু। রাজ্য সরকারের এক পদস্থ অফিসারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন।
পাশাপাশি, দলের সাংসদদের একাংশের সক্রিয় সহায়তার লগ্নি সংস্থাগুলি বেআইনি কাজকর্ম চালাচ্ছে এবং তার জেরে গরিব মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চিঠি লিখেছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।
তৃণমূল নেতাদের অনেকেরই অভিযোগ, দলীয় স্তরে আলোচনা না-করে এই সব বিষয় নিয়ে সরাসরি কেন্দ্রকে চিঠি লেখায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার ফলে তৃণমূল নেত্রী ক্ষুব্ধ এবং বিরক্ত। সেই বিরক্তি আরও বেড়েছে গত ১ জুলাই বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিনে সোমেনবাবু এবং তাঁর স্ত্রী, চৌরঙ্গি কেন্দ্রের বিধায়ক শিখা মিত্র প্রদেশ কংগ্রেস দফতর বিধান ভবনে যাওয়ায়। গত বারও বিধান ভবনের অনুষ্ঠানে তাঁদের যাওয়া নিয়ে জল ঘোলা হয়েছিল। সেখানে তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন শিখাদেবী। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
তার পর ডায়মন্ড হারবারে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে যাওয়ার পথে বিধানসভায় কংগ্রেস পরিষদীয় দলের ঘরে আড্ডা জমিয়েছিলেন সোমেনবাবু। গত শনিবার বিধানসভার অধিবেশনের ফাঁকে একই কাজ করেছেন শিখাদেবী। ফলে সব মিলিয়ে সোমেন-পরিবারের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক এখন সরু সুতোর উপরে দাঁড়িয়ে আছে।
যার পরিপ্রেক্ষিতে সোমেনবাবু এ দিনের বৈঠকে আসেন কিনা, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল তৃণমূলে। সোমেনবাবু এলেন, এবং মমতাকে বলতে শুনলেন যে, উপদলীয় কাজকর্মে মদত দেন এমন কাউকে তিনি বরদাস্ত করবেন না। পঞ্চায়েতে বিপুল জয়ের পরে দলীয় নেতাদের বিনয়ী হতেও পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেছেন, ফের এ ভাবে জিততে চাইলে উদ্ধত হলে চলবে না, মানুষের জন্য কাজ করে যেতে হবে।
সোমেনবাবু অবশ্য জানান যে, সাংসদ কোটার টাকা খরচ, সংসদে দলের ভূমিকা এবং পঞ্চায়েতের সাফল্য নিয়েই এ দিন আলোচনা হয়েছে। লগ্নি সংস্থার কাজকর্ম-সহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর সরব হওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কিছু বলেছেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “না না, এ সব নিয়ে কোনও কথা হয়নি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.