|
|
|
|
কোণঠাসা ছোট দল |
জয়নগরে এসইউসি দুর্গে সিপিএমের হানা
শুভাশিস ঘটক ও রোশনী মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
কুলতলি এসইউসি-র হাতছাড়া হয়েছিল গত বিধানসভার ভোটে। পঞ্চায়েত ভোটে সেখানকার ক্ষত সামান্য মেরামত হল। আবার তাদের নতুন উদ্বেগের কারণ হল জয়নগর! পঞ্চায়েতের ইতিহাসে এ বারই প্রথম জয়নগরে নিরঙ্কুশ পঞ্চায়েত সমিতি গঠন করতে চলেছে বামফ্রন্ট। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তৃণমূলের প্রাধান্য থাকলেও জয়নগর ও কুলতলি এলাকায় বামফ্রন্টই এগিয়ে।
জয়নগর ১ পঞ্চায়েত সমিতি এসইউসি-র কাছ থেকে জিতে নিয়েছে বামফ্রন্ট। কুলতলি পঞ্চায়েত সমিতিও বামেদের। জয়নগর-২ ত্রিশঙ্কু। জয়নগরে পঞ্চায়েত সমিতির ৩৬টি আসনের মধ্যে বামফ্রন্ট ২১টি এবং এসইউসি ৭টি পেয়েছে। জয়নগর বিধানসভা কেন্দ্রের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত গত বার এসইউসি-র হাতে ছিল। এ বার তারা রাখতে পেরেছে মাত্র দু’টি। কুলতলিতে পঞ্চায়েত সমিতির ২৭টি আসনের মধ্যে ১৭টি পেয়েছে বামফ্রন্ট। এসইউসি ৭টি।
গত পঞ্চায়েত ভোটে এসইউসি-র সঙ্গে তৃণমূলের জোট ছিল। সমঝোতা ছিল বিধানসভার ভোটেও। সে বারই কুলতলি বিধানসভা এসইউসি-র থেকে সিপিএম দখল করে নেয়। এসইউসি-র স্বস্তি বলতে কুলতলিতে তারা দু’টি নতুন গ্রাম পঞ্চায়েত জিতেছে। আগের জেতা তিনটির মধ্যে ধরে রেখছে দু’টি।
রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা, আগে জয়নগর ও কুলতলিতে সিপিএম, এসইউসি এবং কংগ্রেসের লড়াই হত। এ বার এসইউসি-কে তৃণমূল এবং বিজেপি-র সঙ্গেও লড়তে হয়েছে। গত বিধানসভা ভোটের পর তৃণমূল জয়নগর ও কুলতলিতে শিকড় ছড়িয়েছে। বিজেপি-ও কিছুটা শক্তি বাড়িয়েছে। পাশাপাশি, সিপিএম নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক ধরে রেখেছে। ফলে ভাঙন ধরেছে এসইউসি-র দুগের্। এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসু অবশ্য বলেন, “জয়নগরে আমাদের হারাতে তৃণমূল এবং সিপিএমের মধ্যে বোঝাপড়া হয়েছিল। দু’দলই প্রচুর টাকা ছড়িয়েছিল। টাকা পেয়ে গরিব মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে সিপিএমকে ভোট দিয়েছেন।” দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের তরফে জয়নগর ও কুলতলিতে পঞ্চায়েত ভোটের দায়িত্বে ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এসইউসি-র কথা সত্য হলে তো আমরা ক্ষমতায় থাকাকালীনই টাকা ছড়িয়ে জিততাম! আসলে আমি মন্ত্রী থাকাকালীন ওই এলাকায় উন্নয়ন করেছি। আর রাজনৈতিক সংঘর্ষ ঠেকানোয় মন দিয়েছি। তাই মানুষ সিপিএমের দিকে ঝুঁকছেন।”
এসইউসি বীরভূম জেলা পরিষদের একটি আসন জিতেছে বিপুল ভোটে। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দৌলতে। বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লকের জেলা পরিষদের একটি আসনে তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের প্রার্থীকে হারাতে সক্রিয় ছিলেন দলে তাঁর বিরোধীরা। সেখানে এসইউসি তৃণমূলকে ২১,৩৭৫ ভোটে হারিয়েছে! বস্তুত, এ বার পঞ্চায়েত ভোটে কোনও ছোট দলই আশাপ্রদ ফল করেনি। কিছু দিন আগেই বীরভূমের লোবায় পিডিএসের নেতৃত্বে জমিরক্ষা কমিটি আন্দোলন করেছে। অথচ লোবায় জিতেছে তৃণমূল। জমিরক্ষা কমিটির সঙ্গী হয়ে লড়ে পিডিএস কোনও আঁচড় কাটতে পারেনি। পিডিএসের রাজ্য সম্পাদক সমীর পূততুণ্ডের অভিযোগ, “লোবায় সুষ্ঠু ভোটই হয়নি। যেখানে জমিরক্ষা কমিটির ভাল ভোট পাওয়ার কথা, সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। কিন্তু যে সব জায়গায় তৃণমূল সন্ত্রাস করতে পারে বলে আমরা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিলাম, সেই সব এলাকায় রাজ্য পুলিশ দিয়ে যেমন তেমন ভোট হয়েছে!” পুরুলিয়া, নদিয়া, জলপাইগুড়ি এবং মালদহে কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত আসন জিতেছে পিডিএস। তবে তার সংখ্যা আগের চেয়ে কম।
বিজেপি-র ফলও গত বারের চেয়ে অনেক খারাপ। তৃণমূল সরকার ইমাম ভাতা, মোয়াজ্জিন ভাতা-সহ নানা মুসলিম ভোটমুখী প্রকল্প ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ রাজ্যে বিজেপি-র কার্যকলাপ বাড়ছিল। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে তার প্রতিফলন হয়নি। গত বার গ্রাম পঞ্চায়েতে ১১৬৯টি আসন, পঞ্চায়েত সমিতির ১৭০টি আসন এবং জেলা পরিষদের ২টি আসন বিজেপি পেয়েছিল। এ বার তারা জিতেছে গ্রাম পঞ্চায়েতে ৫৬৮টি ও পঞ্চায়েত সমিতিতে ৩৬টি আসন। জেলা পরিষদে একটিও নয়। তবে জয়নগরে এসইউসি-কে হারিয়ে একটি গ্রাম পঞ্চায়েত জিতেছে বিজেপি। |
|
|
|
|
|