বিপন্ন রাজবংশী-সংস্কৃতি
ধুনিকতায় বিপন্ন উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সমাজের ‘মাশান’ সংস্কৃতি বিলুপ্ত হতে বসেছে। আদিম মানুষের শিল্পরীতির নমুনা প্রবীণ শিল্পীদের কয়েকজন বংশ পরম্পরায় মাশানের মূর্তি গড়ে কোনমতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন। গবেষকদের একাংশের দাবি, মাশান নিছক পুজো নয়, সভ্যতা বিকাশের আধুনিক পর্বেও সজীব থাকা আদিম জীবনের আকুতি ও অসহায়তার দলিল। শিল্প হারিয়ে গেলে ধ্বংস হবে রাজবংশী সংস্কৃতির মূল্যবান অধ্যায়।
বিভিন্ন ব্যধি থেকে আরোগ্যের কামনায় রাজবংশী সমাজে যে দেবতার পুজো হয়, তার নাম মাশান। গবেষকরা জানান, আনন্দে নয় মানুষ ভয়ে ওই দেবতার আরাধনা করেন। গবেষকদের দাবি, মাশান আদিম সংস্কৃতির বিবর্তিত রূপ। ওই দেবতা মূর্তির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে গুহাচিত্রে ব্যবহৃত নানা রেখার কারসাজি। আদিম মানুষ যেমন গুহায় খোদাই করে শিকারের ছবি এঁকেছে, একই ভাবে ওই সময় রকমারি রোগ ব্যাধিতে মানুষ আক্রান্ত হয়েছে মারাও গিয়েছে। প্রকৃতির কাছে পুরোপুরি অসহায় থাকায় তাঁরা মনে করেছেন। এ সবই অশুভ শক্তির প্রভাব তাঁদের কল্পনায় গুহার গায়ে ওই সমস্ত অশুভ শক্তির ছবিও ফুটে উঠেছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষক তথা লোকসংস্কৃতি গবেষক দীপক রায় বলেন, “সভ্যতা বিবর্তনের ধারায় নানা কল্পনার মিশ্রণে সেটাই এক সময় মাশান রূপে পরিচিতি পায়।
মাশানের মূর্তি তৈরিতে মগ্ন ময়নাগুড়ির শিল্পী। ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর ঘটক।
অশুভ শক্তির প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য রাজবংশী সমাজে নানা উপাদান দিয়ে দেবতার মূর্তি গড়ে আরাধনা হয়।” বৌদ্ধ ধর্ম প্রভাবিত শ্রীলঙ্কা, তিব্বত, নেপালের মতো এশিয়ার বিভিন্ন দেশে নানা আঙ্গিকে মাশান আরাধনা প্রচলন রয়েছে। জলপাইগুড়ির লোকসংস্কৃতি গবেষক বিমলেন্দু মজুমদার মনে করেন, “আদিম ভাবনার মাশানে রূপান্তর ঘটেছে অন্তত দশ হাজার বছর আগে। সময়ের ভাবনার পরিবর্তন হলেও মাশানের আঙ্গিকে তেমন পরিবর্তন আজও আসেনি। গবেষক দিলীপ বর্মা জানান, আদিম গুহা চিত্রে সরলরেখা ব্যবহারের রীতি মাশান মূর্তিতে দেখা যায়। এ ছাড়াও রয়েছে ভেষজ রং ব্যবহারের কৌশল।”
গ্রামাঞ্চলে আঠারো রকম মাশান দেবতার নাম পাওয়া যায় বৈচিত্র্য রয়েছে। অবয়ব ও মূর্তি গড়ার উপাদানেও যেমন, কোচবিহার জেলায় মাশান মাটির জলপাইগুড়ি জেলায় শোলার তৈরি মাশান প্রচলিত। উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় মুখোশ মাশান দেখা যায়। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, সাধারণত বৈশাখ ও কার্তিক মাসে ওই দেবতার পুজো বেশি হয়। মন্ত্র নেই উপাচার হিসেবে পোড়া মাছ, চাল ভাজা, ডিম ইত্যাদি থাকে।
উত্তরবঙ্গের যে শিল্পীরা আজও শোলা কেটে মাশানের মূর্তি গড়েন তাঁদের অন্যতম ময়নাগুড়ি বানিয়ার বাড়ি গ্রামের নিকেন অধিকারী। তিনিও হতাশ মাশান সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ ভেবে। তাঁর কথায়, “কতদিন এই শিল্প টিঁকে থাকবে জানি না? শিল্পী বলেন, “গ্রামের নতুন প্রজন্মের কেউ কৌতূহল দেখায় না।” ময়নাগুড়ির লোকসংস্কৃতি গবেষক দীনেশ রায়ের দাবি, “শুধু মূর্তি নয় মাশান পুজো পদ্ধতিতে আদিম ভাবনার ছোঁয়া আজও স্পষ্ট। তিনি বলেন, মাশান বিলুপ্ত হলে গ্রামীণ জীবনে গড়ে ওঠা ভিন্ন ধরণের মূল্যবোধেরও ধ্বংস হবে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.