একটা মোবাইল ফোন। আর তাতেই চলে আসছে জেলার নানা এলাকার অপরাধ ও আইন-শৃঙ্খলার যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য, ছবি। সেই ফোনেই জেলা পুলিশের বড় কর্তার নির্দেশ ছড়িয়ে যাচ্ছে নিচুতলার আধিকারিকদের কাছে। সবই হচ্ছে এক নিমেষে।
‘ব্ল্যাকবেরি মেসেঞ্জার সার্ভিসে’র (বিবিএম) মাধ্যমে বাঁকুড়া জেলার সব ক’টি থানার ওসি, আইসি থেকে জেলা পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের এক সূত্রে বেঁধে ফেলেছেন পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। তাঁর দাবি, “এতে ঘটনার আগেই যেমন কিছু অপরাধ ঠেকানো যাচ্ছে, তেমনই বিভিন্ন তথ্যের আদান প্রদানে পুলিশের কাজে গতি বেড়েছে।”
মাস খানেক হল বাঁকুড়া জেলা পুলিশ মোবাইলের এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। জেলার ওসি, আইসি-দের পুলিশ সুপারের নির্দেশ দিয়েছেন, কোনও ঘটনা ঘটলেই সঙ্গে সঙ্গে বিবিএমের মাধ্যমে সেই ছবি-সহ তথ্য দিতে হবে। তাঁর নির্দেশ মানতে তাই ওসি, আইসিদের ঘটনাস্থলে ছুটতে হচ্ছে। শুধু পুলিশ সুপার নয়, আপলোড করা সেই ছবি ও তথ্য একই সঙ্গে দেখতে পাচ্ছেন জেলার বাকি থানার ওসি, আইসি-সহ বড় পুলিশ কর্তারাও। তাঁদের কারও কাছে ওই ঘটনা সম্পর্কে কোনও তথ্য থাকলে তাঁরা তা বিবিএমের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছেন। ফলে পুলিশের কাজে সমন্বয় বেড়েছে।
পুলিশ সুপার জানান, কয়েক মাস আগে ইঁদপুরের একটি ব্যাঙ্কে ডাকাতির ধরণ দেখে জেলার দুষ্কৃতীরা যুক্ত বলে প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ পুলিশের হয়। পুলিশ সুপার বাঁকুড়ার সব থানাকে জেলার দাগি দুষ্কৃতীদের ছবি পাঠাতে বলেন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সব থানা থেকে ছবি জড়ো হয়। ব্যাঙ্ক ডাকাতির প্রত্যক্ষদর্শীদের ওই দুষ্কৃতীদের ছবি দেখাতে তাঁরা জানান, এরা ব্যাঙ্কে হানা দেয়নি। পুলিশ বুঝে যায়, জেলার দুষ্কৃতীদের এ কাজে যুক্ত থাকার সম্ভাবনা কম। অন্য জেলার দুষ্কৃতীদের খোঁজে জোর দেন তাঁরা। ধরা পড়ে ভিন জেলার দুষ্কৃতীরাই।
পঞ্চায়েত ভোটের দিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজেও এই প্রযুক্তি বেশ কাজে লেগেছে বলে পুলিশ আধিকারিকদের দাবি। রাজনৈতিক কর্মীদের জমায়েত হওয়ার ছবি পেয়ে পড়শি থানা সতর্ক হয়ে গিয়েছিল। কোথাও কোনও দুষ্কৃতী ধরা পড়লে তার ছবি আপলোড করলেই অন্য থানাগুলিতে তার নামে কোনও অভিযোগ রয়েছে কি না তাও অল্পক্ষণের মধ্যে জানা যাচ্ছে। দুর্ঘটনা ঘটলে জখম ও মৃতদের ছবিও ‘আপলোড’ করা হচ্ছে। অজ্ঞাত পরিচয় লোকেদের ক্ষেত্রে পরিচয় জানার কাজও সহজ হয়ে গিয়েছে।
এই প্রযুক্তিতে তথ্যের আদানের প্রদানও সুরক্ষিত, জানালেন দুর্গাপুরে ওই মোবাইল শো-রুমের প্রতিনিধি কল্যাণ বসু। তিনি বলেন, “ফোনের পিন কোডের মাধ্যমে একজন অন্যকে ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ পাঠিয়ে নিজেদের মধ্যে একটা গ্রুপ তৈরি করতে পারেন। ওই গ্রুপের মধ্যেই ছবি, তথ্য আদানপ্রদান করা যায়। বাইরের কেউ তার নাগাল পাবেন না।” বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার জানান, কিছু আধিকারিকের ওই ফোন ছিলই। বাকি কয়েকজনকে পুলিশের তহবিল থেকে ফোন কিনে দেওয়া হয়।
বাঁকুড়া পুলিশের কাজের এই বিবর্তনের খবর পেয়েছেন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত-ও। তিনি বলেন, “নয়া প্রযুক্তির সহায়তায় বাঁকুড়া পুলিশ যে কাজ করেছে তা অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক। অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে খুব কাজের।” অন্য জেলাগুলিও যাতে বাঁকুড়ার এই উদ্যোগকে অনুসরণ করে সে জন্য তিনি চেষ্টা করছেন বলে জানান।
তবে প্রযুক্তির ঠেলায় যে ঘুম ছুটেছে থানার বড়বাবুদের! এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “বড়কর্তার কড়া হুকুম ফোনটা যেন সঙ্গে থাকে। তাই সার্ভিস রিভলবারের মতো ওটাকেও কোমরে গুঁজে ঘুরছি।” |