অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকারের কাছে প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে ফের জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন ঝালদার বাগবিন্ধ্যায় মাওবাদীদের হাতে নিহত সাত জনের পরিবারের সদস্যেরা।
২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে ঝালদা ১ ব্লকের অযোধ্যা পাহাড়তলির বাগবিন্ধ্যা ও লাগোয়া চিরুটাঁড়, গুটিলোয়া, নওয়াগড় গ্রামে হানা দিয়ে মাওবাদীরা সাত জনকে গুলি করে মারে। সেই ঘটনার পর আড়াই বছরেরও বেশি সময় পেরিয়েছে। এই অবস্থায় নিহতদের বাড়ির লোকেদের খেদ, “যাঁরা গরিবদের খুন করল, তাঁদের অনেকেকেই আত্মসমর্পণ করলে সরকার পুনর্বাসন দিচ্ছে। চাকরির বন্দোবস্ত করছে। কিন্তু, ওদের হাতে খুন হওয়া মানুষদের পরিবার কি সাহায্য পাবে না?”
কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছিল, ২০০৯ সালের এপ্রিলের পর থেকে মাওবাদী হামলায় যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের পরিবারকে ৩ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। বিধি মোতাবেক সেই ক্ষতিপূরণ বাগবিন্ধ্যায় নিহত সাত জনের মধ্যে পাঁচ জনের নিকটাত্মীয়েরা পেয়েছেন। কিন্তু, রাজ্য সরকারের ক্ষতিপূরণ আজও পায়নি সাতটি পরিবার। বাম আমলে ওই ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ছিল পরিবার পিছু এক লক্ষ টাকা। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে তা বাড়িয়ে দু’লক্ষ করা হয়। বাগবিন্ধ্যায় নিহতদের পরিবার অবশ্য এক লক্ষ টাকা করেই পাবে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
ওই পাঁচ পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণের আবেদন নিয়ে তাঁরা মাসের পর মাস জেলা প্রশাসনের দোরে দোরে ঘুরছেন। কিন্তু, প্রতিশ্রুতির বেশি কিছুই জোটেনি। অন্য দু’টি পরিবার রাজ্য ও কেন্দ্রকোনও তরফ থেকেই ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি স্রেফ প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতায়। ওই পরিবারের সদস্যদের কথায়, “আমাদের রোজগারের মানুষটাই তো চলে গিয়েছে! ক্ষতিপূরণের এক টাকাও পাইনি। সংসার ভেসে যাওয়ার উপক্রম।” কেন্দ্রীয় ক্ষতিপূরণের অর্থ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ফিক্সড ডিপোজিট করে দিয়েছে প্রশাসন। তা থেকে মাসিক ২১০০ টাকা সুদ হিসাবে পান নিহতদের নিকটাত্মীয়েরা।
বাগবিন্ধ্যার গোবর্ধন সিংহকে হত্যা করেছিল মাওবাদীরা। তাঁর স্ত্রী সুন্দরাদেবী এখন থাকেন আড়শার শিরকাবাদে, বাপের বাড়িতে। বুধবার জেলাশাসকের কাযার্লয়ের বাইরে অশ্বত্থ গাছের তলায় বলে সুন্দরাদেবী বলেন, “আমার চার ছেলেমেয়ে। স্বামীই ছিলেন একমাত্র রোজগেরে। বাড়িতে বাবা-মাকেও দেখতে হয়। ২১০০ টাকায় কি সংসার চলে? গাঁয়ে অল্প জমি থাকলেও ভয়ে ফিরতে পারি না। রাজ্যের ক্ষতিপূরণ পেলে কিছুটা হলেও সুরাহা হবে।”
কোনও ক্ষতিপূরণই না পাওয়া নিহত গোপেশ্বর মাহাতোর নাতি সুবোধচন্দ্র মাহাতো বলেন, “আমি বারবার জেলা প্রশাসনের কাছে আসছি। অনেককে বলেছি। কেন ক্ষতিপূরণ পাচ্ছি না, তার সদুত্তর কেউই দিতে পারছে না।” আর এক নিহত ফব নেতা কিঙ্কর সিংহের দাদা শঙ্কর বলেন, “মায়ের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা। প্রশাসনের কথা মতো ভাইয়ের অবিবাহিত হওয়ার শংসাপত্র অনেক দিন হল প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি। তবু কেন কেন্দ্র-রাজ্যের ক্ষতিপূরণ পাচ্ছি না, জানি না।”
নিহত ছ’টি পরিবারের সদস্যদের পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তীর কাছে নিয়ে এসেছিলেন বাগবিন্ধ্যা সংলগ্ন একটি গ্রামের বাসিন্দা শেখ হুসেন আহমেদ।
তিনি প্রথম থেকেই ওই পরিবারগুলি যাতে দু’তরফের ক্ষতিপূরণ পায়,তার চেষ্টা চালাচ্ছেন। হুসেন বলেন, “জেলাশাসককে সমস্ত কিছুই জানালাম। উনি আমাদের আবেদন সহৃদয় ভাবে বিবেচনার আশ্বাস দিলেন।” আর জেলাশাসক বলেন, “আমি সবে দায়িত্ব নিয়েছি। ওঁদের কাছে সব শুনলাম। আবেদন সরকারের কাছে পাঠাব। ওঁরা যাতে প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ পান, তা দেখব।” |