পুজোর আগেই বন্ধ হয়ে গেল ন্যাশনাল জুট ম্যানুফ্যাকচার্স কর্পোরেশন (এনজেএমসি)-এর খড়দহ জুট মিল। গত ৯ সেপ্টেম্বর মিলটিতে ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝুলিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। এর ফলে সংস্থার প্রায় ১১০০ কর্মীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। মিলের উৎপাদন তলানিতে নামার পাশাপাশি কর্মীদের বিশৃঙ্খল আচরণের ফলেই মিলটি বন্ধ করতে হয়েছে বলে অভিযোগ কর্তৃপক্ষের।
রুগ্ণ হয়ে যাওয়া খড়দহ জুট মিল ২০০৩ সালে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে ২০১১ সালে মিলটিকে পুলরুজ্জীবিত করে তোলার জন্য বিআইএফআর একটি প্রকল্প অনুমোদন করে। তার সুবাদেই মিলটি ফের চালু হয়। চালু হওয়ার বছর দুয়েকের মধ্যেই ফের সেটি বন্ধ হল। একই প্রক্রিয়ায় এনজেএমসির আরও দু’টি মিল, উত্তর ২৪ পরগনার কেনিসন ও কাটিহারের একটি মিল পুনরুজ্জীবিত করে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় এনজেএমসি।
উৎপাদন যে-পর্যায়ে নেমে এসেছে, তাতে লাভজনক ভাবে খড়দহ মিল চালানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কেন মিলটি বন্ধ করা হল, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজ্যের জুট কমিশনার এবং এনজেএমসি-র বর্তমান সিএমডি সব্রত গুপ্ত বলেন, “কোনও চটকল লাভজনক ভাবে চালাতে হলে কমপক্ষে দিনে ২৫ টন উৎপাদন হওয়া প্রয়োজন। সেখানে খড়দহের উৎপাদন আটকে রয়েছে ১২ থেকে ১৫ টনে।” মিলে প্রায় ২০ শতাংশ কর্মী উদ্বৃত্ত বলেও মন্তব্য করেন সুব্রতবাবু। তিনি বলেন, “বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতারা জোর করে কর্মী ঢুকিয়ে দেওয়ার ফলেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।”
অবশ্য কর্তৃপক্ষের অভিযোগ শুধু উৎপাদনকে ঘিরেই নয়। কর্মীদের বিরুদ্ধে উচ্ছৃৃঙ্খলতার অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা। উদাহরণ দিতে গিয়ে সুব্রতবাবু বলেন, “গত প্রায় ৪ মাস ধরে কমীরা ২ ঘণ্টা করে কাজ করছেন না। কারণ, তাঁরা প্রভিডেন্ট ফান্ডের হিসাব সংক্রান্ত স্লিপ পাননি। অথচ কর্মীরা সকলেই ঠিকাদারের কর্মী। পিএফের স্লিপ দেওয়ার কথা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থার। এ ব্যাপারে এনজেএমসির কার্যত কোনও দায়িত্ব নেই।” তাঁর অভিযোগ, কারখানায় যখন তখন বাইরের লোক ঢুকে পড়ছে। অনেক সময়েই কর্মীকে নিজের জায়গায় পাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে কিছু বলতে গেলে সংশ্লিষ্ট অফিসারকে শাসানো হয়। এই ভাবে মিল চালানো অসম্ভব।
মিলে উৎপাদন যে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হচ্ছে, তা অবশ্য কবুল করে নিয়েছেন তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়ন অনুমোদিত ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ জুট ওয়ার্কার্সের সভাপতি শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তবে কতৃর্র্পক্ষের বাকি অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। বুধবার শোভনদেববাবু বলেন, “আজ আমি কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলেছি। কারাখনায় উৎপাদন কী ভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা কথা বলতে রাজি। আমরা চাই পুজোর আগেই মিলটি ফের চালু হোক।”
উৎপাদন নিয়ে অভিযোগ আছে কেনিসন এবং কাটিহারের মিল দু’টিকে নিয়েও। তবে সেখানে কর্মীদের বিরুদ্ধে উচ্ছৃঙ্খলাতার অভিযোগ নেই কর্তৃপক্ষের। সুব্রতবাবু বলেন, “ওই দুটি মিলে খড়দহের থেকে উৎপাদনশীলতা বেশি হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। মিলের কর্মীরা খড়দহের থেকে অনেক বেশি শৃঙ্খলাবদ্ধ। তবে উৎপাদন না-বাড়লে ওই মিলদু’টি নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। বিআইএফআরের প্রকল্প অনুযায়ী মিলগুলির লোকসান মেটানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা ধার্য করা আছে। তাই অনির্দিষ্টকাল লোকসান করে মিলগুলিকে চালানো সম্ভব নয়।” |