ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কথা মাথায় রেখে সুন্দরবনকে পৃথক জেলার মর্যাদা দেওয়া যায় কিনা, তা নিয়ে প্রশাসনের উচ্চ মহলে ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়েছে। ঘটনাচক্রে, বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রশাসনিক বৈঠকে এসে সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও।
জলজঙ্গলে ঘেরা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য এবং জীবন-জীবিকা কোনও ভাবেই আলিপুর বা বেহালার মতো দক্ষিণ ২৪ পরগনার শহর-লাগোয়া এলাকার সঙ্গে মেলে না। একই জেলার মধ্যে এত বিভিন্নতা থাকায় আইন-শৃঙ্খলার দিক থেকে বা প্রশাসনিক ভাবেও নানা সমস্যা হয় বলে প্রশাসনেরই একাংশের মত। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র মানুষের চাহিদা বা সমস্যার ধরন দক্ষিণ শহরতলির বাসিন্দাদের সঙ্গে কোনও ভাবেই এক করে দেখা যায় না। এরই প্রেক্ষিতে সুন্দরবনকে নিয়ে পৃথক জেলার ভাবনা-চিন্তা শুরু। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “প্রকৃতিগত ভাবে সুন্দরবনের বৈচিত্র্যকে প্রশাসনিক স্বীকৃতি দেওয়া যায় কিনা, তা ভেবে দেখা দরকার।” |
জেলায় জেলায় ‘মিনি মহাকরণ’ তুলে নিয়ে গিয়ে সুশাসনের যে বার্তা দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী, সুন্দরবনের জন্য পৃথক জেলার চিন্তা তারই অনুসারী বলে মনে করছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা। ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দার্জিলিঙের মতো পাহাড়ে ঘেরা ছোট্ট একটি উপত্যকা যদি অনন্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্য পৃথক জেলার মর্যাদা পেতে পারে, তবে সুন্দরবনের ক্ষেত্রেও পৃথক জেলার চাহিদা অযৌক্তিক নয়। সুপ্রশাসনের লক্ষে তা জরুরি বলে মনে করেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের একাংশও। এ দিন জনসভায় দার্জিলিংকে ‘মডেল’ বলে উল্লেখ করেন মমতা।
পঞ্চায়েত ভোটে জিতে দ্বিতীয় বারের জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের ক্ষমতায় এসে বুধবারই প্রথম জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী। পৈলানে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে বৈঠক শুরু হয় বেলা ১টা নাগাদ। প্রায় সওয়া ১ ঘণ্টার বৈঠকের শুরুতেই একশো দিনের কাজে গতি আনার ব্যাপারে জোর দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “রাজ্য জুড়ে প্রতিটি জেলায় উন্নয়নের কাজ তদারকি করার জন্য টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। ওই ফোর্স উন্নয়নের কাজের খতিয়ান নেবে। সাত দিন অন্তর জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে রিপোর্ট জমা দেবে।” তিনি জানান, গোটা বিষয়টি তদারকি করবেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জন্য নির্দিষ্ট দায়িত্ব পেয়েছেন ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহ। সভাধিপতি সামিমা শেখ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “ও গত পাঁচ বছর কাজ করেছে। অনেকটা কাজ শিখেছে।” এই প্রসঙ্গেই জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় রেখে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। ডায়মন্ড হারবারে মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত তৈরি করার জন্য জেলাশাসক শান্তনু বসুকে অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। থানার আইসি ও ওসিদের অনুরোধ করেন, “পারলে স্কুলের মিড ডে মিল কেমন হচ্ছে দেখুন।” পুলিশ আধিকারিকদের মিড ডে মিলের খাবার চেখে দেখার অনুরোধও করেছেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন ঈষৎ কড়া মেজাজে ছিলেন মমতা। মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্যের কাজে অখুশি হয়ে তাঁকে মৃদু ধমক দেন। বেশি কথা বলায় বকুনি খান আর এক মহিলা বিধায়ক। সরকারি সংস্থার বোতলবন্দি জল ব্যবহার না করে বৈঠকে কেন বেসরকারি সংস্থার জল আনা হয়েছে, তা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন।
প্রশাসনিক বৈঠকের পরে ডায়মন্ড হারবারের সরিষা মাঠে জনসভায় মমতা বলেন, “আগে মানুষকে তাঁর কাজের জন্য মহাকরণে যেতে হত। এখন আমি মহাকরণকে জেলায় জেলায় নিয়ে চলে আসছি।” ইমামদের বলেন, “আপনারা এত ঘাবড়াবেন না। আপনাদের পাশে আমরা আছি।” কেন্দ্র সরকারের পেনশন বিলের সমালোচনাও করেছেন তিনি।
মঙ্গলবারই উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে প্রশাসনিক বৈঠকে যেতে গিয়ে যশোহর রোডের পরিস্থিতি নিজের চোখে দেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন বলেন, “অনেকে দেখাচ্ছে রাস্তা খারাপ। কিন্তু বেশির ভাগই কেন্দ্রীয় সরকারের রাস্তা। আমাদের অধীনে যে রাস্তাগুলি আছে, আমাদের টাকায় যতটা কুলোবে, ঠিক করার চেষ্টা করব।” |