|
|
|
|
দুর্গতদের হাতে-হাতে ক্ষতিপূরণ |
পঞ্চায়েত ভোট পরবর্তী জেলা সফরে কাল কোলাঘাটে মুখ্যমন্ত্রী |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
মাসখানেকও হয়নি। টানা বৃষ্টি আর ব্যারাজের ছাড়া জলে কোথাও নদীর পাড় উপচে জল ঢুকেছিল লোকালয়ে। কোথাও বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন হয়েছিল বিস্তীর্ণ এলাকা। জলে ডুবে গিয়ে নষ্ট হয়েছিল হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান, সব্জি, ডাল এমনকী ফল, ফুল। মাটির বাড়ি ভেঙে, চালা উড়ে আশ্রয় হারিয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁদের সাহায্য করতে কাল, শুক্রবার কোলাঘাটে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বলাকা মঞ্চ সংলগ্ন মাঠে প্রশাসনিক সভায় দুই জেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের হাতে তুলে দেবেন মিনিকিট (থাকবে যে কোনও একটি শস্যের বীজ এবং সার)। এ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবীদের দেওয়া হবে হাঁড়ি, জাল, মাছের চারা, প্রাণিপালকদের হাঁস-মুরগি। আর যাঁদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে তাঁদের আর্থিক সাহায্য এমনকী গৃহস্থালীর সামগ্রী দেওয়া হবে। তবে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আপাতত প্রতীকী হিসাবে কয়েকজনের হাতে অনুদানের টাকা তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। বাকিরা কবে পাবেন, স্পষ্ট ভাবে জানাতে পারেনি প্রশাসন।
গত অগস্টে পশ্চিম মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। জানুয়ারি থেকে অগস্টএই আট মাসে গড় বৃষ্টির (১ হাজার ১২৬ মিলিমিটার) তুলনায় অনেক বেশিই বৃষ্টি হয়। অতিবৃষ্টির ফলে নদীতে জল বাড়তে শুরু করে। সঙ্গে ব্যারাজ থেকেও প্রচুর পরিমাণ জল ছাড়া হয়। ফলে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেশ কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ দিকে, পূর্ব মেদিনীপুরে কাঁসাইয়ের বাঁধ ভেঙে তমলুক ও পাঁশকুড়া ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। হেক্টরের পর হেক্টর জমি জলের তলায় চলে যায়। প্রশাসন সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ৩০ হাজার ৫২৭ হেক্টর জমির চাষ নষ্ট হওয়ায় ক্ষতির মুখ দেখেছেন প্রায় ১ লক্ষ ৬ হাজার ৮৫০ জন কৃষক। পূর্বে সংখ্যাটা আরও বেশি। তারই মধ্যে দুই জেলার ৫০ জন করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে এদিন ক্ষতিপূরণ হিসেবে মিনিকিট দেওয়া হবে। পশ্চিমের জেলা কৃষি আধিকারিক নিমাইচন্দ্র রায় বলেন, “কৃষকদের সাহায্য করতেই সরকারের এই উদ্যোগ। ব্লক ধরে তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।” জানা গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের যে মিনিকিট দেওয়া হবে, তার মধ্যে থাকবে যে কোনও একটি শস্যের বীজ এবং সার। শস্যের মধ্যে ধান, সরষে, ছোলা, মুসুর, বাদাম, মুগ। ধানের ক্ষেত্রে ৬ কেজির বস্তা হবে। সরষে ১ কেজি, ছোলার ৪ কেজি, মুসুরের ৪, বাদামের ১৫, মুগের ৪ কেজি। সঙ্গে ১০ কেজি সারের বস্তা। এই মিনিকিটে রবি মরসুমে চাষ হবে।
প্রাথমিক পর্যালোচনায় দফতর দেখছে, সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টিতে পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৩টি ব্লক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে খড়্গপুর-২, দাঁতন-১, কেশিয়াড়ি, ডেবরা, ঘাটাল, দাসপুর-১, দাসপুর-২, মেদিনীপুর সদর, কেশপুর, গোপীবল্লভপুর- ১, গোপীবল্লভপুর- ২, সাঁকরাইল এবং নয়াগ্রাম। নয়াগ্রামের ৫১টি ক্ষতিগ্রস্ত মৌজায় নষ্ট হয়েছে ৫৫০ হেক্টর জমির চাষ, সাঁকরাইলের ৪১টি মৌজায় ৯০০ হেক্টর, গোপীবল্লভপুর ২-এ ৪২টি মৌজায় ৯৫০ হেক্টর, গোপীবল্লভপুর ১-এ ৩৭টি মৌজায় ৫৩১ হেক্টর, কেশপুরে ৬৭টি মৌজায় ৫ হাজার ৬৭৫ হেক্টর, মেদিনীপুর সদরে ১৫টি মৌজায় ৫৫০ হেক্টর জমির চাষ। অন্যদিকে, দাসপুর ২-এ ৮৭টি মৌজার ৫ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমির চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দাসপুর ১-এ ১২৬টি মৌজার ৫ হাজার ৬১০ হেক্টর জমির চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ঘাটালে ৪৭টি মৌজার ২ হাজার ৫৩৫ হেক্টর, ডেবরার ৫৫টি মৌজার ৯৫০ হেক্টর, কেশিয়াড়ির ১৫টি মৌজার ২ হাজার ১০০ হেক্টর, দাঁতন ১-এ ৮৭টি মৌজার ৩ হাজার ৭৩৬ হেক্টর এবং খড়্গপুর ২-এ ১৪টি মৌজার ৫৫০ হেক্টর জমির চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা প্রাথমিক পর্যালোচনা। হিসেবে এখনও চলছে।
চূড়ান্ত হিসাবটা হয়নি পূর্ব মেদিনীপুরেও। তার বড় একটা কারণ এখনও তমলুকের বেশ কিছু এলাকা জলের তলায়। উপ-কৃষি অধিকর্তা প্রণবেশ বেরা জানান, বিভিন্ন ব্লকের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কাছ থেকে আবেদন নেওয়া হচ্ছে। চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হয়নি এখনও।
পূর্বে পান, সব্জি ও ফুল চাষেও ভালই ক্ষতি হয়েছে। উদ্যান পালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের জেলা আধিকারিক স্বপনকুমার শিট জানান, ২২০০ হেক্টর জমির পান, ১৯৩৮ হেক্টর জমির সব্জি, ৫৫০ হেক্টর জমির ফুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রাথমিক ভাবে ৩০ জনকে এ দিন সাহায্য করা হবে। ৪ জন কৃষককে পাওয়ার টিলার দেওয়া হবে বলেও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। |
চাষে ক্ষতির খতিয়ান |
জেলা |
ক্ষতিগ্রস্ত মৌজা |
চাষ নষ্ট |
পূর্ব মেদিনীপুর |
৮৩৮টি |
৬১,০০০ |
পশ্চিম মেদিনীপুর |
৬৮৪টি |
৩০,৫৭২ |
হিসাব হেক্টরে (প্রাথমিক ভাবে) |
|
পুরনো খবর: আমন চাষে ক্ষতি দুই জেলাতেই |
|
|
|
|
|