|
|
|
|
দায় নিচ্ছে না পুরসভা-পূর্ত দফতর |
বেদখল প্রতীক্ষালয়, রাস্তাতেই অপেক্ষা |
দেবমাল্য বাগচি • খড়্গপুর |
রোদ, ঝড় বা বৃষ্টি যাই হোক না কেন বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয় রাস্তাতেই। আর তাতেই নিজেদের ‘অভ্যস্থ’ করে ফেলেছেন পুরবাসী। কেননা, রেলশহর খড়্গপুরে হাতে গোনা কয়েকটি যাত্রী প্রতীক্ষালয় থাকলেও সেগুলির অবস্থা জরাজীর্ণ। দেখভালের দায়িত্বে থাকা পুরসভা ও পূর্ত দফতর বহু দিন আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
রেল শহরের সৌন্দর্যায়ন ও যাত্রী পরিষেবার কথা মাথায় রেখে আটের দশকে বেশ কিছু যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরি করেছিল পূর্ত দফতর ও পুরসভা। কথা ছিল সেগুলির দেখভাল করবেন তাঁরাই। প্রথম দিকে ভালই ছিল। তবে ধীরে ধীরে পুরসভা ও পূর্ত দফতরের কাজে গাফিলতি দেখা দেয়। পরে পুরসভা এক-দু’টি ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও অধিকাংশই বেহাল হতে শুরু করে। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইডলি দোকান থেকে জেনারেটরের ব্যবসা সবাই ‘আশ্রয়’ নিচ্ছে যাত্রী প্রতীক্ষালয়গুলিতে। ফলে সাধারণ মানুষ বাসের জন্য অপেক্ষা করেন পথেই। কখনও অন্যের দোকান বা কখনও ঝড়, বৃষ্টি বা চড়া রোদ্দুর মাথায় নিয়ে চলতে হয় যাত্রীদের। এমনই নজির বেশি করে চোখে পড়ছে পুরাতন বাজার, ইন্দা এলাকায়।
তবে অধিকাংশ এলাকাতেই এখনও গড়েই ওঠেনি কোনও যাত্রী প্রতীক্ষালয়। ধরা যাক, ইন্দার কথা। এখানে প্রতিদিনই থানা, অফিস ও পড়ুয়াদের যাতায়াত লেগেই রয়েছে। এই মোড়েই অবস্থিত যাত্রী প্রতীক্ষালয়টি অন্ধকার কূপে পরিণত হয়েছে। বছর চারেক আগে ওই প্রতীক্ষালয়ের শৌচালয় দেখভালের জন্য স্থানীয় ‘কেওয়াইসি সেভেন স্টার’ ক্লাবকে লিজে দেওয়া হয়েছে। কথা রয়েছে, শৌচালয়ের পয়সা নেবে ক্লাবটিই। ক্লাবের কর্মকর্তা সুপ্রিয় ঘোষ বলেন, “আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে যাত্রী প্রতিক্ষাগার ও সংলগ্ন শৌচাগারটির দেখভাল করছি। বিদ্যুৎ বিল মেটাচ্ছি।” তবে বেহাল দশা ঘোচেনি সংলগ্ন প্রতীক্ষালয়ের। নেই টিউবলাইট। মাঝেমধ্যে টিমটিম করে জ্বলে বাতি। রাত হলে কখনও তাসের আসর বা কখনও স্থানীয় যুবকদের বসে আড্ডার আদর্শ স্থান হয়ে উঠেছে জায়গাটি। সেখানেই জমেছে কারও দোকানের বাতিল হওয়া আসবাব বা সাইকেল স্ট্যান্ডের সাইকেল-সহ নানা ছাঁট সামগ্রী। নিত্যযাত্রী সরকারি কর্মী সোমা সেনগুপ্তর কথায়, “রোজ এখান থেকে নামা-ওঠা করলেও প্রতীক্ষালয়টির এত করুণ অবস্থা দেখে ঢোকার প্রবৃত্তি হয়নি কখনও। সন্ধ্যায় আলো জ্বলতে দেখি না। মদ্যপদের ভিড়ে রীতিমতো ভয় লাগে ওখানে ঢুকতে। তাই রোদ বৃষ্টিতেই দাড়াই। পুরসভার বিষয়টিতে নজর দেওয়া উচিত।” |
|
খড়্গপুর পুরাতন বাজার যাত্রী প্রতীক্ষালয় ডেকরেটরদের দখলে। —নিজস্ব চিত্র। |
পুরাতন বাজারের মোড়ের যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের অবস্থা আরও করুণ। অপরিচিত মানুষ বুঝতেও পারেন না যাত্রী প্রতীক্ষালয়টি ঠিক কোথায়। দিনের পর দিন সংস্কারের অভাবে ধুঁকতে থাকা প্রতীক্ষালয়ের ঠিক সামনে বিদ্যুৎ দফতর বসিয়ে দিয়েছে এক ট্রান্সফরমার। এর পরেই যাত্রী প্রতীক্ষালয় হয়ে উঠেছে স্থানীয় একাংশ ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত সম্পত্তি। কিছু দিন আগে পর্যন্ত সেখানেই জেনারেটর চালিয়ে ব্যবসা করতেন এক ব্যবসায়ী। আবার এখন তা হয়েছে ডেকরেটরের টেবিল রাখার জায়গা। ফলে বাসচালকেরাও বাস দাঁড় করাচ্ছেন যাত্রী প্রতীক্ষালয় থেকে কিছুটা দূরেই। মেদিনীপুরের বাসের অপেক্ষায় থাকা অচিন গিরির কথায়, “মাঝে মধ্যেই খড়্গপুর আসি। কোথাও তো যাত্রী প্রতীক্ষালয় দেখি না। বৃষ্টি পড়লে লোকের দোকানে দাঁড়াই।”
একইভাবে খড়্গপুর কলেজের উল্টোদিকের বহু পুরনো যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে এখন সকালে চলে ইডলি দোকান। সেখানে বসার জায়গায় ইডলি দোকানের খরিদ্দারদের ভিড়। কিন্তু দেখার কেউ নেই। পুরসভা ও পূর্ত দফতর সংস্কারের জন্য একে অপরের দিকে দায় ঠেলাঠেলিতেই ব্যস্ত। আবার পুরসভার সামনে ঝাপেটাপুর মোড়ের যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে কুকুর ও ভবঘুরেদের ভিড়। এমনকী কৌশল্যা মোড়, কমলাকেবিন, বোগদা এলাকার বাসস্টপে যাত্রী প্রতীক্ষালয় না থাকায় ক্ষোভ বাড়ছেই।
কী বলছে নাগরিক পরিষেবার দায়িত্বে থাকা পুরসভা?
পুরসভার পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে এর জন্য দায়ী করেছেন তৃণমূলকে। তাঁর কথায়, “যাত্রী প্রতীক্ষালয়গুলির অবস্থা আমাদের নজরে এসেছে। পুজোর পরেই দেখব কী করা যায়। তবে ইন্দা কলেজ ও পুরাতন বাজারে প্রতীক্ষালয়টি পূর্ত দফতরের করার কথা।” নিরাপত্তার প্রশ্নে তিনি বলেন, “যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রশাসনের। চিঠি দিয়ে প্রশাসনকে তা জানাব।” কৌশল্যা মোড়ে একটি প্রতীক্ষালয় গড়ার পরিকল্পনার তিনি জানান। তবে পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র বলেন, “তিরিশ বছর আগে কী হয়েছে বলতে পারব না। তবে এখন কোনও যাত্রী প্রতীক্ষালয় আমদের সংস্কার বা দেখভালের কথা আমাদের নয় বলে জানি। সংস্কার পুরসভাই করে।”
তবে, দায় ঠেলাঠেলি নয় পুরবাসী চান নাগরিক পরিষেবা। |
|
|
|
|
|