কেউ কাঁদছে, কেউ বা বসে পড়েছে রাস্তার ধারে। আর অভিভাবকেরা উদভ্রান্তের মতো ছুটে বেড়াচ্ছেন একটি গাড়ি বা রিকশার জন্য।
বুধবার হাওড়ায় স্কুলগাড়ি মালিকদের আচমকা ডাকা ধর্মঘটের জেরে এটাই ছিল দিনভরের ছবি। পুলিশি জুলুম এবং মোটর ভেহিকল্স দফতর বৈধ লাইসেন্স না দেওয়ার প্রতিবাদে এ দিন ধর্মঘটের ডাক দেন স্কুলগাড়ি মালিকেরা। আগাম না জানিয়ে স্কুলগাড়ি ধর্মঘট ডাকার ফলে শুধু পড়ুয়ারা নয়, চরম নাকাল হতে হয়েছে অবিভাবকদেরও। সকালে বাড়িতে স্কুলগাড়ি না আসায় কাজে না গিয়ে ছেলেমেয়েদের অটো বা রিকশা করে স্কুলে পৌঁছতে হয়েছে। ফেরার সময়ে তা-ও না মেলায় রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরে পড়ুয়াদের নিয়ে ভিড়ে ঠাসা বাসে উঠতে হয় অভিভাবকদের। কিছু স্কুলে ছিল ইউনিট টেস্ট। সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে তারা। |
আচমকা ধর্মঘটে অভিভাবক এবং পড়ুয়াদের যে সমস্যায় পড়তে হয়েছে, মানছেন স্কুলগাড়ি মালিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, বৈধ লাইসেন্স না থাকায় পুলিশ প্রতিদিন তাঁদের এক-একজনকে দু’তিন হাজার টাকার কেস দিচ্ছে। ফলে রাস্তায় গাড়ি বার করাই মুশকিল হয়ে গিয়েছে। এ দিন বৈধ লাইসেন্সের দাবিতে স্কুলগাড়ির মালিকেরা ‘হাওড়া মোটর ভেহিকল্স দফতর’-এ গিয়েও বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, গাড়ির সমস্ত কাগজ জমা দেওয়া সত্ত্বেও মোটর ভেহিকল্স বৈধ লাইসেন্স দিচ্ছে না। দফতরের এআরটিও সোমনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যে সব গাড়ির মাথার আচ্ছাদন নরম ত্রিপল জাতীয় জিনিস দিয়ে তৈরি, সেগুলি স্কুলগাড়ি হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না। হাওড়ায় এই ধরনের গাড়িই বেশি চলে। তাই এ সব গাড়িকে বৈধ লাইসেন্স দেওয়া যাবে না।” এআরটিও আরও জানান, মার্চে রাজ্য সরকার নির্দেশ দিয়েছিল, যে সব স্কুলগাড়ির বয়স ১০ বছরের কম, সেগুলি চালানো যাবে না। এ ছাড়া, যে সব স্কুলগাড়ি বাণিজ্যিক কর দেয়নি তাদের বৈধ লাইসেন্স দেওয়া হবে না।
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র এ দিন মহাকরণে বলেন, “আজ, বৃহস্পতিবার থেকে কোনও স্কুলগাড়ি বন্ধ থাকলে কড়া ব্যবস্থা নেব। আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াব।” তিনি বলেন, “১০ হাজার বেআইনি স্কুলগাড়ি চলছে। তাদের আবেদন করতে বলা হয়েছিল। মাত্র ১৪টি আবেদন জমা পড়েছে। এ মাস পর্যন্ত আবেদন জমা দেওয়ার দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চাইলে আমরা দু’দিনে স্কুলগাড়ি বন্ধ করে দিতে পারি। কিন্তু খুদে পড়ুয়ারা অসুবিধায় পড়বে বলে তা করা যাচ্ছে না। আমরা বিকল্প পথ খুঁজছি।” |