|
|
|
|
|
আইএম জঙ্গিদের মূল ঘাঁটি
বিহারই, নিশ্চিত এনআইএ স্বপন সরকার • পটনা |
|
ইয়াসিন ভটকলকে গ্রেফতার করা গোয়েন্দাদের কাছে বড় সাফল্য হলেও তাঁরা মোটেও স্বস্তিতে নেই।
ইয়াসিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, বিহারের সমস্তিপুরের বাসিন্দা তেহসিন আখতার ওরফে মনু এবং পাক নাগরিক ওয়াকাস ভারতে যে কোনও মুহূর্তে বড় কোনও নাশকতা ঘটাতে পারে বলে গোয়েন্দাদের আশঙ্কা। তাঁদের দাবি, ওই দু’জনই বর্তমানে বিহারে লুকিয়ে আছে। এ বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি হায়দরাবাদের জোড়া বিস্ফোরণে ওই দু’জন জড়িত বলে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) জানতে পেরেছে। দু’জনের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে হায়দরাবাদ আদালত। ওয়াকাসের নামে এনআইএ ১০ লক্ষ টাকার পুরস্কারও ঘোষণা করেছে। ওই দু’জন যে বিহারে লুকিয়ে আছে, এমন তথ্য হাতে আসার পরেই বিহার পুলিশকে সতর্ক করে দিয়েছে এনআইএ।
ওই সতর্কবার্তায় এনআইএ বলেছে, বিহারে লুকিয়ে থাকা দুই জঙ্গিকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে না পারলে ফের বড় ধরনের কোনও বিস্ফোরণের মুখোমুখি হতে পারে দেশ। বিহার পুলিশের কাছে ওই দুই জঙ্গির ছবিও পাঠিয়েছে এনআইএ।
বস্তুত, ভটকলকে জেরা করে তদন্তকারীরা বুঝতে পেরেছেন, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের এই ‘অপারেশনাল চিফ’ নিজে কর্নাটকের ভটকলের বাসিন্দা হলেও, এবং পুণে, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো দেশের বড় বড় শহরে বিস্ফোরণ ঘটালেও বিহারই এখন তার মূল ঘাঁটি। ইয়াসিন গ্রেফতার হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত বিহারের বিভিন্ন জায়গা থেকে জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত সন্দেহে ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমনিতেই আইএমের দ্বারভাঙা মডিউল বা দ্বারভাঙা গোষ্ঠীর স্রষ্টা বলা হয় ইয়াসিনকে। আগে যেখানে জঙ্গি হামলা হলেই উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ের নাম উচ্চারিত হত, একই ভাবে মূলত ২০১০ থেকে ভারতে জঙ্গিদের ঘটানো বিস্ফোরণের সঙ্গে ‘দ্বারভাঙা’ সামনে চলে এসেছে।
নেপাল সীমান্তে ইয়াসিনের সঙ্গেই ধরা পড়েছে দ্বারভাঙা মডিউলের গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গি আসাদুল্লাহ আখতার ওরফে হাড্ডি। কিন্তু তেহসিন আখতার ওরফে মনু-সহ আইএমের দ্বারভাঙা মডিউলের সাত-আট জন এখনও অধরা বলে গোয়েন্দাদের বক্তব্য। পুলিশ সম্প্রতি তেহসিন আখতারের বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাঁর ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে।
কিন্তু ইয়াসিন কেন বিহারকেই তার ঘাঁটি হিসেবে বেছে নিল?
ভটকলকে জেরা করার পর এনআইএ-র ধারণা, দেশের বড় বড় শহরগুলিতে আইএম বিস্ফোরণ ঘটানো পর এবং যে শহরগুলি তাদের সম্ভাব্য টার্গেট, সেই তালিকা ঘোষণা করে দেওয়ার পর সেই সব জায়গায় পুলিশি তৎপরতা ও গোয়েন্দা নজরদারি ২০০৮ থেকে অনেকটাই বেড়ে যায়। প্রসঙ্গত, আইএমের সম্ভাব্য টার্গেট যে শহরগুলি, তার মধ্যে কলকাতার নামও রয়েছে। কিন্তু পটনা তো বটেই, বিহারের অন্য কোনও শহরও আইএমের ‘টার্গেট লিস্ট’-এ নেই। সে দিক দিয়ে বিহারে পুলিশের চোখ এড়িয়ে কাজ করা তুলনায় সহজ। তা ছাড়া, সংগঠনে বিহারের যুবকদের সামিল করা এবং বিহার থেকে নেপাল ও বাংলাদেশ হয়ে পাকিস্তানে আত্মগোপন করা সহজ।
এনআইএ সূত্রের খবর, ইয়াসিন দিল্লিতে ঘাঁটি বানিয়ে কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারে, সেখানে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই বিহারে সে আইএমের প্রশিক্ষণ, নিয়োগের মতো কাজ সরিয়ে আনে। প্রথমে দ্বারভাঙায় কাজ শুরু করে ইয়াসিন। তার পর ধীরে ধীরে মধুবনি ও সমস্তিপুরে সে আইএম-কে ছড়িয়ে দেয়। আরও গভীরে নিজের শিকড় গাড়তে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস অর্জন করতে সমস্তিপুরের মেয়েকে বিয়েও করে ইয়াসিন।
মধুবনির মৌলানা ওমর মাদানি নামে লস্কর-ই-তইবার এক জঙ্গির সঙ্গে ২০০৬ সালে নেপালে ইয়াসিনের পরিচয় হয়। ২০০৯ সালে মাদানি দিল্লি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পরবর্তী সময়ে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) এই মাদানিকে লালবাজারে নিয়ে গিয়ে জেরাও করে। মাদানির মামাবাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি বীরভূম জেলায়। ইয়াসিনও একাধিক বার কলকাতায় গিয়ে বিস্ফোরক নিয়ে এসেছে। মাদানির সঙ্গে কথা বলার পরেই ইয়াসিন বুঝতে পারে, বিহারে সে নিরাপদে কাজ করতে পারবে। উচ্চশিক্ষিত ও কম শিক্ষিত, অবস্থাপন্ন ও গরিবসব ধরনের যুবকদেরই আইএমে সামিল করেছিল ইয়াসিন। বিহারের গ্রামীণ এলাকায় কাজ করতে এসে ইয়াসিন বুঝে যায়, এখানে সে সন্দেহের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে পারবে। |
|
|
|
|
|