সল্টলেকের দত্তাবাদে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর স্তম্ভ তৈরির ক্ষেত্রে জটিলতা অবশেষে কাটল। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, দত্তাবাদে বস্তির ৫৮টি পরিবারকে পুনর্বাসন দিয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। এর পরেই সেখানে কাজ শুরু করবে ‘কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন’ (কেএমআরসি)। এই জটিলতা কাটাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক হয়েছে, দু’মাসের মধ্যে অস্থায়ী বাড়িগুলি তৈরি করে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রশাসনের অন্দরের খবর, দীপাবলির আগে ওই এলাকা থেকে কাউকে সরানো বা বাড়ি ভাঙার কাজ করা হবে না।
দত্তাবাদে জমি-সমস্যার জন্য ৩৬৫ মিটার অংশে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর স্তম্ভ তৈরির কাজ দীর্ঘদিন আটকে রয়েছে। বস্তিবাসীদের সরানোর জন্য টালবাহানা চলছে বহু দিন। সম্প্রতি এই কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে উদ্যোগী হন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিষয়টি দেখতে বলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে। এর পরেই বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু এবং বিধাননগর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত একসঙ্গে দাঁড়িয়ে কেএমআরসি-র সমীক্ষার কাজ করিয়েছেন। সুজিতবাবু বলেন, “কতগুলি বাড়ি ভাঙা হবে, কী ভাবে পুনর্বাসন হবে, তা নিয়ে আলোচনার পরে কাজ শুরু হবে।” বিধাননগর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত বলেন, “পুরমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, কেএমআরসি যাতে সমীক্ষার কাজ করতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে। আমরা তা করে দিয়েছি। এখন নগরোন্নয়ন দফতর এবং কেএমআরসি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।” কেএমআরসি-র কর্তারা জানান, মুখ্যমন্ত্রী ও পুরমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পরে বিষয়টি জটিলতা অনেকটাই কেটেছে। আগে ঠিক ছিল, এই অংশে ১২টি স্তম্ভ হবে। কিন্তু জমি-সমস্যার জন্য নকশা ও প্রযুক্তি বদলে ঠিক হয়েছে স্তম্ভ হবে ৭টি। এই কাজের জন্য কেএমআরসি বাড়তি ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, দত্তাবাদে সমীক্ষার পরে কেএমআরসি-র দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, মেট্রোর স্তম্ভ তৈরির জন্য মোট ৫৮টি বাড়ি ভাঙতে হবে। নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, ওই ৫৮টি পরিবারকে এখন দত্তাবাদের পাশে অস্থায়ী বাড়ি করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। ওই বাড়ি তৈরির কাজ আগামী সপ্তাহেই শুরু করতে চায় কেএমআরসি। পরে বিদ্যাধরী বিদ্যালয়ের দফতরে নগরোন্নয়ন দফতরের জায়গায় আটতলা বাড়ি করে তাঁদের স্থায়ী পুনর্বাসন দেওয়া হবে।
বুধবার দত্তাবাদে গিয়ে দেখা যায়, ৫৮টি বাড়ির দেওয়ালে নীল রং দিয়ে দাগ দেওয়া হয়েছে। বস্তির সামনেই বড় জলাশয়। পাশেই বিদ্যাধরী বিদ্যালয়। লাগোয়া ফাঁকা জমি নগরোন্নয়ন দফতরের। ঠিক হয়েছে, আপাতত ওই জমিতেই তৈরি হবে পুনর্বাসনের অস্থায়ী বাড়ি। কেএমআরসি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বনাথ দেওয়ানজি বলেন, “আগে অস্থায়ী বাড়িগুলি তৈরি হবে। সময় লাগবে দু’মাস। এর জন্য প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার প্রকল্প তৈরি হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।” তিনি জানান, এর পরে পাশের ফাঁকা জমিতে একটি আটতলা বাড়ি তৈরি করে ওই পরিবারগুলিকে স্থায়ী ভাবে আনা হবে। সেখানে প্রতিটি পরিবার পাবে ২৬৪ বর্গফুটের এক কামরার ফ্ল্যাট।
এই পুনর্বাসন প্রকল্প সম্পর্কে কী বলছে ওই পরিবারগুলি?
১১ নম্বর বাড়ির মালিক মদন বরের ছেলে রাজা বর বলেন, “পুনর্বাসন পেলে বাড়ি ছেড়ে দিতে আমাদের আপত্তি নেই।” ১৩ নম্বর বাড়ির মালিক কাশীনাথ বর-ও বলেন, “শুনেছি আমাদের ২৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। উন্নয়নের স্বার্থে আমরা এই শর্তে রাজি।” বস্তির অনেক বাসিন্দা অবশ্য ফ্ল্যাটের পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিপূরণেরও দাবি করেছেন। এই বিষয়টি নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে বলে নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর। |