|
|
|
|
|
|
মিউচুয়াল ফান্ড |
|
সীমানা ছাড়িয়ে
লক্ষ্য ছুঁতে যে-রাস্তায় হাঁটছেন, এই মুহূর্তে হয়তো
তা তেমন সুবিধার ঠেকছে না।
পথ বদলান। উঁকি মারুন চেনা
ছকের বাইরে। চেখে দেখুন ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড।
নীলাঞ্জন দে |
|
ভারতে শেয়ার বাজার অনিশ্চয়তার অসুখে ভুগছে। টাকার অস্থির ওঠা-পড়া, লগ্নির দমবন্ধ পরিবেশ, ও মন্থর আর্থিক বৃদ্ধির মতো অর্থনীতির নানা সঙ্কটের কারণে মাঝেমধ্যেই রুদ্ধ হচ্ছে সূচকের এগোনোর পথ। অর্থনীতি কখনও একটু বিপথে গেলেই সব শক্তি হারিয়ে তা ধসে পড়ছে। আবার কখনও কোথাও এক চুল আশার আলো দেখলেই লাফিয়ে উঠছে। আর বাজারের এই অনিশ্চয়তায় চোখে সর্ষে ফুল ফান্ডে লগ্নিকারীদের। কারণ বহু ফান্ডের মূল্যই কমছে। আগামী দিনে তা আরও নামতে পারে। এই অবস্থায় লগ্নিকে অক্সিজেন জোগানোর সব থেকে ভাল রাস্তা, দেশের চেনা চৌহদ্দির বাইরে চোখ রাখা।
নতুন ঠিকানা
ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড। অর্থনীতির বদলে যাওয়া সমীকরণে এটাই হতে পারে আপনার ফান্ডে লগ্নির নতুন গন্তব্য। যেখানে তহবিল ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে নিতে আপনার বাজি হবে সাত সমুদ্র তেরো নদীর পাড়ের বিভিন্ন শেয়ার বাজার।
বিষয়টি এই রকম— একটি ফান্ড তার মূল্য বাড়ানোর জন্য টাকা খাটাচ্ছে ভারতের বাইরে একটি বা একাধিক দেশের বিভিন্ন সংস্থায়। অর্থাৎ সেটি তার তহবিলের টাকা বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার শেয়ারে ছড়িয়ে দিচ্ছে। চাইলে সংশ্লিষ্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা কোনও ফান্ডের তহবিল বণ্টন একটি দেশের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে পারে। আবার তা ছড়িয়েও দিতে পারে বিভিন্ন দেশের নানা ধরনের সংস্থায়। আর এগুলিকেই বলা হয় ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড। ভারতীয় লগ্নিকারীরা এই সব ফান্ড কিনতে পারেন। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে কিছু কিছু ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ইতিমধ্যেই বেশ তাক লাগানো রিটার্ন দিতে শুরু করেছে।
ভরসার খোঁজে
আপনার পাল্টা যুক্তি হতে পারে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভুগছে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার অনেকেই। তা হলে এ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ফান্ডের ঠিকানা বদলের প্রশ্ন উঠছে কেন?
অর্থনীতির ভিত কোন দেশের কতটা পোক্ত সেই বিতর্কে না গিয়ে আমি শুধু বলব, এই মুহূর্তে লগ্নি থেকে রিটার্ন পাওয়ার বিচারে বিদেশ, বিশেষত পশ্চিমের দেশগুলি খানিকটা এগিয়ে। তাদের শেয়ার বাজার বাড়ার সম্ভাবনা ভারতের তুলনায় বেশি। কারণ—
• ডলারের সাপেক্ষে টাকা এখনও দুর্বল।
• চলতি খাতে বাণিজ্য লেনদেন ঘাটতি (ডলার আয়-ব্যায়ের ফারাক) বিপুল।
• বেড়ে চলেছে মূল্যবৃদ্ধি।
• অর্থনীতির এই সব সঙ্কটের জেরে শেয়ার বাজার অস্থির।
• বাজার মাঝে মধ্যেই অনেক নেমে যাওয়ায় পড়ছে ফান্ডের মূল্য।
• অন্য দিকে, আমেরিকার মতো উন্নত দেশের বাজার উঁচু হারে বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল হচ্ছে। |
|
তিন সুবিধা
ইন্টারন্যাশনাল ফান্ডে লগ্নি করার পক্ষে অবশ্য শুধুমাত্র ভারতীয় অর্থনীতি বা বাজারের অনিশ্চয়তার দোহাই দেব না। এই রকম ফান্ডের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্যও এটিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। যেমন—
ক) এখানে ভৌগোলিক সীমানার বাধা টপকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামী সব সংস্থার শেয়ারে টাকা খাটাতে পারে ফান্ড। সাধারণ লগ্নিকারীরা এমন সুযোগ আর কোথায় পাবেন?
খ) অনেক বেশি সংস্থায় তহবিল ছড়িয়ে দেওয়া যায়। ফলে এমনিতেই লাভের সম্ভাবনা বাড়ে।
গ) গোটা বিশ্ব বাজারে সম্পদের যা পরিমাণ, তাতে ভারতের অবদান নগণ্য। শুধু শেয়ার বাজারই যদি ধরি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজারে যত টাকা খাটে, তার মাত্র ২% খাটে ভারতে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, ঝুঁকি তুলনায় কম। আর লাভের সুযোগ বেশি।
যেমন ধরুন...
ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড যে এখন আপনার তুরুপের তাস হতে পারে, সেটা বোঝানোর জন্যই আমি কয়েকটি উদাহরণ দেব। এটা করতে গিয়ে কিছু ফান্ডের নাম বলতে হবে। কিন্তু আপনারা এটা ভেবে বসবেন না যে, আমি কোনও বিশেষ ফান্ডের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছি বা সেটি কেনার জন্য সুপারিশ করছি।
পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে বহু আন্তর্জাতিক ফান্ডই ২০ শতাংশের কাছিকাছি রিটার্ন দিয়েছে। যেমন ধরুন, ‘আইসিআইসিআই প্রুডেনশিয়াল ইউএস ব্লুচিপ ইক্যুইটি’— গত ১২ মাসে এর রিটার্নের হার ছিল ৪৩ শতাংশের মতো। ফ্র্যাঙ্কলিন টেম্পলটন-এর ‘ফিডার ফ্র্যাঙ্কলিন ইউএস অপরচুনিটিজ’ রিটার্ন দিয়েছে প্রায় ৪২% এবং ডিএসপি ব্ল্যাকরক-এর ‘ইউএস ফ্লেক্সিবল ইক্যুইটি’ প্রায় ৩৪%।
বাছুন দেখেশুনে
বাজারে আপনার জন্য বেশ কয়েকটি ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড আছে। দেখেশুনে বেছে নিন। এই দেখাশোনার নিয়ম অবশ্য অন্যান্য সাধারণ ফান্ডের মতো একই রকম। যেখানে বিবেচ্য হবে—
• ফান্ডের তহবিল কোথায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে?
• ফান্ড ম্যানেজারের অতীত সাফল্য
• কোন খাতে খরচ কী রকম?
• কী রকম ফান্ডে লগ্নি করতে চান? যেগুলি মার্কিন সংস্থাগুলির শেয়ারে টাকা খাটায়, না কি যেগুলি এশিয়ার সংস্থাগুলির উপরেই বেশির ভাগ বাজি রাখে বা অন্য দেশ ভিত্তিক ফান্ডে?
লগ্নির রাস্তা
এ বার বলি কী পদ্ধতিতে ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড কাজ করে।
ভারতীয় লগ্নিকারীদের জন্য বাজারে আসা বেশির ভাগ ইন্টারন্যাশনাল ফান্ডই ‘ফিডার ফান্ড’। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট দেশের বাজারে ফান্ডগুলি আগে থেকেই থাকে (মাস্টার ফান্ড)। আর এ দেশের লগ্নিকারীরা টাকা লাগান ভারতে সেগুলির শাখা ফান্ডে। ওই ‘ফিডার ফান্ড’ এ দেশের বাজার থেকে তার সংগৃহীত টাকা লগ্নি করে ইন্টারন্যাশনাল ফান্ডটিতে। মানে ওই টাকা দিয়ে আন্তর্জাতিক ফান্ডটির ইউনিট কেনা হয়। সুতরাং ফিডার ফান্ডের মাধ্যমে ভারতীয় লগ্নিকারী টাকা ঢাললেন ইন্টারন্যাশনাল ফান্ডে। অতএব বলা যায়, ভারতের ইন্টারন্যাশনাল ফান্ডগুলি আসলে ‘ফান্ড অফ ফান্ডস’। যেখানে একটি ফান্ডের টাকা আর একটি ফান্ডে লগ্নি করা হয়।
কাজের পদ্ধতিটা এ রকম—
১) ধরা যাক, কোনও ইন্টারন্যাশনাল ফান্ডের জন্য ভারতে নিউ ফান্ড অফার (এনএফও) ছাড়ল মিউচুয়াল ফান্ড ‘X’।
২) কোনও ফান্ড সংস্থা বাজারে নতুন ফান্ড ছাড়লে (এনএফও) যে ভাবে তাতে লগ্নি করা হয়, সে ভাবেই নির্দিষ্ট মূল্যে এই এনএফও-র ইউনিট কিনতে পারবেন ভারতীয় লগ্নিকারীরা।
৩) চেক-এর মাধ্যমে নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা মেটাবেন। এবং লগ্নির অনুপাতে ইউনিট বরাদ্দ হবে লগ্নিকারীর নামে।
৪) এই ভাবে ভারতের বাজার থেকে তোলা টাকা এনএফও লগ্নি করবে নির্দিষ্ট ইন্টারন্যাশনাল ফান্ডে। অর্থাৎ এনএফও-র তহবিল দিয়ে কেনা হবে ইন্টারন্যাশনাল ফান্ডের ইউনিট।
৫) আসলে ফান্ড ‘X’ ওই ইন্টারন্যাশনাল ফান্ডেরই অংশ। সেখানে ভারতীয়দের বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে সেটি।
৬) এ ভাবে আপনার লগ্নির টাকা ইন্টারন্যাশনাল ফান্ডটিতে খাটছে। এবং সেটি আপনার তহবিল ছড়িয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার শেয়ারে। |
সাফল্যের মন্ত্র |
• ফান্ড বাছুন অত্যন্ত সতর্ক হয়ে ও ভেবেচিন্তে।
• আন্তর্জাতিক স্তরে কী ঘটছে খেয়াল করুন।
• বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারের খবর রাখুন।
• বিশ্ব অর্থনীতির হাল-হকিকত নিয়ে সচেতন হোন।
• ফান্ডের অতীত পারফর্ম্যান্স দেখে প্রভাবিত হবেন না।
তবে দেখুন ফান্ড ম্যানেজারের কাজের রেকর্ড।
• লক্ষ্য করুন কী ভাবে ফান্ডে তহবিল ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
• খরচের বিষয়টি হিসাবে রাখুন।
• নজর রাখুন আপনার ফান্ড কোন কোন বিদেশি সংস্থায় টাকা ঢালছে। |
|
লেখক উইশলিস্ট ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজর্সের ডিরেক্টর
(মতামত ব্যক্তিগত) |
|
|
|
|
|