সিরিয়া-সঙ্কট কূটনৈতিক পথেই মেটাতে চান ওবামা
যুদ্ধের উদ্বেগ থেকে মুক্তি। জন্মদিনে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপহার এটাই। কিন্তু রাসায়নিক অস্ত্র সমর্পণে আসাদের আশ্বাসে পুরোপুরি ভরসা করতে পারছেন না বারাক ওবামা।
গত কাল হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুম থেকে টেলিভিশনে ১৫ মিনিটের বক্তৃতায় তাই তিনি সাফ বলেছেন, সিরিয়া প্রশ্নে মার্কিন সেনা যতটা তৎপর হয়েছিল, সেখান থেকে সরে আসার প্রশ্ন নেই। তবে তাঁর দেশের রণক্লান্ত সাধারণ মানুষকে ওবামার আশ্বাস, সিরিয়ায় সামরিক অভিযান ঠেকাতে কূটনীতিকে একটা সুযোগ দিতে চান তিনি। দেশবাসীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে হেঁটে তিনি কখনওই কিছু করতে চাননি স্পষ্ট করে দেন এই বিষয়টিও।
মার্কিন প্রশাসনিক সূত্রের খবর, দেশের নাগরিক এবং কংগ্রেস দু’তরফেরই আস্থা অর্জনের শেষ চেষ্টা হিসেবে প্রথমে ওবামার এই সংক্ষিপ্ত বক্তৃতার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু গত কাল রাসায়নিক অস্ত্র সমর্পণের জন্য রুশ কূটনৈতিক প্রস্তাবে সায় দিয়ে গোটা বিষয়টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে আসাদের সরকার। যার ফলে এই মুহূর্তে যুদ্ধ স্থগিত রাখতে হয়েছে ওবামাকে। রাশিয়ার পদক্ষেপকে উৎসাহব্যঞ্জক আখ্যা দিয়েও ওবামা বলছেন, “এই প্রস্তাব সফল হবে কি না, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। রাসায়নিক অস্ত্র সমর্পণে যে চুক্তিই হোক, আসাদ-বাহিনী তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে কিনা সেটা যাচাই করতে হবে।” ওবামার মতে, যুদ্ধ ছাড়াই রাশিয়ার এই উদ্যোগ রাসায়নিক অস্ত্রের আশঙ্কা দূর করতে পারে। কারণ আসাদের বন্ধু বলেই রাশিয়া পরিচিত। কংগ্রেসকে তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে ভোটাভুটিও স্থগিত রাখা হচ্ছে।
যুদ্ধ স্থগিত। তবুও নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দেশ ছাড়ছেন সিরিয়াবাসী।
বুধবার জার্মানির হ্যানোভার বিমানবন্দরে। ছবি: এএফপি।
সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র কী ভাবে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তার পরিকল্পনা করতেই বৃহস্পতিবার ওবামার নির্দেশে মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি জেনিভায় যাচ্ছেন রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভ্রভের সঙ্গে দেখা করার জন্য।
আপাতত আর কোনও পদক্ষেপ করার আগে রাষ্ট্রপুঞ্জের তদন্ত-রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে চান ওবামা। কারণ তাঁর মতে, রাজনৈতিক পথে বিতর্ক মিটতে পারে, এমন সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। তবে কয়েক দিন আগেই হোয়াইট হাউস রাষ্ট্রপুঞ্জের তদন্তপ্রক্রিয়াকে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিল। তাদের মনে হয়েছিল, রাশিয়া যেন নিরাপত্তা পরিষদের দখল নিয়েছে। এখন রাশিয়ার প্রস্তাব পাল্টে দিয়েছে সবই।
সিরিয়ায় সীমিত সামরিক অভিযানে কংগ্রেস সদস্যদের ছাড়পত্র পেতে গত কাল পর্যন্তও মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন ওবামা। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মনে হয়েছিল, সেনেট এবং হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস দু’কক্ষেই ভোটে হেরে যাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর নিজের দেশের নাগরিকদের মন পেতে বক্তৃতা দিয়েও ওবামার উদ্দেশ্য সাধন হত না।
বস্তুত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওবামা নিজেও এ দিনের বক্তৃতায় স্পষ্ট করে দেন, “ইরাক আর আফগানিস্তানের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার পরে সেনা পাঠানোর প্রস্তাব কখনওই জনপ্রিয় হবে না, তা সে যতই সীমিত মাপের হোক না কেন।” একই সঙ্গে ওবামা বলেন, “সিরিয়ার মাটিতে মার্কিন সেনার পা পড়বে না। ইরাক বা আফগানিস্তানের মতো দীর্ঘমেয়াদি আক্রমণ, লিবিয়া বা কসোভোর মতো টানা আকাশপথে হামলাও হবে না। এ ক্ষেত্রে শুধুই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অর্থাৎ রাসায়নিক অস্ত্র ভাণ্ডার নির্মূল করতেই হামলা চালানো হতে পারে।” সীমিত হামলায় আসাদের কিছু আসবে-যাবে না বলে মনে করছেন যাঁরা, তাঁদের উদ্দেশে ওবামার বক্তব্য, “সীমিত হানা হলেও দ্বিতীয় বার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে ভাবতে হবে আসাদকে।”
কিন্তু সিরিয়া-সঙ্কট মোকাবিলায় ওবামার এই উদ্যোগে দ্বিধাবিভক্ত ওয়াশিংটনের বিশ্লেষকরা। কারণ তাঁর দ্বিতীয় বারের শাসনে এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। কেউ কেউ যুক্তি দিচ্ছেন, সামরিক অভিযান অবশ্যম্ভাবী প্রথমে এই ইঙ্গিত দিয়েও মাত্র এক দিনে সেই ঘোষণা থেকে পিছিয়ে এসে ওবামা বুঝিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট দ্বিধাগ্রস্ত। এমন সব ঘটনায় তিনি ধাক্কা খাচ্ছেন, যেগুলো তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এই ক্ষেত্রে তাঁকে যথেষ্ট পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে ওবামার পক্ষেও যুক্তি রয়েছে। কারও কারও মতে, এটা মার্কিন প্রেসিডেন্টের ধুরন্ধর কূটনৈতিক চাল। সিরিয়াকে যুদ্ধের হুমকি দিয়ে প্রকৃতপক্ষে আসল কাজটা হাসিল করতে চাইছেন ওবামা। সেটা হচ্ছে রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস। আর এই সুযোগে শেষ মুহূর্তে যুদ্ধের সম্ভাবনা থেকে সরে এসে দেশের মানুষেরও বিশ্বাস ফিরে পেলেন তিনি।
সিরিয়ায় যাই ঘটুক না কেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ভাবাচ্ছে অন্য একটি বিষয়। সেটা হচ্ছে, সে দেশের রাসায়নিক অস্ত্রভাণ্ডার খুঁজে পাওয়া এবং ধ্বংসের কাজটি খুব সহজ নয়। ইজরায়েলের সন্ত্রাসদমন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা জানাচ্ছে, ১৯৮০ সাল থেকে অন্তত এক হাজার টন রাসায়নিক অস্ত্র দেশের ৫০টি বিভিন্ন জায়গায় মজুত করেছে সিরিয়া। নব্বইয়ের দশকে রাষ্ট্রপুঞ্জের অস্ত্র সমীক্ষকরা ইরাক তছনছ করে ফেলেছিলেন সাদ্দামের রাসায়নিক অস্ত্রভাণ্ডারের খোঁজে। সিরিয়ায় কী হতে পারে, তা এই একটা উদাহরণ থেকেই স্পষ্ট জানাচ্ছেন পর্যবেক্ষকরা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.