দরজা-জানালা ভাঙা। খসে পড়ছে পলেস্তারা। ঝোপঝাড়ে ভরা চত্বর। রাত নামলেই ঘুটঘুটে অন্ধকার।
এমন এলাকায় অসামাজিক কর্মকাণ্ডে আশ্চর্যের কিছু নেই। দুর্গাপুরের বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা ‘হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন লিমিটেড’ (এইচএফসিএল)-এর আবাসন নিয়ে এমনটাই মত স্থানীয় বাসিন্দাদের। সম্প্রতি ওই আবাসনের কাছাকাছি একটি শিক্ষাকেন্দ্র থেকে উদ্ধার হয় এক মহিলা ও দু’টি শিশুকন্যার অর্ধদগ্ধ দেহ। তার কয়েক মাস আগেও এখানকার একটি পরিত্যক্ত আবাসনে এক ব্যক্তির দেহ মেলে। পরপর এই ধরনের ঘটনায় আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। নিরাপত্তার অভাবও অনুভব করছেন বলে জানান তাঁরা।
১৯৬৫ সালে দুর্গাপুরে এই সার কারখানা গড়ে ওঠে। উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী। সার তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ন্যাপথা ব্যবহার করে ১৯৭২ সালে ইতালীয় প্রযুক্তিতে উৎপাদন শুরু হয়। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে দেখা যায়, এই পদ্ধতিতে ইউরিয়া উৎপাদনের খরচ বেশি পড়ছে। তুলনায় কম দামে ইউরিয়া আমদানি করা যায়। ফলে ধীরে ধীরে কারখানাটি রুগ্ণ হতে থাকে। ১৯৯৮ সালে উৎপাদন একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। কারখানা চলে যায় বিআইএফআর-এর অধীনে। কারখানার ১১২৫ জন শ্রমিক-কর্মী স্বেচ্ছাবসর নেন। তাঁদের অধিকাংশই আবাসন ছেড়ে যান। রয়ে যায় ১৯৬টি পরিবার। পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে এই ফাঁকা আবাসনগুলির দরজা, জানালা ভেঙে নিয়ে পালিয়েছে চোরেরা। রাতের দিকে অসামাজিক কাজকর্মও চলে বলে অভিযোগ। তবু সেই খণ্ডহরের মধ্যে বাধ্য হয়ে বাস করে পরিবারগুলি। |
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট কাজ শুরু করে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে। কিন্তু দুর্গাপুর পুরসভায় একমাত্র এই ওয়ার্ডের ১৭৩, ১৭৪, ১৮১ ও ১৮২এই চারটি বুথ পড়ে যায় জেলা পুলিশের আওতায়। ঢিল ছোড়া দূরত্বে কমিশনারেটের বিধাননগর ফাঁড়ি। অথচ, এই এলাকার যার অন্তর্গত, সেই কাঁকসা থানা প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। ফলে, খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছতে পেরিয়ে যায় অনেকটা সময়। বাসিন্দারাও অনেক সময়ে কোন থানায় খবর দিতে হবে, তা বুঝতে সমস্যায় পড়েন।
সম্প্রতি তিনটি দগ্ধ দেহ মেলার পরে সেগুলি এনটিপিএস থানা না কাঁকসা থানা, কে উদ্ধার করবে সে নিয়ে ধন্ধে পড়ে যান বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা সর্বময় ঘোষ বলেন, “ওই ঘটনার পরে আমরা আতঙ্কে আছি। দুষ্কৃতীদের কাজকর্ম কেউ দেখে ফেললেও বিপদ। তাকেই নিশানা করবে ওরা।” আর এক বাসিন্দা অনুপম রায়ের দাবি, “ভ্যামবে কলোনিতেও নানা ঝামেলা ঝঞ্ঝাট লেগে থাকে। অবিলম্বে ওয়ার্ডের পুরোটাই কমিশনারেটের আওতায় আনা উচিত।” তাঁর দাবি, কমিশনারেটের পুলিশকর্মীর সংখ্যা জেলা পুলিশের তুলনায় অনেক বেশি। তাদের পরিকাঠামোও তুলনায় আধুনিক। তাই দুষ্কৃতীরা অপরাধমূলক কাজকর্ম করার আগে ভয় পাবে বলে তাঁর দাবি।
বাসিন্দাদের এই দাবির সঙ্গে এক মত রাজনৈতিক দলগুলিও। সিপিএমের বিধাননগর-জেমুয়া লোকাল সম্পাদক পঙ্কজ রায়সরকার বলেন, “কমিশনারেটের আওতায় এলেই যে আইন-শৃঙ্খলার প্রভূত উন্নতি হবে, তা মনে করি না। তবে পুলিশ দ্রুত এলাকায় পৌঁছতে তো পারবে।” কংগ্রেস নেতা তথা পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর বংশীবদন কর্মকার বলেন, “ওই এলাকা কমিশনারেটের হাতে গেলে পুলিশের কাজ করতে সুবিধা হবে। সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন।”
জেলা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, পুরসভার ওই ওয়ার্ড কার আওতায় থাকবে, সে ব্যাপারে তাদের করণীয় কিছু নেই। তবে পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার আশ্বাস, “এই ধরনের ঘটনা রুখতে এলাকায় পুলিশি টহলদারি বাড়ানো হয়েছে।” |