পুজোর মরসুমে বনধ প্রত্যাহার কোণঠাসা গুরুঙ্গের
পাহাড় প্রমাণ চাপের মুখে পুজোর পর্যটন মরসুমে পাহাড়ে বনধ তুলল গোখা জনমুক্তি মোর্চা। সোমবার ও মঙ্গলবার পাহাড়ে বনধ শিথিল করা হয়েছিল। মোর্চার নেতৃত্বাধীন জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছে, গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন চললেও ২০ অক্টোবর পর্যন্ত আর বনধ হবে না। এ দিন বেলা ১২টা থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত দীর্ঘ বৈঠকে বিস্তর চাপানউতোর, উত্তপ্ত কথাবার্তার পরে কমিটির চেয়ারম্যান এনোস দাস প্রধান দাবি করেন, “মূলত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের অনুরোধেই বনধ আপাতত তোলা হল। এই সময়টায় আমরা মিটিং-মিছিল করব। কেন্দ্র ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকতে কী পদক্ষেপ করছে তা দেখব। ১৯ অক্টোবর ফের বৈঠকে বসে পরের কর্মসূচি ঠিক করব।” প্রসঙ্গত, ১৯ অক্টোবর লক্ষ্মীপুজোর ভাসান।
বনধ প্রত্যাহারের ঘোষণা হতেই স্বাভাবিক চেহারায় দার্জিলিং।
মঙ্গলবার মোটর স্ট্যান্ড এলাকায়। ছবি: রবিন রাই।
টানা বনধ চলায় রাজ্যের কড়া মনোভাবের সঙ্গে মোর্চার বিরুদ্ধে আমজনতার ক্ষোভের পারদও বিপদসীমা ছোঁয়ার উপক্রম করেছিল। ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মীরাও বিরোধিতার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। দলের মধ্যেও বড়সড় ফাটলের আশঙ্কা ছিল। রাজ্যকে এড়িয়ে পাহাড় নিয়ে কোন কিছু করা সম্ভব নয় বলে কেন্দ্রও ফের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। সব মিলিয়ে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে বনধ তুলে নিতে বাধ্য হলেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। পাশাপাশি, আগামী দিনে যাতে তাঁকে একাই যাবতীয় প্রশ্ন ও আক্রমণের মুখে পড়তে না হয়, সে জন্য এ দিন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করে তাদের উপরেই আন্দোলনের রূপরেখা তৈরির দায়িত্ব দিয়েছেন গুরুঙ্গ।
মহাকরণ সূত্রে বলা হচ্ছে, বনধ তোলার খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলনের নামে পাহাড়বাসীকে আরও দুর্দশার দিকে ঠেলে না-দিয়ে জোরকদমে উন্নয়নের কাজ চালু করার জন্য সকলকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। রাজ্য প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা জানান, জিটিএ-র নতুন প্রধান নির্বাচনের বৈঠক ডাকার প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত করা হবে। যাতে পুজোর মরসুম পুরোদমে শুরুর আগেই জিটিএ নবোদ্যমে কাজ শুরু করতে পারে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী তো গোড়া থেকেই বনধ তোলার কথা বলছিলেন। সেই পরামর্শ মানায় আন্দোলনকারী ভাইবোনদের আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। আশা করব, দ্রুত জিটিএ-র চিফ নির্বাচিত করে পাহাড়ে উন্নয়নের কাজ চালু হবে।”
বন্ধ ওঠায় পুজোয় দার্জিলিং ফের ভিড়ে ভরে যাবে বলে আশা করছেন পাহাড়বাসী। ট্যুর অপারেটর সংগঠনের প্রাক্তন কর্তা সম্রাট সান্যাল বলেন, “এমনিতে প্রচুর বুকিং বাতিল হওয়ায় ক্ষতি হয়েছে সকলেরই। তবে বিদেশির পর্যটকদের সব বুকিং বাতিল হয়নি। এ বার যদি দেশের পর্যটকদেরও ঢল নামে, তা হলে হয়তো পুজোর মরসুমে লাভের মুখও দেখবে দার্জিলিং।”
শুধু পর্যটন মহল নয়, দলের অন্দরেও দীর্ঘদিন চাপে রয়েছেন গুরুঙ্গ। মাসের গোড়ায় কালিম্পঙে লেপচাদের জনসভার পরে ওই চাপ মারাত্মক বেড়ে যায়। বনধ উপেক্ষা করে ওই সভায় মুখ্যমন্ত্রীকে সম্মান জানাতে অন্তত ১৫ হাজার পাহাড়বাসী ভিড় করেন। এর পরে সরকারি কর্মী ও রেশন ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটররা শাস্তির মুখে পড়ার আশঙ্কায় বনধ তোলার জন্য চাপ বাড়ান। পাহাড়ের স্কুলগুলির পক্ষ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষ অন্যত্র প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেন। তখন জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার কথা জানায়।
এ দিনের বৈঠকে গুরুঙ্গ, রোশন গিরি, হরকাবাহাদুর ছেত্রী ছাড়াও গোর্খাল্যান্ডপন্থী ৭টি দলের প্রতিনিধিরা ছিলেন। কমিটি সূত্রের খবর, হঠাৎ করে বন্ধ তুলে দিলে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে গোড়ায় গুরুঙ্গ অনুগামীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ওই সময়ে কমিটির শরিক দলের প্রতিনিধিরা জানিয়ে দেন, বন্ধ না-তুললে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ তা উপেক্ষা করে যে রাস্তায় নামবেন, তা কালিম্পঙের সভারপরে স্পষ্ট হয়েছে। তবুও কট্টরপন্থী মোর্চা নেতারা আরও কিছু দিন বনধ চালানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু মোর্চা নেতাদের অন্য অংশ জানিয়ে দেন, বনধ চালিয়ে গেলে জনসমর্থন কমবে, দলের তহবিলেও টান পড়তে পারে। কারণ প্রায় ১২০০ জন নেতা-কর্মী ও কয়েক জন ব্যবসায়ী, ঠিকাদার গ্রেফতার হওয়ায় সংগঠনের ভাঁড়ারে টান পড়েছে।
মোর্চা সূত্রের খবর, বন্ধ চললে সরকারি কর্মীরা তা উপেক্ষা করে অফিসে যাবেন, ডিলাররা রেশন দোকান খুলবেন, সাধারণ মানুষও পথে নামবে। পুজোয় পুলিশ পাহারায় পর্যটকদের ভিড়ও হতে পারে বলেও বৈঠকে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তাতে দল অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়বে। তখনই কেন্দ্রের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকার আশ্বাসকে ‘মুখরক্ষার উপায়’ হিসেবে সামনে রেখে বনধ তোলার সিদ্ধান্তে সায় দিতে বাধ্য হন মোর্চা সভাপতি।
তখনই প্রশ্ন ওঠে আপাতত কত দিনের জন্য বনধ তোলা হবে এবং সেই সিদ্ধান্ত কে ঘোষণা করবেন?
কমিটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, পর্যটন মরসুম চলবে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত, তাই ২০ অক্টোবর অবধি বন্ধ তোলার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু গুরুঙ্গ নিজে যে হেতু বিনয় তামাঙ্গকে গ্রেফতারের পরে অনির্দিষ্ট কাল বন্ধের ডাক দেন, তাই তিনি নিজে তা প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করতে রাজি হননি। কমিটির চেয়ারম্যান এনোস দাস প্রধান ও মুখপাত্র হরকাবাহাদুর ছেত্রীকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। হরকাবাহাদুর পরে জানান, শীঘ্রই দলের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে রাজ্যের বিরুদ্ধে জিটিএ চুক্তি অমান্য করার অভিযোগ আনা হবে। তাঁর দাবি, “চুক্তিতে মোর্চা নেতাদের বিরুদ্ধে থাকা পুরনো রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করার কথা রয়েছে। অথচ রাজ্য সরকার পুরনো মামলায় ১২০০ জনকে গ্রেফতার করেছে।”
এই প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের এক শীর্ষ কর্তা জানান, জনজীবন স্বাভাবিক রেখে উন্নয়নে জোর দিলে জেলবন্দি জিটিএ সদস্যরা যাতে মুক্তি পান, সেই ব্যবস্থাও করা হবে। এমনকী, মোর্চা নরম মনোভাব নিয়ে চললে বনধ চলাকালীন সময়ে সরকারি কর্মীদের মাইনে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.