ঝাঁকুনি খেতে খেতেই গেলেন মুখ্যমন্ত্রী।
‘স্লগ ওভারে’ দমদম বিমানবন্দর থেকে বারাসত পর্যন্ত যশোহর রোড মেরামতির মরিয়া চেষ্টা হয়। কিন্তু গত তিন মাসের ক্ষতে তাতে বিশেষ প্রলেপ পড়েনি। ফলে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তর ২৪ পরগনা সফরে একমাত্র কাঁটা হয়ে থাকল সেই রাস্তাই। এবড়ো-খেবড়ো পথেই গেলেন এবং ফিরলেন তিনি।
মমতা অবশ্য রাস্তা খারাপের দায় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের উপরেই চাপিয়েছেন। বারাসতের রবীন্দ্র ভবনে প্রশাসনিক বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এই রাস্তা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ দেখেন। কেন্দ্রের বিষয়। রাস্তা সারাতে ওঁদের অনুরোধ জানিয়েছি।” ভাঙাচোরা যশোহর রোড ধরে যেতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কী প্রতিক্রিয়া দেন, তা নিয়ে কৌতুহল ছিল সাধারণ মানুষের। বিমানবন্দর থেকেই সাংবাদিকেরা মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের সঙ্গে ছিলেন। তা যে নজর এড়ায়নি তাঁর, তা-ও এ দিন বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী রাস্তা সারানোর দায় জাতীয় সড়ক তথা কেন্দ্রের উপরে চাপালেও কিছু দিন আগেই রাজ্য সরকারের অধীন পূর্ত দফতরের এনএইচ ডিভিশনের হাতে ওই রাস্তা (বিমানবন্দরের ১ নম্বর গেট থেকে বারাসত) দেখভালের দায়িত্ব এসেছে। পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদারের দাবি, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ রাস্তার এই অংশ সারানোর জন্য ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা দেবেন বলেছিলেন। তার মধ্যে ৪০ লক্ষ পাওয়া গিয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় নেহাতই কম বলে মত বিশেষজ্ঞদের। রাস্তার যা হাল, তাতে পুরো ৯ কিলোমিটার অংশে শুধুমাত্র ‘জোড়াতাপ্পি’ দিতেও এর থেকে ঢের বেশি টাকার প্রয়োজন বলে জানান তাঁরা। এই সমস্যা মাথায় রেখে রাজ্য সরকার আরও ২ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে বলে জানান পূর্তমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তিনি আগেই জানিয়েছিলেন, সামান্য কয়েক দিন আগে দায়িত্ব পেয়ে টেন্ডার ডেকে কাজ শুরু হয়েছে। বৃষ্টির জন্য কাজে সমস্যা হচ্ছে। পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, আপাতত কাজ চালানোর মতো মেরামতিটুকুই হচ্ছে। পরে ভাল ভাবে সারানোর ব্যবস্থা হবে। |
গত দিন তিনেক ধরে অভিনব পদ্ধতিতে রাস্তার হাল ফেরানোর চেষ্টা করেছে পূর্ত দফতর। বড় বড় গর্তের আশপাশের উঁচু অংশ যন্ত্র দিয়ে চেঁছে ফেলা হয়েছে। তাতে আপাত ভাবে এবড়ো খেবড়ো অংশ খানিকটা সমান মনে হচ্ছে। যদিও মঙ্গলবার সকালের মধ্যে পুরো ৯ কিলোমিটার অংশে এই কাজ করা সম্ভব হয়নি। ফলে মুখ্যমন্ত্রীকে ঝাঁকুনি সামলেই আসতে হয়েছে বারাসতের প্রশাসনিক বৈঠকে।
রাস্তার হাল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করতে পারেন বলে প্রশাসনের কর্তাদের আশঙ্কা ছিলই। পঞ্চায়েত ভোটে জিতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের ক্ষমতায় আসার পরে এটাই মমতার প্রথম জেলা সফর। বিধানসভা ভোটে জেতার পর থেকে এই নিয়ে তৃতীয় বার উত্তর ২৪ পরগনায় গেলেন মমতা। প্রথম বার যখন যান, তখনও রাস্তার এই অংশ বেহাল ছিল। সে বার বারাসত থেকে মহাকরণে ফিরতে দেরি হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। পরের দফার সফরের আগে বেহাল যশোহর রোড সারানোর খানিকটা চেষ্টা হয়েছিল। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে যশোহর রোড পুরোপুরি সংস্কার হয়ে যাবে বলে আশা করেছিলেন মানুষ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ততটা ‘মেক-আপ’ দিয়ে উঠতে পারেনি পূর্ত দফতর। যে কারণে, প্রশাসনের অন্দরে কানাঘুষো চলছিল, বিটি রোড হয়ে ঘুরপথে বারাসতে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই প্রস্তাব মানেননি মমতা। দলের অন্দরের খবর, যে খারাপ রাস্তা দিয়ে নিত্যদিন চলাচলে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ, প্রশাসনিক শীর্ষ কর্তা হিসেবে মমতা নিজেও যাবেন সে রাস্তা ধরেই। এর পাশাপাশি এই পথে যাওয়ার মধ্যে একটা সূক্ষ্ম চালও ছিল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তাদের মতে, এত দিন ধরে রাস্তাটি সারানোর ভার জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের হাতে থাকা সত্ত্বেও তাঁরা যে কিছুই করেননি, নিজের অভিজ্ঞতার আলোয় তা স্পষ্ট করতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন মমতাকে দেখার জন্য যথারীতি লোক জড়ো হয়েছিল রাস্তার দু’ধারে। উঁচুনিচু রাস্তা দিয়ে যেতে যেতেই গাড়ির জানলা দিয়ে হাত জোড় করে তাঁদের নমস্কার জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাঁকড়ার কাছে রাস্তা অসম্ভব খারাপ। সেখানে এসে গাড়ির ভিতরে বসে দু’হাত জোড় করতেও রীতিমতো বেগ পেতে হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। সেই দৃশ্য দেখে জনতা চিৎকার করে ওঠে, “দিদি দেখুন, কী ভাবে আমরা প্রতিদিন যাতায়াত করি এই রাস্তায়!”
|